নিরাপদ প্রসব চাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলো যাই

গত ২৭ মে ২০১৭, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘নিরাপদ প্রসব চাই, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলো যাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

*   জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা জরুরি প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করতে হবে

*   লক্ষ্য স্থির করতে হবে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের কোন হাসপাতালে কতটি প্রসব হবে। পরে তা নজরদারি করতে হবে 

* সপ্তাহে ৭ িদনই ২৪ ঘণ্টা জরুরি প্রসবসেবা নিশ্চিত করতে হলে দাতাগোষ্ঠীকে আরও আবদান রাখতে হবে

* সরকারকে এমনভাবে নীতিমালা করতে হবে যেন বাধ্যতামূলকভাবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মিডওয়াইফ থাকে

*   সব হাসপাতালে নিরাপদ প্রসবের উদ্যোগ নিতে হবে

আলোচনা 

আব্দুল কাইয়ুম: নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস সামনে রেখেই আজকের আয়োজন। আমাদের সামনে আছে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এ বিষয়ে অনেক দায়িত্ব এসে গেছে। 

ইন্ডিয়া টাইমস খবর দিয়েছে, ইন্টেল করপোরেশন ও গ্রামীণ ট্রাস্ট ব্রেসলেট তৈরি করেছে, যা প্রত্যন্ত গ্রামের সন্তানসম্ভবা মায়েরা হাতে পরবেন। এই ব্যান্ড লাগিয়েই বুঝতে পারবেন তাঁকে কী করতে হবে, এটি মাকে সতর্ক করে দেবে। এটি প্লাস্টিকের তৈরি। পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী। দাম ১২ থেকে ১৫ ডলার। 

মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমেও আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। ডিজিটাল সুযোগকে বেশি ব্যবহার করে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমি প্রথমেই রিয়াদ মাহমুদকে আজকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আহ্বান করছি। 

রিয়াদ মাহমুদ
রিয়াদ মাহমুদ

রিয়াদ মাহমুদ
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ মে, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেন। এটি হলো উচ্চপর্যায় থেকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কোন জায়গায় আছি, করণীয় কী, তা নিয়ে কথা বলব। 

মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ল্যানসেট বলেছে, যে মা ও নবজাতক যেখানেই থাকুক, সেখানেই গুণগত মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ধারণাগত ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছে ল্যানসেট। দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল থেকে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী গিয়ে প্রসব করাতে পারেন। তবে জোর দিতে হবে হাসপাতালে প্রসব করানোর বিষয়ে। যদি জানা যায়, মায়ের পাঁচটি প্রসবজনিত বিপদ চিহ্নের যেকোনো একটি আছে, তাহলে কোথায় যাবেন? ল্যানসেটে সব বলা আছে। এটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, তবে এটি মাথায় রেখে আমরা বাংলাদেশের জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে পারি।

মাতৃমৃত্যু হার আমরা অনেক কমিয়ে এনেছি। ২০১৫ সালের জাতিসংঘ হিসাব অনুযায়ী, প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৭৬। দক্ষ প্রসব সেবাদানকারীর মাধ্যমে প্রসব হচ্ছে ৪২ শতাংশ। বেশির ভাগ মা হাসপাতালে এসে প্রসব করাতে চাচ্ছেন। পরিবার পরিকল্পনায় অপূরণীয় চাহিদা কমে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। 

গ্লোবাল টার্গেট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০ বা তার নিচে নামাতে হবে। আমাদের অনেক অর্জনের পরও প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন মা মারা যাচ্ছেন, যার বেশির ভাগই প্রতিরোধযোগ্য। আমরা মৃত্যুর কারণগুলো জানি। 

মাতৃমৃত্যুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ আছে। ২০০১ সালে পরোক্ষ কারণে ১৫ শতাংশ মা মারা যেতেন। এখন তা হয়েছে ৩৫ শতাংশ। এটা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। জেলা বা উপজেলা হাসপাতালে পরোক্ষ কারণ নিয়ে এলে আমরা চিকিৎসা দিতে পারি না, মায়েদের ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। 

মাতৃমৃত্যু প্রতিরোধে সব জায়গায় দক্ষতা বাড়াতে হবে। সারা দেশে গুণগত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হবে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

