বাল্যবিবাহ রোধে আমার-আপনার করণীয়

গত ২৭ জুলাই প্রথম আলোর আয়োজনে ‘বাল্যবিবাহ রোধে আমার-আপনার করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

* মেয়েদের িশক্ষাপদ্ধিত এমন হওয়া প্রয়োজন, যেন িশক্ষা শেষে চাকরির িনশ্চয়তা থাকে

*    িশক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ার একটা বড় কারণ বাল্যবিবাহ। এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

* মেয়েরা যেন শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষমে্যর শিকার না হয়, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন

* এনজিওগুলো পৃথকভাবে কাজ করে। সরকার ও এনজিও সমন্বিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

* দরিদ্র মানুষেরা যেন সহজে আইনি প্রতিকার পায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম: আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বিয়ের বয়স নিয়ে ভাবত না। এখন সবার মধ্যে সচেতনতা এসেছে।

স্থানীয় প্রশাসন, গ্রামের মানুষ এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে কিছু প্রশ্ন এসেছে। তবে আমরা সবাই যদি সচেতন থাকি, তাহলে বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া কোনো অবস্থাতেই ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হবে না। এখন এ বিষয়ে আলোচনার সূচনা করবেন নাছিমা বেগম।

নাছিমা বেগম
আমরা নতুন করে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন করেছি। এ আইনে ২২টি ধারা আছে। এর ১৯ ধারা বিশেষ শর্ত–সম্পর্কিত। বাল্যবিবাহ হলেই এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।

কিন্তু সমাজে ব্যাপক আলোচনা হয় শুধু বিশেষ বিধানটি নিয়ে। এ বিশেষ বিধানের সুযোগ নিয়ে যে কেউ ইচ্ছে করলেই বাল্যবিবাহ দিতে পারবে না। এখানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার জন্য আদালতের অনুমতিসহ অনেক শর্ত পূরণ করলেই কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিয়ে হতে পারে।

অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য একটি যাচাই কমিটি থাকবে। এ কমিটির প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দুজন কিশোর-কিশোরীসহ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা এ কমিটির সদস্য থাকবেন। এ কমিটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে যে বিয়ে না দিয়ে আর কোনো উপায় ছিল কি না। এরপরও কমিটির প্রতিবেদন আদালতে যাবে। আদালত এ প্রতিবেদন গ্রহণ করতে পারেন, প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন। বাল্যবিবাহ হতে হলে এতগুলো ধাপ পার হতে হবে। তাই যে–কেউ মনে করলেই বাল্যবিবাহ দিতে পারবেন না।

সম্প্রতি সিলেট বিভাগ বাল্যবিবাহমুক্ত হয়েছে। দিন দিন বাল্যবিবাহের হার কমে আসছে। আমরা বিধির খসড়া করেছি। খুব দ্রুত এটা ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। সবার এ ক্ষেত্রে মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

রোশনি বাসু
রোশনি বাসু

রোশনি বাসু

বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা ও পরিবর্তন আনাও প্রয়োজন। আমরা জাতিসংঘ শিশু সনদের ভিত্তিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করি, যার মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় অন্যতম।

বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। জাতীয় পরিকল্পনার মধ্যে যথাযথ বাজেট ও বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি।

বাল্যবিবাহ বন্ধে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের শিক্ষার ওপর বেশি জোর দিতে হবে। আবার এ শিক্ষা কর্মক্ষেত্রে কতটা কার্যকর, সেটাও দেখতে হবে। মেয়েরা চাকরি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কি না, সেটাও দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি।

আইন থাকা সত্ত্বেও যৌন হয়রানি বেড়ে চলেছে। মেয়েদের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। ছেলেমেয়ে দুজনকেই সমান গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি। তাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

হাবিবুর রহমান
হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান

আমাদের গার্লস নট ব্রাইডের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বাল্যবিবাহ বন্ধ করা। বাল্যবিবাহ বন্ধের বর্তমান আইনটা অনেক ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি। আইনের ১৯ ধারা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক কথা হয়েছে। এখন আমাদের বিধি নিয়ে ভাবতে হবে। বিধিতে অনেক সংগঠন মতামত দিয়েছে। এ মতামতগুলোকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাল্যবিবাহ বন্ধের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় খুব ভালো কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী হতে পারি। আমাদের দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, ১৯ ধারার শর্তগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে কি না।

অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থ কীভাবে রক্ষা হবে। আবার সর্বোত্তম স্বার্থ কী, এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কিশোরীদের ক্ষমতায়ন হলে তারা নিজেরা অনেক বিয়ে বন্ধ করতে পারে। এমন উদাহরণ আমাদের সমাজে আছে।

মন্ত্রণালয় কিশোরী ক্লাব করার উদ্যোগ নিয়েছে। আরও অনেক সংগঠন আছে, যাদের কিশোরী ক্লাব আছে। এদের অভিজ্ঞতাও আমাদের কাজে লাগানো প্রয়োজন। কিশোরীদের ক্ষমতায়নের একটা প্রধান বাধা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এরা এমন কিছু কাজ করবে, যেন মেয়েদের নিরাপত্তা, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এখনো কিছু মানুষ মনে করে যে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অন্যতম কাজ হলো মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতা তৈরি করা। মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সবাইকে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

হুমায়রা ফারহানাজ
হুমায়রা ফারহানাজ

হুমায়রা ফারহানাজ

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন বিধিমালার বিষয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আইন ও বিধিমালার সঙ্গে আরও অনেক কাজ আছে। প্রতে্যক মেয়ের জন্য জীবন দক্ষতামূলক শিক্ষা জরুরি। এ শিক্ষার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা নিজেরা সচেতন হবে। তারা নিজেরা নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারবে।

