কখন কীভাবে শুরু করবেন?

জীবনে বড় হওয়ার জন্য আমরা অনেকেই অনেক কিছু করতে চাই। কিন্তু, কতজন তা পারি ভাবছেন কখনো? আমাদের এ না পারার কারণ মূলত আমরা অনেকেই জানি না, কখন কীভাবে তা শুরু করব। প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার আগে চলুন দেখে নেই আমরা যখন কোনো কিছু শুরু করতে চাই তখন আমাদের চিন্তা-ভাবনা কী রকম থাকে।
১. আমি জানি না এটা কীভাবে করব
২. জিনিসটা আসলেই খুব কঠিন
৩. আমার সময় নাই
৪. এটা করতে হলে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে
৫. এটা ভালোভাবে করতে না পারলে কোনো লাভ নাই
৬. এটার জন্য আমি বর্তমানে প্রস্তুত নই
৭. এটা কি শুধু আমার দায়িত্ব?
৮. এটা করার জন্য পর্যাপ্ত টাকা আমার নাই
৯. এটা করার জন্য আমার পর্যাপ্ত জনবল নাই
১০. সরকার কিসের জন্য?
তালিকা আমি আর দীর্ঘায়িত করতে যাচ্ছি না। কারণ এ রকম চিন্তা-ভাবনার যেকোনো একটাই আমাদের শুরু করতে না পারার জন্য যথেষ্ট। তাই, ব্যস্ত মানুষেরা দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা দেখিয়ে আর যাদের কাছে সময় আছে তাঁরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে শুরু করতে পারেন না কখনোই। আর বাকিরা শুরু করব করব বলে কখনোই শুরু করতে পারেন না। কিছু ছাত্র-ছাত্রী যেমন হাতে প্রচুর সময় থাকলেও আজ পড়ব, কাল পড়ব বলে পরীক্ষার আগের রাতেও না পড়ে পরের দিন সকালে পড়ে পরীক্ষা দেওয়ার চিন্তা করে ঠিক সেরকম। চলুন, দেখা যাক আমাদের কখন, কীভাবে শুরু করা দরকার।
“কখন শুরু করবেন”? প্রশ্নটার এক কথায় উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে ‘এখন’। হ্যাঁ, আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন ঠিক সেই অবস্থায়। আপনি হয়তো রাতে শুয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়ছেন আর ভাবছেন এখনই শুরু করব? এই রাতে? তার এক কথায় উত্তর, হ্যাঁ, এখনই। যদি আপনি শুরু করতে চান তবে আপনাকে এখনই শুরু করতে হবে। নতুবা আগামীকাল আর সেটা পারবেন না। লক্ষ করুন, আপনাকে শুরু করার কথা বলছি। সব কাজ শেষ করার কথা বলছি না। দিনমজুর গহের আলি পুরো ইউনিয়ন জুড়ে সরকারি জমিতে যেভাবে ১২,০০০ তালগাছ লাগিয়েছেন। আপনার স্বপ্ন যদি হয় আপনি রাস্তার দুপাশে সুপারি গাছ লাগাবেন। আপনার বাড়িতে সুপারি গাছের চারা না থাকলে এখনই খোঁজ-খবর নেন কোথায় সুপারি গাছের চারা পাওয়া যাবে। অথবা কীভাবে কী করবেন তার পরিকল্পনা শুরু করেন। আপনি চাকরিজীবী হলে হয়তো ভাবছেন সময় পাবেন কোথায়। যদি সকালে অফিসে যাওয়ার আগে বা অফিস থেকে ফেরার পরে আপনি সময় ম্যানেজ করতে না পারেন তা আর কখনোই পারবেন না। এবার সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি কী আপনার জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্নে জয়ী হতে চান? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে পথ একটাই। আর, তা হলো আপনাকে এখনই শুরু করতে হবে।