৩৭ শতাংশ প্রসব হাসপাতালে হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ প্রসব বেড়েছে প্রাইভেট হাসপাতালে। মনে রাখতে হবে, ৫৮ শতাংশ প্রসব এখন পর্যন্ত অদক্ষ হাতে হচ্ছে। এ ছাড়া শুধু হাসপাতালে প্রসব করলেই হবে না। 

সিয়েরা লিওনে দক্ষ প্রসব সহায়তাকারীর হার ৬২ শতাংশ, কিন্তু তঁাদের মাতৃমৃত্যুর হার ১৩৬৫, যা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। তাই সেবার গুণগত মান বজায় রাখাও জরুরি। অবেদনবিদদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিছু কিছু জেলা হাসপাতালে অবেদনবিদ নেই, না থাকলে জরুরি প্রসূতিসেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

পরিবার পরিকল্পনায় ২০১১ ও ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, মোট প্রজনন হার এক জায়গায় থেমে আছে। এখানেও নজর দিতে হবে। মা সন্তান কম নিলে ঝুঁকি কমে যাবে। জাতীয়ভাবে মাতৃমৃত্যুর হার ১৭৬, কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হার সমান নয়। 

দরিদ্র মায়েদের ১৮ শতাংশ ও ধনী পরিবারের মায়েদের ৭৩ শতাংশ দক্ষ প্রসব সহায়তাকারীর সহায়তা পাচ্ছেন। এ বৈষম্য কমাতে হবে।

আবুল কালাম আজাদ
আবুল কালাম আজাদ

আবুল কালাম আজাদ
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানুষ সেবা নিতে চাইছে। নিরুৎসাহিত করার কোনো দরকার নেই। কোনো প্রাইভেট সার্ভিস যদি হয়রানি না করে, মানুষ না ঠকায়, তাহলে দোষের কিছু নয়। তবে অবশ্যই সরকারকে দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি নিশ্চিত জায়গা তৈরি করতে হবে।

আমাদের ২২ হাজার মিডওয়াইফ লাগবে। সব মিডওয়াইফ সরকারকে দিতে হবে তা নয়। পৃথিবী বেশির ভাগ দেশে সব মিডওয়াইফ সরকারি নয়। বাংলাদেশে অনেক সংস্থা কাজ করছে মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে। 

আমার মতে, বাংলাদেশের যাতায়াতব্যবস্থা ভালো, তাই এত স্বাস্থ্যকেন্দ্র না-ও লাগতে পারে। তাই রোগী ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। রক্তক্ষরণসহ সরাসরি যেসব কারণে মা মারা যাচ্ছেন, তা কেন কমানো যাবে না, তা আমার মাথায় আসে না। প্রত্যক্ষ কারণ কেন দূর করা সম্ভব হবে না?

খুলনায় কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসব সাত গুণ বেড়ে গেছে।  কমিউনিটি ক্লিনিকের মান হয়তো সে পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি, কিন্তু বাড়িতে প্রসবের চেয়ে তো ভালো হবে। স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খবর রাখছেন। উপজেলায় থাকলেও খবর রাখছেন, প্রসবের বিষয়ে তাঁরা জানেন যেকোনো বিপদ হলে অ্যাকশন নিতে হবে। 

আগামী পাঁচ বছরে ৬৫ হাজার অতিরিক্ত মাল্টিপারপাস কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার নিতে পারলে প্রসূতি মা, শিশু, অসংক্রামক ব্যাধিসহ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা আরও বেশি কাজ করতে পারব।

আজকের গোলটেবিলের আলোচকেরা যে সুপারিশ করছেন, তা আমরা বিবেচনায় নেব। চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রামের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে অনেক দৃশ্যমান, প্রশংসাযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাবে বলে মনে করছি। 

সবচেয়ে খারাপ অঞ্চলের মধ্যে সিলেট, চট্টগ্রামের কথা বলা হয়। কিন্তু ঢাকার কথা কেন বলছি না? ঢাকার যে উপজেলায় খারাপ অবস্থা, সেখানে যেতে হবে। সব জায়গায় একই রকম নজর দিলে অর্থ ও সময়ের অপচয় হবে। তা যেন না ঘটে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

