কে এই তৃতীয় শক্তি?

‘এই দুনিয়া এখনতো আর সেই দুনিয়া নাই
মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই’
বাংলা এই গানের কথাগুলো বারবার বিবেককে নাড়া দেয়—এ কোন দুনিয়ায় আমরা বসবাস করছি। মাত্র পনেরো দিন আগের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই একই কায়দায় উপাসনালয়ে আবার রক্তপাত, আবার রক্তের হোলিখেলা। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে চলঅ শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ ২০০৯ সালে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। দীর্ঘ এই সময়েও এত লোক ক্ষয়ের ঘটনা ঘটেনি। এবার যে উপর্যুপরি হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা শ্রীলঙ্কা তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জন্য এক অশনিসংকেত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যারা মানুষ হত্যা করে, তারা মানুষরূপী জানোয়ার। তারা কোন ধর্মের বা কোন জাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। তারা বিলিয়ন–ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়, তা শুধু মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে।
হিরোশিমা নাগাসাকিতে যারা বোমা নিক্ষেপ করে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছিল, তারাও মানুষ নামের মানুষই ছিল। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা আর দুই লাখ মা–বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল, নির্যাতন চালিয়েছিল, তারাও মানুষ নামের মানুষই ছিল। শুধু গিরগিটির মতো তাদের খোলস বদলানোর প্রবণতা ছিল। সেদিন শ্রীলঙ্কার হোটেল আর উপাসনালয়ে আত্মঘাতী সিরিজ বোমায় ৩৮ জন বিদেশিসহ ৩২১ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত পাঁচ শতাধিক। এই নৃশংশ হামলা বিশ্ব মানবতাকে আবার চুনকালি লেপন করে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের হামলার প্রতিশোধের জের হিসেবে শ্রীলঙ্কায় এই সিরিজ হামলা।
শ্রীলঙ্কার সরকারের মতে, স্থানীয় একটি ইসলামি সংগঠন ন্যাশনাল তাওহিদুল জামাত (এনটিজে) এই হামলার দায়ভার নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সংগঠনটির জন্ম ২০১৪ সালে। ২০১৬ সালে বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করা ছাড়া তাদের কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। সুতরাং এই নব্য সংগঠনটির পক্ষে এত বড় একটা আত্মঘাতী সিরিজ হামলা চালানো কীভাবে সম্ভব। এই প্রশ্নটা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে। তাদের ধারণা, এতে তৃতীয় কোন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক জড়িত থাকতে পারে।
তৃতীয় শক্তি জড়িত থাক বা না-থাক, ঘটনা তো ঘটেছে ঠিকই। প্রার্থনারত মানুষগুলোর প্রাণ চলে গেল, কিছু সংখ্যক পর্যটকের সঙ্গে নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ গেল। এর দায়ভার কে নেবে? কেউ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে সন্তানহারা মা-বাবার নিশি জাগা আর্তনাদ?
ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো যাবে কোথায়? মসজিদ, গির্জার মতো কোন উপাসনালয়ে তাদের স্থান নেই! এখন তাদের পাপ-পুণ্যের বিচার চাইবে কার কাছে।