চাকরির আবেদনে টাকা কেন?

চাকরিপ্রত্যাশীরা অনেক দিন ধরেই আবেদনের সঙ্গে ফি আদায়ের প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ছবি: প্রথম আলো
চাকরিপ্রত্যাশীরা অনেক দিন ধরেই আবেদনের সঙ্গে ফি আদায়ের প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ছবি: প্রথম আলো

আতিউর রহমান গভর্নর থাকাকালে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করতে এখন আর কোনো টাকাপয়সা লাগে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনা আছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকে চাকরির আবেদন করতে মাশুল দেওয়া তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কষ্টসাধ্য।

বাংলাদেশে এমনিতেই চাকরির বাজার খারাপ। পদ কম, চাকরিপ্রার্থী বেশি। নিয়োগ পরীক্ষা মানেই তুমুল প্রতিযোগিতা। লাখো তরুণ চাকরির আশায় বছরের পর বছর পার করেন। অনেকের মনে ভর করে হতাশা। পাস করা ও চাকরি পাওয়া—এই দুয়ের মধ্যকার সময় ক্রান্তিকাল। দুর্বিষহ এই ক্রান্তিকাল অনুভব করেন না, এমন লোক হাতে গোনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেখেছি, সদ্য ডিগ্রি অর্জন করা তরুণদের ওপর দিয়ে কী ঝড়টাই না যায়! নিজের খরচপাতি আছে। ওদিকে পরিবার তাকিয়ে থাকে। পরিচিতজনেরা আকারে-ইঙ্গিতে খোঁচা মারে। ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন: ‘পড়ালেখা তো হলো, চাকরির কী খবর?’

অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক চাপে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের দিশেহারা অবস্থা হয়। ডিগ্রি অর্জনের আগে হয়তো বাড়িতে টাকা চাওয়া যায়। কিন্তু ডিগ্রি অর্জনের পর মা-বাবার কাছেও হাত পাততে বাধে। আত্মসম্মানে লাগে। মাথা হেঁট হয়ে যায়। এসবের মধ্যে আবার আছে চাকরির জন্য খেয়ে না-খেয়ে পড়া। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য তক্কে তক্কে থাকা। একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলেই চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের মধ্যে আশার আলো জ্বলে ওঠে। তবে এ আশা খানিকটা হোঁচট খায় চাকরির আবেদনে ফির অঙ্ক দেখলে।

সরকারি তো বটেই, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ফি আদায় করে। এক হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি ফি আদায়ের নজির আছে। বিসিএসে সাধারণ আবেদনকারীদের কাছ থেকে এখন ৭০০ টাকা করে ফি নেওয়া হচ্ছে।

চাকরি নামের ‘সোনার হরিণ’ ধরতে তরুণদের দৌড়ঝাঁপের শেষ নেই। নানামুখী চাপে তাঁরা চিড়েচ্যাপ্টা হয়। তার ওপর চাকরির আবেদনের সঙ্গে ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, চালান বা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ফি দেওয়া তাঁদের জন্য রীতিমতো একটা বোঝা। আবার আছে কমিশনের জ্বালা। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু বিপদে পড়েন বাকিরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ এই চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একের পর এক চাকরির আবেদনের ফি বাবদ খরচ জোগানো কষ্টকর। তাই তাঁরা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেন। পর্যাপ্ত পদ ও সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা আবেদন করেন। ‘টাকা ফাউ যাবে’ ভেবে অনেক ক্ষেত্রে আবেদনই করেন না।

চাকরিপ্রত্যাশীরা অনেক দিন ধরেই আবেদনের সঙ্গে ফি আদায়ের প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। নিয়োগ পরীক্ষার ব্যয় কেন নিয়োগপ্রার্থীকে বহন করতে হবে, এ প্রশ্ন তাঁদের মনে। তবে তাঁদের দাবি যথারীতি উপেক্ষিত থেকে গেছে। বরং দিন দিন ফির পরিমাণ বাড়ছে। চাকরিপ্রার্থী অধিকাংশ তরুণের জন্য এটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

আর্থিক সমস্যার বাইরে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফি দেওয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক পথ দেখিয়েছে। এবার অন্য সব প্রতিষ্ঠানের পালা। চাকরিতে আবেদনকারীর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের নিয়মটি তুলে দেওয়া উচিত। এতে চাকরিপ্রার্থীরা একটু হলেও স্বস্তি পাবেন।

সাইফুল সামিন: সাংবাদিক
[email protected]