চিকিৎসকদের যেসব পেশাজীবী সংগঠন আছে, তাদের মাথার মধ্যে বা কার্যক্রমে পাবলিক হেলথের বিষয়টি না আনলে হবে না। ওজিএসবিসহ পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যদের এ বিষয়ে আরেকটু নজর দিতে হবে। 

কারা অস্ত্রোপচার করছেন? তাঁরা তো আপনাদের লোক। তাঁরা বিশেষজ্ঞ। অস্ত্রোপচারের পক্ষে যদি যুক্তিপূর্ণ উত্তর থাকে, তাহলে ঠিক আছে, তা না হলে তাঁকে একটু সচেতন হতে বলুন। সিজারের বিকল্প ছিল কি না, তা-ও দেখতে হবে। অন্যায়ভাবে দোষারোপ করলে চলবে না। 

আমাদের কাছে পরিসংখ্যান আছে, পরিসংখ্যান ধরে কাজ করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারকে নিতেই হবে। দাতাগোষ্ঠী, এনজিওসহ সংশ্লিষ্টরা এমডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে যেভাবে কাজ করেছে, এখন আর তা করলে চলবে না। 

আপনারা সরকারকে সাহায্য করেন। নিজে নিজে কোনো প্রকল্প শুরু করবেন না। আমাদের স্বল্পসংখ্যক জনবলকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।

লায়লা আরজুমান্দ বানু
লায়লা আরজুমান্দ বানু

লায়লা আরজুমান্দ বানু
আমাদের ওজিএসবির সদস্য ১ হাজার ৬০০, আর শাখা আছে ১৩টি। আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখতে পারব না, কেন অস্ত্রোপচার করে প্রসব বেশি হচ্ছে। তবে এ হার বেড়েছে, ১৭ থেকে ২৩ শতাংশ হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা আরও কমানো যায়। মিডওয়াইফ লাগবে। 

আমরা লেবার রুম প্রটোকল মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিয়েছি। মিডওয়াইফ যদি লেবার রুমের চার্জে থাকেন, স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ানো সম্ভব। তঁারা শুধু প্রসব করাবেন।

নার্স বা চিকিৎসকেরা অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, রোগীকে সেভাবে সময় দিতে পারেন না। আইডিয়াল লেবার রুম আর মিডওয়াইফ নিশ্চিত করতে পারলে সিজারের হার কমিয়ে আনা সম্ভব।

বেসরকারি হাসপাতালে হয়তো আমরা তেমন কিছু করতে পারব না। রোগী মারা গেলে ভয় থাকে কোনো অসুবিধা মারপিট বা ক্লিনিক ভাঙচুরের। তবে আমরা গাইনোকোলজিস্টদের বিভিন্ন সেমিনার করে বোঝাতে পারব, কেন অস্ত্রোপচারের হার কমাতে হবে। 

প্রাইভেটে অনেক সময় পাওয়া যায় মা, শাশুড়ি এসেই বলেন, মেয়ে ব্যথা সহ্য করতে পারবে না। তখন ভয় থাকে। দায়িত্ব নিয়ে স্বাভাবিক প্রসব করার ক্ষেত্রে ভয় থেকে যায়। গর্ভকালীন পরীক্ষার প্রথম থেকেই যদি মা, শাশুড়িদের স্বাভাবিক প্রসবের বিষয়ে মোটিভেট করা যায়, তাহলে তা সহজ হবে। 

আমরা তো বুঝি কখন স্বাভাবিক প্রসব হবে, না অস্ত্রোপচার লাগবে। আর এখন পর্যন্ত স্বামী, শাশুড়ি সিদ্ধান্ত নেন স্ত্রী বা ছেলের বউয়ের প্রসব কোথায় হবে। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন। তাই প্রসব–পূর্ব সেবা কার্যক্রমে তাঁদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মাতৃমৃত্যু রোধে গণমাধ্যমকেও দায়িত্ব নিতে হবে।

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা
সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা

মিডওয়াইফকে আমরা বলি, ল্যানসেট অনুযায়ী, দক্ষতা, জ্ঞান, সহমর্মিতা ও আদর্শ মান—এই চারের সমন্বয়ে যিনি সেবা দেন, তিনি হচ্ছেন মিডওয়াইফ। তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রায়ই প্রশ্ন তোলা হয়, স্টাফ নার্স থাকতে কেন মিডওয়াইফ লাগবে। নার্সরা এক বছর পড়েন মিডওয়াইফারি আর মিডওয়াইফরা তিন বছর পড়েন, কোয়ালিটির পার্থক্য আছে। 

