করোনায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে হোয়াইট হাউসে উত্তপ্ত বিতর্ক

হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা। ছবি: রয়টার্স
হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা। ছবি: রয়টার্স

নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপে আক্ষরিক অর্থেই বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য কার্যকর একটি ওষুধ খুঁজছে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন সিচুয়েশন রুমে।

মূলত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো সর্বশেষ এই বিতর্কের জন্ম দেন। একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কার্যকর বলে জোর বক্তব্য রাখেন পিটার নাভারো। বিষয়টি প্রমাণিত নয় বলে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বিতর্ক শুরু হয়।

অবশ্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে বিতর্ক এটিই প্রথম নয়। এর আগেও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হোয়াইট হাউস গঠিত টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলে আসছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় পরীক্ষিত কোনো ওষুধ নয়। এ কারণে, মোটাদাগে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কিন্তু টাস্ক ফোর্সের বাইরে থাকা বিভিন্ন উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টকে বিপরীত পরামর্শটি দিচ্ছেন। এদের মধ্যে পিটার নাভারো একজন, যিনি এখনো টাস্ক ফোর্সের কেউ না হলেও, নিয়মিত সভায় যোগ দিচ্ছেন।

হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির মধ্যে হওয়া মতবিরোধের বিষয়ে প্রথম খবর প্রচার করেছিল অ্যাক্সিওস। খবরে বলা হয়, গতকাল রোববার হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে আলোচনা শুরু হলে টাস্ক ফোর্সের সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। এতে ভীষণ চটে যান পিটার নাভারো।

সভায় নাভারো ওষুধটির কার্যকারিতা সম্পর্কিত একটি নথি নিয়ে আসেন। তিনি একে ওষুধটির কার্যকারিতার প্রমাণপত্র হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু ফাউচি বলেন, এটি তত্ত্বীয় হিসাব, যেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ফাউচি নাভারোর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি কী বলছেন?’ এই প্রশ্নে নাভারো কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও পরে ফাউচির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তিনি চীন ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপে ট্রাম্পের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করেছেন। এই বক্তব্য সভায় উপস্থিত অন্যদের বিভ্রান্ত করে। কারণ, ফাউচিই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি শুরুতেই প্রেসিডেন্টের নেওয়া এই পদক্ষেপে সম্মতি দিয়েছিলেন।

মুশকিল হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন ধরে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ আগ্রহী। বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্যের বদলে তিনি এর স্বপক্ষে দেওয়া তাঁর উপদেষ্টাদের কথা বেশি বিশ্বাস করছেন। গতকাল রোববার ফাউচি ও নাভারোর মধ্যকার এই বিতর্কের পরপরই সভাকক্ষে ট্রাম্প আসেন। কিন্তু তিনি ফাউচির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেননি। বরং সিচুয়েশন রুমে হওয়া এমন বিতর্কের পর ট্রাম্প প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে বলেন, ‘ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন একটি শক্তিশালী ও দারুণ ওষুধ। এ ক্ষেত্রেও এটি কাজ করে বলে কিছু শক্তিশালী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা নেই—এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন একসঙ্গে ব্যবহার করলে এটি শরীরের ভেতরে থাকা এমন সব জীবাণুকে মারবে, যা কেউই চায় না বহন করতে। আমাদের আর কী হারানোর রয়েছে?’

এখানেই থামেননি ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আগে থেকেই এই ওষুধ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।’

যদিও বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের কোনো পরামর্শ দেন না। তাঁদের মতে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আগে থেকেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণ কোনো কাজে আসে—এমন কোনো প্রমাণ নেই।