ঔষধনীতি শিগগির কার্যকর হবে

প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ছবি: জাহিদুল করিম
প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ছবি: জাহিদুল করিম

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘আমরা বহুল প্রতীক্ষিত একটি ঔষধনীতি পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা পাস করে কার্যকর করার ব্যবস্থা করা হবে।’

আজ বুধবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রথম আলো এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমাদের ৮০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। আর এখন আমরাই ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করি। নিজেদের উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানি করছি। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের দাবি, ওষুধের মান ঠিক রাখুন এবং দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখুন। এটা সাধারণ জনগণেরও দাবি।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে পর্যবেক্ষণের জন্য ঔষধ প্রশাসনে জনবলের অভাব রয়েছে। এটা আমরা জানি। আর এই জনবল নিয়োগ একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। তারপরও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে বল আমি আশ্বস্ত করছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এ কারণে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, কোনো কোনো ফ্যাক্টরিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, সে কারণে আমরা মডেল ফার্মেসি চালু করেছি। সেখানে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা হয় না। সেখানে একজন সনদধারী ফার্মাসিস্ট থাকেন। তিনি ভোক্তার কাছে ওষুধ বিক্রির পর তা ব্যবহারের নিয়ম বলে দেন। ধীরে ধীরে মডেল ফার্মেসি সবখানে চালু করা হবে।’

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, ঔষধনীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ওষুধ আইন। সেটার খসড়া হয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় আছে। তিনি বলেন, ওষুধশিল্পে নজরদারির অবস্থা খুব খারাপ। সব জেলাতে আবার ওষুধ প্রশাসনের অফিসও নেই। এগুলো করার উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মৌলিক চাহিদা। তাই স্বল্প মূল্যে মানসম্মত ওষুধ নিরাপদে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে ফার্মেসি গবেষণা নেই। তাই ড্রাগ ও মেডিসিনের ওপর গবেষণায় সরকারিভাবে উৎসাহ দিতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঔষধনীতির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। কিছু কিছু চায়ের দোকানেও ওষুধ পাওয়া যায় এখন। সেগুলো আসল, নাকি নকল! এ ক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার, প্রশাসন ও আমরা যারা ওষুধ কিনি, তাঁদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’

বাংলাদেশ কেমিস্ট ডায়াগনিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই বলেন, সব ওষুধের দাম সরকার সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া নকল ও ভেজাল ওষুধ বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। কোম্পানিগুলো কী ওষুধ উৎপাদন করে, তা দেখতে হবে। আবার অনেক দোকান ওষুধ বিক্রি করে, কিন্তু তাদের কোনো লাইসেন্স নেই। এসব রোধে সবার সমন্বিত সহযোগিতা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন আবদুর রহমান বলেন, জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬-এর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা গেলে ওষুধ রপ্তানি করে আরও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এতে ওষুধশিল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। ছবি: জাহিদুল করিম
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। ছবি: জাহিদুল করিম

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ‘নকল ওষুধ তৈরির বিষয়টি কঠোরভাবে কন্ট্রোল করতে হবে। আর বিপণনে নৈতিকতা থাকতে হবে। সাধারণ ভোক্তারা সচেতন নন বলেই এ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন।’

এসকেএফের হেড অব মার্কেটিং বিনয় দাস বলেন, দুই ধরনের নকল ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়। এক ধরনের ওষুধ হুবহু কোনো কোম্পানির নাম ও প্যাকেট ব্যবহার করে বাজারজাত করা হয়। আরেক ধরন হলো নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের তৈরি ওষুধের কাছাকাছি নাম দিয়ে তৈরি করা হয়। এসব নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় বৈঠকের শুরুতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রুহুল আমিন ‘জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬’-এর লক্ষ্যমাত্রা ও সীমাবদ্ধতাসহ সার্বিক দিক তুলে ধরেন।

বৈঠকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশিদ-ই-মাহবুব, ফার্মেসি কাউন্সিলের সহসভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এম. ইকবাল আর্সলান, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা মোমেনুল হক, বিএমএ কার্যকরী পরিষদের সদস্য জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।