সরকার থেকে প্রতি উপজেলায় চারটি এবং সাবসেন্টারে একটি পদ আছে। সাবসেন্টারে ১ হাজার ২০০ জন সার্টিফিকেট মিডওয়াইফ পদায়ন করা হয়েছে, তবে অবকাঠামোর জন্য তাঁরা সেবা দিতে পারছেন না। 

আমাদের ২২ হাজার মিডওয়াইফ লাগবে। বেসরকারি খাতকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে। তবে ১৯৮২ সালের ক্লিনিক অর্ডিন্যান্সে পরিবর্তন করতে হবে। কেননা সেখানে ক্লিনিক চালাতে স্টাফ নার্সের কথা বলা আছে, এখন নীতিমালা করে মিডওয়াইফ লাগবে, তা বাধ্যতামূলক করতে হবে। 

বেসরকারি হাসপাতালে মিডওয়াইফের জন্য পদ রাখতে হবে। সরকারের জেলা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টি করতে হবে। 

এফডব্লিউভির সংখ্যা চার হাজারের বেশি, তঁাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। প্রসব-পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে নজর দিতে হবে। 

মো. জিয়াউল মতিন
মো. জিয়াউল মতিন

মো. জিয়াউল মতিন

বিভিন্ন এলাকায় মাতৃমৃত্যুর হার ও সেবা গ্রহণের হারও ভিন্ন। ঝিনাইদহ হাসপাতালে লিডারশিপ ভালো, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। আবার কুড়িগ্রামের একটি হেলথ কমপ্লেক্সে সব তৈরি কিন্তু মাসে তিনটি প্রসব হচ্ছে। 

সবকিছু চিন্তায় রেখে সরকারি হাসপাতালে প্রসব বাড়িয়ে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কমিউনিটির ব্যাপক ভূমিকা আছে। কমিউনিটির অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে। 

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে চারটি কমিউনিটি গ্রুপ কাজ করছে। এই গ্রুপগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে। আচরণ পরিবর্তন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজে লাগাতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়াতে হবে। 

মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে দাতাগোষ্ঠীর অনেক অবদান আছে, তা-ও মনে রাখতে হবে। ২৪ ঘণ্টা, ৭ দিন জরুরি প্রসবসেবা নিশ্চিত করতে হলে দাতাগোষ্ঠীকে আরও অবদান রাখতে হবে।

ইশতিয়াক মান্নান
ইশতিয়াক মান্নান

ইশতিয়াক মান্নান

বেসরকারি খাতে সেবা নেওয়ার হার বাড়ছে, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মান নিয়ে। এ খাতের দিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে। বেসরকারি খাতকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছেড়ে দিলে প্রসবের হার বাড়বে, কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠী সেবার বাইরে থেকে যাবে। সঠিক সময়ে সঠিক সেবা নিতে পারবে না। 

সরকারের পরিকল্পনা থাকতে হবে, প্রসূতি মায়েদের কত শতাংশ বেসরকারি আর কত শতাংশ সরকারি হাসপাতালে প্রসব হবে। এ বিষয়ে সমন্বয়ের প্রয়োজন। 

দ্বিতীয়ত, মান নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টর নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সেবা দিচ্ছে, তা বলাই যায়। জবাবদিহি নেই। মান নিয়ন্ত্রণ বা রেকর্ড সিস্টেম নেই। 

অস্ত্রোপচার কমাতে বলছি, কিন্তু রেকর্ডকিপিং নেই। অস্ত্রোপচার করলাম না, একটা সমস্যা হলে মামলা হলো, সত্যটা বের হবে কীভাবে? রোগীর স্বজনেরাই বা অভিযোগ করবেন কী দিয়ে? আবেগঘন ইমোশনের মধ্য দিয়ে গন্ডগোল হবে। 

