করোনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে উঠছে আমেরিকায়

সিনেমা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কার্ডবোর্ডে তৈরি সিনেমার চরিত্র সিটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে কেউ সেখানে বসতে না পারে। অ্যারেনা সিনেলগ থিয়েটার, লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া। ছবি: রয়টার্স
সিনেমা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কার্ডবোর্ডে তৈরি সিনেমার চরিত্র সিটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে কেউ সেখানে বসতে না পারে। অ্যারেনা সিনেলগ থিয়েটার, লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া। ছবি: রয়টার্স

আমেরিকায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে কেবল নার্সিং হোমে ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল কর্মকর্তারা বলছেন, বিপর্যয় এখানেই শেষ হচ্ছে না। শেষ হওয়ার জন্য শুরুর ধাপটিই এখনো শুরু হয়নি। চার মাসের কম সময়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষের। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর দেশের মানুষ এখন আবার করোনা নিয়ে নতুন আশঙ্কার কথা শুনছে।


এদিকে দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অন্তত এক ডজন রাজ্যে সবকিছু খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা থমকে দাঁড়িয়েছে। পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াসহ আরও নানা পদক্ষেপ।

অ্যারিজোনার গভর্নর ডাগ ডুসেই রাজ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবারও ৩০ দিনের জন্য রাজ্য খুলে দেওয়ার পদক্ষেপ স্থগিত রাখার নির্দেশ জারি করেছেন। এ ছাড়া ব্যায়ামাগার, মুভি থিয়েটার, ওয়াটর পার্কসহ ৫০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। রাজ্যের স্কুল খোলার তারিখ ১৭ আগস্ট পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ফ্লোরিডায় আবার করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজ্যের জ্যাকসনভিলে নগরীতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইনডোর, পাবলিক প্লেসসহ যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, সেখানে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এ নগরীতেই আগস্টে রিপাবলিকান দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবারও দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। ফ্লোরিডার দক্ষিণের এলাকাগুলোতে ৪ জুলাই সপ্তাহান্তের জন্য সব সমুদ্র সৈকত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

টেনেসির গভর্নর বিল লি ২৯ জুন রাজ্যের জরুরি অবস্থা আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। ২৯ জুন এ রাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে।

জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্প আরও দুই সপ্তাহের জন্য মহামারি প্রতিরোধবিষয়ক সতর্কতা বৃদ্ধি করবেন বলে জানিয়েছেন। ক্যানসাসের গভর্নর রাজ্যজুড়ে মাস্ক পরার জন্য আবারও নির্দেশ জারি করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাসসহ অন্যান্য রাজ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে। নতুন করে এ সংক্রমণ সামাল দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবীরা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে সবকিছু খুলে দেওয়ার কারণেই এমন হচ্ছে। বার, রেস্টুরেন্ট, স্কুল গ্র্যাজুয়েশন সমাবেশে অংশ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় সান দিয়েগো কাউন্টির সড়কে গাড়ির ভেতর থেকেই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন একজন নার্স। ছবি: রয়টার্স
ক্যালিফোর্নিয়ায় সান দিয়েগো কাউন্টির সড়কে গাড়ির ভেতর থেকেই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন একজন নার্স। ছবি: রয়টার্স

এদিকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও কানেকটিকাটে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ায় এ তিনটি রাজ্য পরবর্তী ধাপে খুলে দেওয়ার আগে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার অনুমতি প্রদান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমে বলেছেন, ‘আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যাতে চাই না। এ কারণে নিউইয়র্কে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

এখন পর্যন্ত আমেরিকায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে ১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২৬ লাখের বেশি মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এখন প্রতিদিন বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।

২৯ জুন নিউইয়র্ক টাইমস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে সিডিসির কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছে।

সিডিসির পরিচালক অ্যানি শুচেট বলেছেন, ধারণা করা হয়েছিল, গ্রীষ্মকাল চলে এসেছে। সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু শেষ যে হবে, সেই পর্বের শুরুটাই এখনো হয়নি। গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়া ভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনবে, এ ধারণা অমূলক।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো এ ভাইরাসের নানা বিষয়ে জানতে হচ্ছে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ না নিলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না বলে তিনি মনে করেন। আমেরিকায় এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই হয়েছে নার্সিং হোমে। এর মোট সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার।