বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তি

প্রতিটি মা–বাবাই চান তাঁদের সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে। আর এ জন্য ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর দিকেই অভিভাবকদের মনোযোগ থাকে বেশি। কারণ, এর মাধ্যমে সুশিক্ষা পাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত করা যায়। নিউইয়র্কের আটটি বিশেষায়িত স্কুলকে ঠিক এই কারণেই পাখির চোখ করে রাখেন যেকোনো সচেতন মা–বাবা। কারণ, এসব স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ পড়াশোনার সুযোগ পায়। ফলে অষ্টম গ্রেড শেষ হওয়ার পরপরই এই স্কুলগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেন অভিভাবকেরা। কিন্তু উচ্চ চাহিদার কারণেই এই স্কুলগুলোয় ভর্তি হওয়াটা এত সহজ নয়। প্রতিবছর এই আট স্কুলের মাত্র ৫ হাজার আসনের জন্য অন্তত ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফলে প্রতিযোগিতাটা অনেক তীব্র, তা সহজেই বোধগম্য। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে আট স্কুলে ভর্তির যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এসএইচএসএটি বা স্যাট পরীক্ষার মাধ্যমে এই যোগ্যতা নিরূপণ করা হয়। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষায় অনেকেই ঝরে যায়।
এত দিন এই পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন ছিল না। সম্প্রতি এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন স্বয়ং নিউইয়র্ক নগরের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। চকবিটে প্রকাশিত নিজের এক নিবন্ধে তিনি এই পরীক্ষাপদ্ধতি সংস্কারের পাশাপাশি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ শতাংশ কোটা রাখার প্রস্তাব করেছেন। তবে এই কোটা তারাই পাবে, যারা এক–দুই নম্বরের জন্য ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
এই প্রস্তাব স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কিত করেছে বাংলাদেশিসহ এশীয়দের। কারণ, বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করা শিক্ষার্থীদের ৬২ শতাংশই এশীয় বংশোদ্ভূত। আর বিশেষায়িত স্কুলের প্রতি দশজন শিক্ষার্থীর একজন বাংলাদেশি। কিন্তু ব্লাজিও প্রশ্ন তুলেছেন এসব স্কুলে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিনো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির অতি নিম্নহার নিয়ে। তাঁর মতে, নিউইয়র্কের অষ্টম গ্রেডের মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ শতাংশই হয় কৃষ্ণাঙ্গ, নয়তো লাতিনো। এ অবস্থায় বিষয়টি বর্ণবৈষম্যের পর্যায়ে পড়ে।
ব্লাজিওর সমতা আনয়নের উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। কারণ, সাম্য নিশ্চিত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু বিরোধটি সামনে আসে তখনই, যখন তিনি কোটা প্রথা প্রচলনের কথা বলেন। এটি অনেকটা ফোড়া কাটতে অঙ্গহানির প্রস্তাবের মতো বিষয়। কারণ, কোটা প্রথা চালুর মাধ্যমে সমতা আনা সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না এই অসমতার মূল কারণকে দূরীভূত করা না যাচ্ছে। আর মূল কারণটি রয়েছে মিডল স্কুল ও পাবলিক স্কুলের পড়াশোনার নিম্নমান, যে কারণে বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যয়বহুল প্রস্তুতিমূলক কোর্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। এই ক্ষেত্রটিতেই রয়েছে দারিদ্র্যের প্রসঙ্গটিও। ব্যয়বহুল কোর্স গ্রহণের বাস্তবতা না থাকলে শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা হওয়ার কথা নয়।
নগর কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, মিডল ও পাবলিক স্কুলে পড়াশোনার মানের উন্নতিসাধন দ্রুত করা সম্ভব নয়, তবে বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তির জন্য প্রচলিত বিনা মূল্যের কোর্সের মান বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু একটি অসমতা নিরসনে আরেক ধরনের অসাম্যের সূত্র সামনে হাজির করাটা কখনোই উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে এ–ও মনে রাখতে হবে যে বিশেষায়িত স্কুলে আজকে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারাও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান নয়। তাদের অধিকাংশই অভিবাসী পরিবারের সন্তান। ফলে এ ক্ষেত্রে আরও বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটাই কাম্য।