সরকারকে অভিনন্দন জানাব, অনেক দিন বলার পর প্রথমবারের মতো সিলেট, চট্টগ্রামের মতো পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জন্য আলাদা পরিকল্পনা নেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের মাকে চারটি প্রসব–পূর্ব সেবা দিতে চাই। এখন শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভিত্তিক সেবা দিলে হবে না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাকে খুঁজে বের করতে হবে কার কী সেবা লাগবে।

মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে কিছু ক্ষেত্রে মানের প্রশ্নে শুধু আইন করে হবে না। এটির সঙ্গে নৈতিকতা, ব্যবসার প্রশ্ন আছে। মানের প্রশ্ন আছে। ওজিএসবির ১ হাজার ৬০০ সদস্য, তাঁরা যদি শক্তভাবে মান ও নীতিনৈতিকতার প্রশ্নে নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ না করেন, তাহলে তা কঠিন হয়ে যাবে।

ফিরোজা বেগম
ফিরোজা বেগম

ফিরোজা বেগম

বিশেষজ্ঞ না হলে ওজিএসবির সদস্য করা হয় না। মেডিকেল অফিসার পর্যায়ে কোনো সদস্য নেই আমাদের। 

বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে, বিশেষ করে বেসরকারি মেডিকেলে মেয়েরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু পাস করার পর তারা উপজেলা পর্যায়ে যেতে চাইছে না নিরাপত্তার অভাবে। সরকারকে এদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। 

স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো নারীবান্ধব হতে হবে, রোগী আসার পর তাকে যেন ভালোভাবে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু আমরা কেউ সেদিকে নজর দিচ্ছি না। 

আরেকটি বিষয় হলো, চিকিৎসকেরা যথাযথ উপায়ে রেফারেল সিস্টেম মানছেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ বছর ধরে হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের চিকিৎসকেরাই কোনো কিছু না লিখে রোগী পাঠিয়ে দিচ্ছেন। 

চিকিৎসকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ বেসরকারি খাতে যাচ্ছে। কারণ, সরকারি হাসপাতালে সেভাবে সেবা পাচ্ছে না। 

আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী
আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী

  মো. মহিউদ্দিন ওসমানী

ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরে আমরা সহজেই সেবা পাই। ২৪ ঘণ্টাই পাই। তবে দুর্গম এলাকায় কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বহু বছর ধরে। 

এবার যে চতুর্থ প্রোগ্রাম সেক্টর তৈরি করা হয়েছে, তাতে এ বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। স্টেকহোল্ডারসহ সবার মতামতের ভিত্তিতেই এটি তৈরি করা হয়েছে। দুর্গম এলাকায় মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে হলে দুর্গম এলাকার মায়েদের কাছে পৌঁছাতে হবে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য আলাদা পরিকল্পনা করা হয়েছে। মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারদের কাজে লাগানো বা ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা আছে। এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

মোহাম্মদ শরীফ
মোহাম্মদ শরীফ

মোহাম্মদ শরীফ

সব উপজেলায় সমন্বিত জরুরি প্রসূতিসেবা চালু করতে হবে। কোনো মায়ের সিজার লাগলে সবচেয়ে কাছে যে কেন্দ্র, সেখানেই নিতে হবে। সারা দেশের ট্রাফিক জ্যামের কথা মাথায় রাখতে হবে। সারা পৃথিবীতে অবেদনবিদদের চাহিদা বেশি, িকন্তু সংখ্যা কম। 

আমাদের দেশে  কেন কম, এ বিষয়ে কেন পড়তে চাইছেন না, তা ভাবতে হবে। চট্টগ্রামে দু-একটি উপজেলা ছাড়া সব উপজেলায় তিনটি-চারটি ক্লিনিক আছে, সেখানে সিজারও হচ্ছে। অবেদনবিদও আছেন। সব ব্যবসায়ী এর মালিক। অবেদনবিদদের সংখ্যা বাড়িয়ে সব উপজেলায় জরুরি প্রসূতিসেবা কেন্দ্র চালু করতে হবে। অবেদনবিদদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের ধরে রাখতে হবে। 

আমাদের ৩ হাজার ১৩১টি ইউনিয়ন হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার আছে। ২ হাজার ২০০ কেন্দ্রে প্রসব হচ্ছে। আবার কোনোটাতে প্রসব হচ্ছেও না। তবে কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এসব কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় ১ লাখ ১৭ হাজার। সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। 

