শঙ্কার মধ্যেও চিকিৎসায় আশার আলো

করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) আমেরিকায় দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে নিউইয়র্কে অবস্থা বেগতিক। মানুষ এখনো নতুন করে এই ভাইরাস সম্বন্ধে প্রতিদিন কিছু শেখার চেষ্টা করছে। দুই ধরনের দিক থেকে শিখতে হচ্ছে। প্রথমত, কোভিড–১৯–এর প্রাদুর্ভাব যেখানে হয়েছে, সেখানকার ক্লিনিক্যাল রিসার্চের আলোকে এবং দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্যকর্মীরা যারা সামনের কাতারে দৈনন্দিন কোভিড–১৯ রোগ দেখছেন তাদের অভিজ্ঞতা বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। যদিও চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণা থেকে জ্ঞানার্জনকে অগ্রাধিকার দিতে হয়, তবু এই ভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ এখনো সামলে উঠতে পারছে না। তাই এই দুটি দিককেই গুরুত্ব সহকারে এই দুঃসময়ে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। করোনা যতই নতুন নতুন জটিলতা নিয়ে আবির্ভুত হবে, ততই আমাদের জ্ঞান বাড়াতে হবে। কারণ অজ্ঞতা মহাবিপদের কারণ হতে পারে।

ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, এই ব্যাপারে নতুন তথ্য হচ্ছে যাদের এখনো কোনো উপসর্গ হয়নি, তারাও তা না জেনে ছড়াচ্ছেন। চীন থেকে এখন বলা হচ্ছে, ২০ থেকে ৪০ ভাগ ভাইরাস ছড়ানোর জন্য তারাই দায়ী, যারা মনে করেছিলেন তাদের তো কোন জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা নেই। তাই তারা মাস্ক না পরে বা অন্য কোনো সতর্কতা না নিয়ে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সিঙ্গাপুরও তাই বলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ((ডব্লিউএইচও) ও আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) আগে বলেছিল, বাইরে বেরোলে আক্রান্ত ছাড়া অন্যদের মাস্ক পরার দরকার নেই। এখন তারাই বলছে, বাইরে বেরোলে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অথচ আমরা চিকিৎসকেরা অনেক দিন থেকেই সবাইকে মাস্ক পরতে বলে আসছিলাম।

আগে বলা হয়েছে. করোনাভাইরাস শুধু হাত থেকে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করার মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ছয় ফুটের কম দূরত্ব থেকে হাঁচি বা কাশি দিলে ড্রপলেটের মাধ্যমেও ছড়ায়। এটি বাতাসের মাধ্যমে খুব কম ছড়ায়। শুধু আইসিইউতে ও ভেন্টিলেটর রোগীর পরিচর্যার সময় সাকশন দিলে বাতাসে ছড়াতে পারে। এখন কিছু গবেষণায় পাওয়া যাচ্ছে, শুধু কাশি বা হাঁচি দিলেই নয়, জোরে কথা বললেও বেশ কিছু ভাইরাস বাতাসে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে বেড়ায়। যদিও সংখ্যায় কম থাকায় এটিকে তত বিপজ্জনক বলা হচ্ছে না, তবে বদ্ধ ঘর অথবা বাতাস চলাচল না থাকলে, সেখানে ভাইরাস ধীরে ধীরে ঘরের সবাইকে সংক্রমণ করতে পারবে।

সন্দেহ করা হচ্ছে, এ কারণে রোগীর সঙ্গে আত্মীয়স্বজনেরা একই ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকলে, আর ঘরের দরজা–জানালা বন্ধ থাকলে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তেই পারে। এ জন্য টেস্টের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করে শুধু রোগীকে কোয়ারেন্টিনে রাখলে অন্যরা বিপদে পড়বেন না। তাই সম্ভব হলে শনাক্ত করা রোগীদের দুই সপ্তাহ আইসোলেশন ওয়ার্ড বা আলাদা ঘরে রাখা যেতে পারে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, এই মুহূর্তে আমেরিকায়ও অনেককেই টেস্ট করার সংগতি নেই। তবে এখানে পরিস্থিতি শিগগিরই কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমেরিকায় এখন উপসর্গ না থাকলে আমাদের ডাক্তারদেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে না। কারণ আমাদের অনেকেরই টেস্ট পজিটিভ আসবে এবং সবাই ছুটিতে কোয়ারেন্টিনে গেলে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে কে সামলাবে? আমরা জানি, ৮০ ভাগ পজিটিভ রোগী এমনিই ভালো হয়ে যায়, তাই জেনেশুনেই স্বাস্থ্যকর্মীরা এই ঝুঁকি নিচ্ছেন। নিউইয়র্ক নগরের মধ্যে লং আইল্যান্ডে বেশি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। তবে মনে হচ্ছে, লং আইল্যান্ডে বেশি টেস্ট করা হয়েছে, তাই সেখানে তুলনামূলক বেশি দেখাচ্ছে। তবে এটিকে সহজভাবে না নিয়ে, সবাইকে আরও কঠোরভাব সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

