আবেদন দেড় লাখ হলেও পাঁচ হাজারের বেশি নতুন মুক্তিযোদ্ধা হবে না

আ ক ম মোজাম্মেল হক
আ ক ম মোজাম্মেল হক
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করতে গত ১২ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গঠন করা হয় ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি। এই কমিটি কাজ শুরু করে গত ২১ জানুয়ারি। কোথাও কোথাও এই কমিটিতে পরিবর্তন আনছে মন্ত্রণালয়। কারণ, একাধিক কমিটির বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। কমিটিতে অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন—এমন অভিযোগও কারও কারও। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য এরই মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে প্রায় দেড় লাখ আবেদন। এ ছাড়া প্রতিদিনই আবেদন আসছে। সার্বিক বিষয়ে গতকাল বুধবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোজিনা ইসলাম

প্রথম আলো: মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন সেই কমিটি দিয়ে নতুন তালিকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে? 

মোজাম্মেল হক : মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তো আর কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা নেননি। তাহলে তো মামলা হতো। নিজেদের সুবিধার জন্য স্বেচ্ছায় লোকে টাকা দিয়েছেন। আর যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁরা সবাই অমুক্তিযোদ্ধা। আর অমুক্তিযোদ্ধাদের কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ নেই। কমান্ডার বা যিনি অভিযুক্ত, তিনি যাচাই-বাছাই কমিটির সাতজনের মধ্যে একজন সদস্য। আর প্রত্যেক আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার হচ্ছে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ সবার সামনে। এর মধ্যে উপস্থিত একজন ব্যক্তিও যদি আপত্তি তোলেন, তবে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁর কমান্ডার কে ছিলেন? তাঁর সহযোদ্ধা কে ছিলেন? কার নেতৃত্বে যুদ্ধ—এ ধরনের জবাব সঠিকভাবে দিয়ে কমিটি ও উপস্থিতদের সন্তুষ্ট করতে পারলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
প্রথম আলো: নতুনভাবে দেড় লাখ ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কতজন নতুন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন?
মোজাম্মেল হক : পাঁচ হাজারের বেশি নতুন হবে বলে আমার মনে হয় না।
প্রথম আলো: দফায় দফায় কমিটি বদল করা হচ্ছে কেন?
মোজাম্মেল হক: দেড় বছর আগে একবার কমিটি করা হয়েছিল। এরপর কিছু কমিটি নতুন করে করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে কারও সুপারিশে কোনো কমিটি করা হয়নি। তবে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁদের বাদ দিয়ে সংশোধিত কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো কোনো কমিটি বাতিলও করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে কমিটিতে অন্য উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ঢুকে গেছে। তাই এসব সংশোধন করতে হয়েছে।
প্রথম আলো: যাচাই-বাছাই কবে শেষ হবে? কীভাবে যাচাই-বাছাই করে তালিকায় নতুন মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত করবেন?
মোজাম্মেল হক: ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ যাচাই-বাছাই শেষ হবে। সে হিসাবে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা বাংলাদেশের প্রতিবেদন আসবে। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে প্রতিবেদন আসা শুরু হয়েছে। যেসব প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠানো হবে, উপজেলা অফিসে তার নামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হবে। যদি কেউ বাদ পড়ে যান, তবে মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পারবেন কে বাদ পড়ে গেলেন।
প্রথম আলো: দু-একটি প্রতিবেদন এসেছে, তাতে কতজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন?
মোজাম্মেল হক: অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে বেশির ভাগ থানাতেই ২০০ জন যেখানে আবেদন করেছেন, সেখানে দু-তিনজনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। এর মধ্যে অনেকেই দু-তিনবার আবেদন করেছেন। এমনও আছে, ভারতীয় তালিকায় ও মুক্তিবার্তায় নাম থাকার পরও আবেদন করেছেন। কিন্তু তাঁদের দরকার ছিল না আবেদন করার।
প্রথম আলো: আপিলের সুযোগ থাকবে কি?
মোজাম্মেল হক: যাঁরা মনে করবেন ন্যায়বিচার পাননি, তাঁরা অবশ্যই আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়া কমিটি মুক্তিযোদ্ধা করার পর যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন। এটা পুনরায় যাচাই-বাছাই হবে।
প্রথম আলো: অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
মোজাম্মেল হক: সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে—এমন প্রমাণিত হলে তিন বছর জেল হবে।
প্রথম আলো: প্রবাসে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই আবেদন করতে পারেননি। তাঁদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
মোজাম্মেল হক: যাঁরা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁদের আগামী মার্চ মাসে ফরম পাঠানো হবে। ওখান থেকে হাইকমিশনের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে পাঠানো হবে।
প্রথম আলো: মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল কোডসংবলিত সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড দেওয়ার কত দূর?
মোজাম্মেল হক:আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা সম্পন্ন করে তাঁদের হাতে সনদ ও পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটা তৈরি করা হচ্ছে। টাকা জাল করা সম্ভব হলেও এ সনদ জাল করা সম্ভব হবে না। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আট ধরনের ডিজিটাল কোডসংবলিত সার্টিফিকেটের নমুনা প্রস্তুত করা হয়েছে।