 এবার আমাদের সেক্টর প্রোগ্রামে চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এফডব্লিউভি নেই। এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পদটাকে মিডওয়াইফারি করা যেতে পারে। 

আমি ঢাকা নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছি। মাতৃমৃত্যুর হারসহ সবকিছুই বাড়ছে ঢাকায়। এদিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া কিশোরী স্বাস্থ্য এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। আর যে যা-ই বলুক, আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশ যা-ই করুক, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সেবার হার বাড়াতে হবে। চিকিৎসকসহ সবই আছে, দক্ষতা বাড়াতে হবে। মনিটরিং, সুপারভিশন নেই, এটি বাড়াতে হবে। 

প্রসব-পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়াতে হবে। আইইউডির দাম মাত্র ১৮ টাকা, এটি দিয়ে ১০ বছর সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার
মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিক ও সিজারের জন্য তৈরি রাখতে হবে। পার্টোগ্রাফ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রসব কীভাবে হবে। এটি তৈরির জন্য জনবল লাগবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যা আছে, সব কটিতে অবেদনবিদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। 

১ জুলাই থেকে ৩২ জন অবেদনবিদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাত্র তিনজনকে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ কেউ আসতেই চাইছে না। আনার জন্য প্রণোদনা, পদোন্নতিসহ কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাম্বুলেন্স কিনে দিয়েছে। তাই রেফারেল সিস্টেমে স্থানীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

আমার মতে, সমন্বিত জরুরি প্রসূতিসেবা কেন্দ্র কমিয়ে লাভ হবে না। ম্যাপিং করতে হবে, আমাদের জনবল কম বলে প্রায়োরিটির ভিত্তিতে বিভিন্ন কেন্দ্রে জনবল নিয়োগ দিতে হবে। কেন্দ্র বন্ধ করার কোনো দরকার নেই। 

সমন্বিত উদ্যোগে কাজ হলে মাতৃমৃত্যুর হার অবশ্যই কমবে। আমাদের শুধু সীমাবদ্ধতা আছে তা নয়, আমাদের বিভিন্ন সুযোগও আছে। তাই সবাই মিলে কেন একজন মাকে বাঁচাতে পারব না?

শামস এল আরেফিন
শামস এল আরেফিন

শামস এল আরেফিন

আইসিডিডিআরবির মূল কাজ গবেষণা। সরকারের প্রায় সব কাজেই অংশীদার। দুই বছরের বেশি সময় আগে আমরা একটা ক্রিটিক্যাল রিভিউ করি বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে। একটা প্রশ্ন সব সময়ই ছিল, দক্ষ প্রসব সহায়তাকারীর হার কম, তারপরও মাতৃমৃত্যু কমছে কীভাবে?

অনেক কারণ বের হয়ে এসেছে রিভিউতে। মোট প্রজনন হার কমেছে, মায়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে। আরেকটি কারণ বের হয়ে এসেছে, কেয়ার সিকিং বা সময়মতো বা জরুরি সময়ে নজর দেওয়া। 

বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের চেয়ে অন্য রকম। অন্য দেশে দূরত্ব বড় সমস্যা। এখানে দূরত্ব বড় সমস্যা নয়। এখানে অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে। এখানে নতুন কেন্দ্র তৈরি ও চালুর চেয়ে ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা সহজ।

আমরা যদি প্রত্যক্ষ মাতৃমৃত্যুর কারণ শতভাগ কমাতে পারি, তাহলে এসডিজি অর্জন সম্ভব। কিন্তু তা সম্ভব না, পরোক্ষ কারণ নিয়ে কাজ করতেই হবে। 

পরোক্ষ কারণের মধ্যে ২২ শতাংশ মা জন্ডিসে মারা যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা জানি না এটা কেন হচ্ছে। কয়েকটি গ্রুপ কাজ করছে, সম্ভবত হেপাটাইটিস ই-এর জন্য হতে পারে। বাকি কারণগুলোও জানতে হবে।

২০১৪ সালে বিডিএইচএস জরিপ অনুযায়ী, বেসরকারি খাত সেভাবে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু তারপরও এ খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা বাড়ছে, আরও বাড়বে। 