বাংলাদেশে টেস্ট কম করায় রোগ শনাক্ত কম হচ্ছে, তবে সে কারণে মৃতের হার অনেক দেশ থেকে বেশি দেখাচ্ছে। টেস্ট বেশি করলে শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিন করা যাবে এবং পরিবারে ছড়াবে না। এই ব্যবস্থা নিয়ে চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি বেশ সাফল্য পেয়েছে। আরেকটি ভাবনার বিষয়, যাদের পজিটিভ হয়েছে তারা বা তাদের পরিবার এটি লুকানোর চেষ্টা করেন, কারণ অন্যরা তাদের কী চোখে দেখে সেটি ভেবে! তাতে সবার মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ এই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা বা টেস্ট দেরিতে হয় এবং পরিবারের অন্যরা তাকে আলাদা না করায় নিজেরাও সংক্রমিত হয়। এ কারণে নিউইয়র্কে অনেক পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। এতে শিশুদের দেখার কেউ থাকছে না। ভয়ে অন্য কেউ শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিচ্ছেন না। আমরা আশা করব, এ কারণে রোগ সন্দেহ হলে বা টেস্ট পজিটিভ আসলে তাকে ঘরে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখতে হবে এবং আইসোলেশনের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
আমরা আরও দেখছি, টেস্ট নেগেটিভ হলেও যদি কারও করোনার উপসর্গগুলো থাকে, তবে তার করোনা হয়ে থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ফিলাডেলফিয়াতে আমাদের একজন ডাক্তার এক ব্যক্তির মধ্যে উপসর্গ থাকার পরও তৃতীয়বার ফুসফুস থেকে কফ নিয়ে পরীক্ষার পর দেখলেন, ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ এসেছে। এভাবে ডাক্তাররা নিজেদের বুদ্ধি, জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই রোগীদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করছেন। উপসর্গ নিয়েও যেমন প্রথম কয়েকবার নেগেটিভ আসছে, তেমন উপসর্গ ছাড়াও করোনা আক্রান্ত দেখা যাচ্ছে। যেমন—নিউইয়র্কের এক হাসপাতালে বেশ কিছু রোগী নানা কারণে যেমন পেটব্যথা, গাড়ি দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং তাদের বুকের সিটি স্ক্যানে করোনা নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে।

এসব ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকায় বা বাংলাদেশে যারা মনে করছেন তাদের দেহে করোনাভাইরাস নেই, তাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সব প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনা এসেছে এবং আমাদের সঙ্গে অনেক দিনই থাকবে। তাই কীভাবে এটিকে সামলে চলতে হবে, তা শিখে নিতে হবে। খবর বেরুচ্ছে, চীনের টেস্ট কিট অকার্যকর হওয়ায়, অনেক দেশ ফেরত পাঠাচ্ছে। করোনা টেস্ট জরুরি, তাই নেগেটিভ টেস্ট আসলেও বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। আজ আফ্রিকায় করোনা না ছড়ানোর কথা হচ্ছে, ইবোলা ভাইরাসের ভয়াবহ আঘাত থেকে বাঁচতে সেখানকার মানুষ ইতিমধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। তাই অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্বের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমেরিকাও ভেবেছিল আমাদের মাত্র কয়েকজনের হয়েছে, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু এখন ভীষণ বড় বিপদে পড়েছে। টেস্ট হোক বা না হোক, উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, মহামারি শুরু হয়ে গেলে বাঁধ ভেঙে যাবে। তখন আর কোনো চিকিৎসায় কাজে আসবে না।

চিকিৎসার ব্যাপারে নিউইয়র্কে বলা হয়েছিল, করোনা পজিটিভ আর জ্বর–কাশি থাকলেও আপনারা ঘরে থাকুন। শুধু শ্বাস কষ্ট হলেই হাসপাতালে আসবেন। কারণ হাসপাতাল এখন জটিল রোগীতে পরিপূর্ণ, ডাক্তার ও নার্সরাও পরিশ্রান্ত। কথাটা এখনো ঠিক, তবে বাসায় থাকার সময় কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। মনে করা হয়, বেশির ভাগ এমনিতে ভালো হয়ে যাবেন। চিকিৎসা নিয়েও মতবিরোধ আছে। বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে করোনার মহাওষুধ মনে করলে মহাবিপদ হতে পারে। নিউইয়র্কে মাত্র কয়েক দিন আগে এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। তবে বেশ কিছু চিকিৎসক এর সাফল্য নিজেদের রোগীর ওপর দেখতে পারছেন।
তা ছাড়া যে দুটি ওষুধ (হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আর এজিথ্রোমাসিন) এখন ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো হাসপাতাল ছাড়া কোন ফার্মাসিতে এই মুহূর্তে নেই। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন বাজারে এসে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য বাসায় কোয়ারেন্টিনে অত্যন্ত সতর্কভাবে থাকতে হবে। রোগীকে আলাদা করে, বাথরুমে রোগী যাওয়ার পর পর ব্লিচ দিয়ে বা অন্যান্য ক্লিনিং এজেন্ট দিয়ে বিশেষ করে ফ্লাশের হাতল এবং অন্যান্য স্পর্শের স্থান পরিষ্কার করতে হবে। এখন জানা গেছে, কাশিতে করোনাভাইরাস শেষ হয়ে গেলেও মলের সঙ্গে অনেক দিন বেঁচে থাকে। বাংলাদেশে তাই গ্রামেগঞ্জে উন্মুক্ত পায়খানায় এভাবে ছড়ানোর অনেক ভয় রয়েছে।