সিলেটে মোহাম্মদ আবদুল আজিজ স্বপ্ন দেখেন সুবিধাবঞ্চিত বস্তির শিশুদের শিক্ষাদানের সুযোগ করে দিতে। কোনো প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা না করে টিউশনির টাকা থেকে একটা বস্তির শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব নেন নিজ হাতে ২০১৫ সালে। তাঁকে দেখে উৎসাহিত তাঁর ৫-৬ জন বন্ধু তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়ালে তাঁরা সুবিধাবঞ্চিত বস্তির শিশুদের জন্য একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৬ সালে। স্কুলে শিশুদের ধরে রাখতে আর্থিক সাহায্য দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের শিক্ষা-উপকরণ এবং খাবারেরও ব্যবস্থা করেন নিজ খরচে। সেই স্কুলের নাম School For SDG4। এই স্কুলে বর্তমান শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬০। মোহাম্মদ আবদুল আজিজ যদি চিন্তা করতেন এত শিশুদের দায়িত্ব নেবেন কীভাবে বা টাকা-পয়সা পাবেন কোথায় বা এটার দায়িত্ব কি শুধু তাঁর, তাহলে কি সেটা সম্ভব হতো? মোটেই না। আর মোহাম্মদ আবদুল আজিজ এটা করতে পারছেন কারণ তিনি মনে করেন তাঁর এটা করতে হবে এখনই।
শুধু মোহাম্মদ আবদুল আজিজ কেন, কানাডীয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অধ্যাপক জরডান বি পিটারসনর তাঁর মাস্টার্স ক্লাসে গবেষণাপত্র লেখার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপদেশ হিসেবে বলেন, “তোমাদের শুরু করতে হবে এখনই। সময় নিয়ে নয়, এখনই। আর এখনই লেখা শুরু করলে তোমরা বলতে পারবে তোমাদের হাতে কিছু একটা আছে। লেখাটা তখন যতই খারাপ হোক না কেন, আমরা তখন সেটাকে ভালো করতে পারব।”
কীভাবে শুরু করবেন— এ প্রশ্নের এক কথায় উত্তর দিতে হলে বলতে হবে আপনি এখন যেভাবে আছেন ঠিক সেভাবে। এটার জন্য কোনো যজ্ঞানুষ্ঠান আয়োজন করার দরকার নাই। এমনকি এটা উদ্বোধন করারও কোনো প্রয়োজন নাই। আপনার লক্ষ্য স্থির থাকলে আপনি যে গন্তব্যে পৌঁছাবেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার কারণ নেই। শুধু মনে রাখতে হবে ওপরের তালিকার মতো কিছু যাতে আপনার গন্তব্যের পথে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায়।
এ রকম সুনির্দিষ্ট গন্তব্য সামনে রেখে গরিব, গৃহহীন বা এতিম শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে, থাকার আশ্রয় দিতে বা তাদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে স্বপ্ন দেখেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কিশোর কুমার দাস। সেই স্বপ্নে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে ২২জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে। মাত্র ৫ বছরে এই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের শত শত স্বেচ্ছাসেবীসহ একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামু ও রাজবাড়ীতে দুটি এতিমখানা এবং সহস্রাধিক বই নিয়ে দুটি পাঠাগার আছে। এতিমখানাগুলো ১৩৫জন শিশুর পড়ালেখাসহ সার্বিক দেখাশোনা করছে এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ২৫০ জন শিশু শিক্ষার আলো পাচ্ছে। শুধু কী তাই? ‘এক টাকায় আহার’ নামের প্রকল্পে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিদিন ১০,০০০ জনের রান্না করে ভাড়া করা রান্নাঘরে। স্বেচ্ছাসেবক ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা রান্না করে সে খাবার নিয়ে ছোটেন স্কুলে স্কুলে কিংবা প্রত্যন্ত কোনো গ্রামে; নির্দিষ্ট রুটিনে। এক টাকার বিনিময়ে যেকোনো দুস্থ মানুষ কিনে নিতে পারেন এই খাবার। কোর্মা-পোলাও না, ভাত-ডাল-সবজিতে ঠাসা থাকে একেকটি বক্স। ভাবছেন সেটা কীভাবে সম্ভব?
উত্তর: লক্ষ্য স্থির রেখে যেভাবে আছেন সেই পরিস্থিতিতে এখনই কাজ শুরু করে দিয়ে।