প্রসব-পূর্ব সেবা নেওয়ার যে হার বাড়ছে, তা-ও হচ্ছে বেসরকারি খাতে। এটি ভালো লক্ষণ নয়।

জো হাইউনগুই
জো হাইউনগুই

জো হাইউনগুই

এখানে আসতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। আমরা জাতীয় পর্যায়ের একটি ট্রেনিং নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সহায়তা করছি। এখানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জানুয়ারি মাস থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠান আর সরকারি জনবল হচ্ছে ‘কি পারসন’। বেসরকারি খাতও গুরুত্বপূর্ণ। দুটোরই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। 

কোইকা সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রসবে সহায়তা করছে। খুলনা, টাঙ্গাইলে ইউনিসেফসহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে কোইকা। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। কোইকা এ কাজে সব সময় সহায়তা করতে আগ্রহী। অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী ও সরকারের কার্যক্রমও এ ক্ষেত্রে বাড়াতে হবে। অনেক জায়গায় কাজ করার আছে।

বাংলাদেশে দক্ষ জনবলের অভাব আছে। বাংলাদেশে ২০২১ সালের মধ্যে ২২ হাজার মিডওয়াইফ লাগবে। তৃণমূল পর্যায়ে এখন পর্যন্ত খুব কমসংখ্যক নার্স ও মিডওয়াইফ কাজ করছেন। 

মাতৃমৃত্যু কমাতে সমন্বিত জরুরি প্রসূতিসেবা কেন্দ্র লাগবে। কিন্তু গাইনি চিকিৎসক, অবেদনবিদসহ অন্যান্য জনবল ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এটি আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। নার্স ও মিডওয়াইফদের অ্যানেসথেসিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় কি না, তা চিন্তা করা যায়।

নাজিমুল কাইয়ুম
নাজিমুল কাইয়ুম

নাজিমুল কাইয়ুম

আমাদের কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে। ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক বাজেটের একটি অংশ চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ দিতে পারেন। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপের সদস্য। কমিউনিটির সচেতনতা তৈরিতে এই বাজেট ব্যবহার করতে পারেন। 

এ ছাড়া তহবিল গঠন করে মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। এফডব্লিউভি আবাসিকভাবে থাকতে পারছেন না। থাকার অবকাঠামো উন্নত মানের না। তা ছাড়া এই এফডব্লিউভিদের পাঁচ হাজারের অর্ধেকেরই মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণ নেই। 

স্বাভাবিক প্রসবে জটিলতা দেখা দিলে কোথায় রেফার করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এদিকে নজর দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রেও ইউনিয়ন পরিষদ, বিভিন্ন এনজিও এগিয়ে আসতে পারে। 

আব্দুল কাইয়ুম: এখন পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল থেকেই মানুষ সেবা বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। হাওর ও দুর্গম এলাকার মায়েদের কাছে যেতে হবে। বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।

স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে প্রচার বাড়াতে হবে। তবে কোনো মায়ের স্বাভাবিক প্রসব না হয়ে শেষ মুহূর্তে সিজার লাগলে বা জটিলতা দেখা দিলে তার জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন 

আবুল কালাম আজাদ            :  মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মোহাম্মদ শরীফ                  :  পরিচালক (মা ও শিশু স্বাস্থ্য), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

  মো. মহিউদ্দিন ওসমানী    :  যুগ্ম প্রধান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার     :  লাইন ডিরেক্টর (মাতৃ, নবজাতক, শিশু এবং কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

জো হাইউনগুই                  :  দেশীয় পরিচালক, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল, কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)

নাজিমুল কাইয়ুম                 :  স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল, কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)

ইশতিয়াক মান্নান                :  উপপরিচালক, সেভ দ্য চিলড্রেন

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা :  বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)

শামস এল আরেফিন             :  জ্যেষ্ঠ পরিচালক, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ

লায়লা আরজুমান্দ বানু           :  সভাপতি, অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল, সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)

ফিরোজা বেগম                  :  জেনারেল সেক্রেটারি, অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)

রিয়াদ মাহমুদ                    :  স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)

মো. জিয়াউল মতিন              :  স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক এবং ওআইসি, স্বাস্থ্য বিভাগ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম               :    সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো