রাজু আহমেদের সততা

বাংলাদেশে লোকাল বাসের গায়ে নানা ধরনের বাণী লেখা থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত বাণীটি হচ্ছে ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’। অর্থাৎ বাসে অন্যদের সঙ্গে করা ব্যবহারই একজন ব্যক্তির উৎসস্থলের পরিচয় বহন করে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজের গায়ে অবশ্য এমন কোনো বাণী দেখা যায় না। কিন্তু এটা কে না জানে, এই একই কথা বিদেশে উড়ে যাওয়া মানুষের জন্যও সত্য।
আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিটি দেশ অন্য দেশে তাদের প্রতিনিধি পাঠান। এই প্রতিনিধিকে বলা হয় রাষ্ট্রদূত। নিযুক্ত দেশে নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষাসহ নানামুখী দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রদূতের ওপর। রাষ্ট্রদূত একা থাকেন না। তাঁর সঙ্গে থাকে একটি বড় দল। আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। তাঁরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশের দাবি-দাওয়া তাঁরা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে। তাঁদের মধ্য দিয়েই ওই দেশের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সম্পর্কে অবহিত হন।
রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে একটি দেশ সম্পর্কে অন্য দেশের কর্তৃপক্ষের এই জানাশোনা ও বিনিময়টা আনুষ্ঠানিক। আধুনিক রাষ্ট্র ও বিশ্ব কাঠামোর রীতি-নীতি মেনে দু পক্ষ কাজ করে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটি দেশের প্রকৃত প্রতিনিধি হচ্ছেন তাঁরা, যারা মিশে থাকেন জনগণের মধ্যে। প্রবাসে থাকা প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিক তাই বাংলাদেশের সত্যিকারের প্রতিনিধি। তাঁরাই বাংলাদেশ ও এর লোকাচারকে অন্য একটি দেশে তুলে ধরেন। দুর্যোগ ও ঘটনা-দুর্ঘটনার তথ্যের বাইরে নিজেদের আচরণ দিয়ে, ভাষা দিয়ে তাঁরা তুলে ধরেন বাংলাদেশকে।
নিজের সততা দিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশকে ঠিক এভাবেই উজ্জ্বল করেছেন রাজু আহমেদ। যাত্রীর মূল্যবান হিরের আংটি ফেরত দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন নিউইয়র্কের এই ক্যাবচালক। গত বছরের আগস্টে লোরেন নামে একজন ওঠেন সিলেট থেকে আসা রাজুর ক্যাবে। ওই ক্যাবেই হারিয়ে যায় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া লোরেনের ২০ হাজার ডলার মূল্যের হিরের আংটি। ওই সময় দুজন মিলে অনেক খুঁজেও আংটির কোনো হদিস পাননি তাঁরা। কিছুদিন আগে ক্যাব মেরামত করতে গিয়ে রাজু খুঁজে পান সেই আংটি। অনেক খুঁজে লোরেনকে বের করে সে আংটি ফিরিয়ে দেন তিন বছর আগে আমেরিকায় আসা রাজু।
রাজুর এ ঘটনায় আপ্লুত হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু বাংলাদেশের ছেলে রাজুর কাছে এটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। কারণ তিনি তাঁর চারপাশ থেকে, পরিবার থেকে এই সততার শিক্ষাই পেয়েছেন। আর তাঁর এই সততাই বাংলাদেশকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। প্রবাসে থাকা প্রতিটি মানুষের এমন হাজারো কাজের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে—এটাই প্রত্যাশা।