'রাজনৈতিক মামলা' প্রত্যাহার

৩৪ হত্যা মামলাসহ নতুন করে ২০৬টি আলোচিত মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগের সিদ্ধান্তে আমরা যারপরনাই উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থার স্থায়ী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো এমনিতেই যথেষ্ট নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে সাধারণ জনগণ বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছে। ‘আইনের আপন গতি’ বলতে যে কথাটি প্রধানত ক্ষমতাসীনেরা বলতে অভ্যস্ত, তার অন্তঃসারশূন্যতা এবং পলায়নপরতা আমাদের কাছে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। নিজেদের আমলে দায়ের করা মামলাকে প্রকারান্তরে মিথ্যা হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে প্রত্যাহারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বুমেরাং হতে বাধ্য।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়েরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগও আমরা দেখি না। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে হত্যা মামলার আসামিদের বিচারের মুখোমুখি না হতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক এবং প্রিন্সিপল অব ন্যাচারাল জাস্টিসের পরিপন্থী। ৩৪টি হত্যাকাণ্ড কে বা কারা করেছে, তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু এসব খুন যে ঘটেছে, তা নিয়ে কোনো তর্ক নেই। সুতরাং এসব মামলা কীভাবে কী কারণে প্রত্যাহার করা হবে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তিকে মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার যৌক্তিকতা বোধগম্য, কিন্তু গোটা মামলাই তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। ভুক্তভোগী পরিবারের বিচার চাওয়ার অধিকার খর্ব করার অধিকার কারও নেই।
কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক’ভাবে কিছু লোককে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত করার মতো অপ্রিয় বাস্তবতা আমরা নিশ্চয় অস্বীকার করি না। এমনকি কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা-কর্মীর ইন্ধনে এমনটা ঘটতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ২০৬টি ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করার উদ্যোগ বিস্ময়কর।
বিএনপি আমলের মামলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ আমলের মামলা বিএনপির তুলে নেওয়ার যে বিবরণ আমরা এতকাল জেনে এসেছি, তা এখন বদলে যাচ্ছে। তবে সরকারের এই অপরিণাম ও অযথাযথ সিদ্ধান্তই যে শেষ কথা নয়, এখানে শেষ কথা বলার এখতিয়ার যে স্বাধীন বিচার বিভাগের, সেটা প্রমাণ করার সময় এসেছে। আমাদের অধস্তন আদালত অতীতে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত নাকচ করে মামলা অব্যাহত রেখেছেন। প্রথমত, আমরা এই হতাশাব্যঞ্জক সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব। কিন্তু তারা অবিবেচক থাকলে স্বাধীন আদালতকেই আইনের আওতায় তা রুখে দিতে হবে।