তবে দুঃখজনক, আমেরিকা এত বড় ও শক্তিশালী দেশ হওয়া সত্ত্বেও নিউইয়র্কে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ করতে অক্ষম হয়েছে। তবে অনেক সাধারণ মানুষ মাস্ক, গ্লাভস ও গাউন সরবরাহের চেষ্টা করছে। আমি দুজন বাঙালি মেয়েকে জানি, যারা ঘরে বসে ইউটিউভ দেখে মেডিকেল মাস্ক ও মাথার প্রোটেক্টিব হেডগিয়ার বানাচ্ছে হাসপাতালে দেওয়ার জন্য। কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে মাস্ক ও গ্লাভস সংগ্রহ করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছে।

নিউইয়র্কে আমেরিকার অন্যান্য ডাক্তারের মত বাংলাদেশি ডাক্তাররাও সাহসিকতার সঙ্গে এই মহামারির মোকাবিলা করছেন। কেউ পিছিয়ে নেই। আমাদের পরিবারেরও ১০ জন চিকিৎসক ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন চিকিৎসক, যারা এখনো চাকরিতে ঢোকেননি তারাও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে টেস্টিং করার কাজে সময় দিচ্ছেন। আমরা কয়জন কয়েক দিন আগে নিউইয়র্কের গভর্নরকে এই দুর্দিনে কাজের চাপে যখন ডাক্তাররা পরিশ্রান্ত অথবা অসুস্থ হয়ে যাবেন, তখন এসব নতুন ডাক্তারকে অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়ে কাজে লাগাতে চিঠি লিখেছিলাম। আরও অনেকেই হয়তো বলেছিলেন। তাই নিউইয়র্কের গভর্নর অফিস অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং নিউজার্সির গভর্নর এসব লাইসেন্সবিহীন ডাক্তারদের ৫ বছরের কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের অনুরোধে ও মুক্তধারার অনুরোধে আমরা দুটি হেলথ হট লাইন চালু করেছি। যে কেউ প্রয়োজন হলে এই বিপদে পরামর্শের জন্য ফোন করতে পারেন। নিউইয়র্কে কেউ অসুস্থ হলে তার নিজের ডাক্তারকে ফোন দিতে হবে, তিনি তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।

আমি গর্বিত যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষ গরিবদের অন্ন সংস্থানের জন্য এগিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের ডাক্তারদের জন্য শিগগিরই পিপিই দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। আমারই এক আত্মীয় গার্মেন্টসের মালিক দুই সপ্তাহ আগে বিনা মূল্যে কয়েক হাজার পিপিই ঢাকা মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতালে সরবরাহ করেছে। পিপিইর অভাবে সিলেটে কিডনি ফাউন্ডেশন দোকান থেকে রেইন কোট কিনে ব্যবহার করেছে। এ রকম উদ্ভাবনের প্রয়োজন আছে। নিউইয়র্কে রোগীর সেবা দিতে অনেকে ইমার্জেন্সি রুমের গার্বেজ ব্যাগও পরেছেন। শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালকে করোনা সেন্টার বানানোর পর সেখানেও অনেকে পিপিইসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দান করেছেন। সরকারের ওপর সব দায়িত্ব না চাপিয়ে বেসরকারিভাবে এর মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই লেখার সময় ডা. মুহাম্মদ আলম, ওমর আশরাফ, মোহাম্মদ ইউসুফ আল মামুন, মাকসুদ চৌধুরী, জিয়াউর রহমান, মালিহা আহমেদ, সাঈদা হুমাইরা ও শাহানা চৌধুরীকে তাদের মূল্যবান তথ্য দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাই।

(লেখক: অধ্যাপক, মেডিসিন ও নেফ্রোলজি, টেম্পল ইউনিভার্সিটি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি , ফিলাডেলফিয়া)