তাদের বিয়ে দিতে চাইলে তারা নিজেরাই প্রতিবাদ করতে পারবে। তারা বলতে পারবে, বিয়ে ছাড়া আমরা অনেক কিছু করতে চাই। দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, আত্মীয়স্বজনসহ আশপাশের মানুষের চাপ—বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহ হয়।

আমাদের দেশে উচ্চ আদালতের একটি ভালো গাইডলাইন আছে। এ গাইডলাইনে বলা আছে, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য যেন কমিটি থাকে।

সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে অভিভাবকেরা মেয়েদের বিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান না। এ কারণে অনেক সময় বাবা-মা মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চান না। তাঁদের মধ্যে যৌন হয়রানি হওয়ার ভয় কাজ করে। এসব ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিলে বাল্যবিবাহ কমে আসবে।

তানিয়া হক
তানিয়া হক

তানিয়া হক

বাল্যবিবাহ নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন হলো, বাল্যবিবাহ কেন নারীর ইস্যু হবে? বাল্যবিবাহের অর্থনৈতিক ব্যয় অনেক বেশি। বাল্যবিবাহ একটি চলমান সমস্যা। প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও বাল্যবিবাহ হচ্ছে।

বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত কিছু ইস্যু রয়েছে। এ ইস্যুগুলোকে আমরা তেমন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিই না। এ জন্য বিষয়টি সমাধানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। এখন আমাদের প্রত্যেককে প্রশ্ন করতে হবে আপনার-আমার করণীয় কী?

বাল্যবিবাহ কারা দেন? প্রধানত মা-বাবা। এর সঙ্গে আত্মীয়স্বজনসহ সমাজের কিছু মানুষ থাকে। এখানে মা-বাবার মানসিকতার পরিবর্তন করাতে হবে। সমৃদ্ধ জীবন সম্পর্কে তাদের মধ্যে ভাবনা তৈরি করতে হবে। এ জন্য সরকার, এনজিও সবাই মিলে কাজ করা প্রয়োজন। মা যখন গর্ভবতী থাকেন, তখন এই গর্ভবতী মা ও তাঁর স্বামীকে একসঙ্গে বাল্যবিবাহের ক্ষতিসহ উন্নত জীবন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

ছেলে হোক মেয়ে হোক কীভাবে তার সন্তানকে বড় করবেন, এসব বিষয়ে ধারণা দিলে লিঙ্গবৈষম্য থাকে না। ছেলেমেয়ের বৈষম্যের প্রধান ক্ষেত্র হলো পরিবার। যেকোনোভাবেই হোক পরিবার থেকে ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। ঘরের কাজ মানে নারীর কাজ। এটা আমাদের সমাজে ভীষণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

এমন অনেক পরিবার তাঁদের ছেলের বিয়ের কথা চিন্তা করে এ জন্য যে সংসারে বাড়তি একজন কাজের মানুষের প্রয়োজন। এ ধরনের মানসিকতার অবশ্যই একটা পরিবর্তন প্রয়োজন। আপনার আমার আমাদের সবাইকে এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে।

সৌম্য গুহ
সৌম্য গুহ

সৌম্য গুহ

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত। যাঁরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য কাজ করেন, তাঁরা আবার এই মানুষগুলোর সঙ্গে কাজ করেন না। তাঁরা কারা?

তাঁরা হলেন ঘটক, বিবাহ রেজিস্ট্রার ইত্যাদি। ঘটক বাল্যবিবাহসহ প্রায় সব ধরনের বিয়ের জন্য মেয়ে ও ছেলে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কাজ করেন। রেজিস্ট্রাররা রেজিস্ট্রি করেন। তাঁরা সংখ্যায় কত, এর একটা পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তৈরি হয়ে আছে। তাঁদের সংখ্যা হলো ৭০ থেকে ৭২ হাজার। কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাছে এসে বললেন, তাঁর মেয়ের বয়স ১৯ বছর। কিন্তু দেখে মনে হলো, ১৫ বা ১৬ বছরের বেশি নয়।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কুড়িগ্রামের একজন সরকারি কর্মকর্তা একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন। এটা একটা মোবাইল বেজড অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপ্লিকেশন জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও স্কুল রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে যুক্ত। যেকোনো একটা মোবাইল নম্বর অ্যাপে টাইপ করলেই জানা যাবে সন্তানের বয়স ১৮-এর ওপরে না নিচে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই অফিস মিলে আমরা বিবাহ রেজিস্ট্রার ও ঘটকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। রংপুর বিভাগে এমন ১৩ হাজার মানুষকে ইতিমধ্যে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

খিজির হায়াত খান
খিজির হায়াত খান

খিজির হায়াত খান

কারও ওপর ইসলামি আইন প্রয়োগ হতে হলে তাঁর তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। তাঁকে আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী হতে হবে। তাঁকে মানসিকভাবে পূর্ণবয়স্ক হতে হবে। শারীরিকভাবে পূর্ণবয়স্ক মানুষ হতে হবে। কেউ এই তিন শর্ত পূরণ করতে না পারলে তাঁর ওপর ইসলামি শরিয়াহর নিয়মগুলো প্রযোজ্য হবে না।

ইসলাম কখনো কারও ওপর কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয় না। একজন মানুষ কী গ্রহণ করবে কী বর্জন করবে, এর জন্য বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় কোনো কিছু গ্রহণ করে, তাহলেই সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম।

সাধারণত দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা বিভিন্ন সমস্যার শিকার হয়। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতামূলক কর্মসূচি। ২০১২ সালে ঘটকদের নিয়ে একটা কর্মশালা করেছিলাম। তখন দেখেছি তাঁদের অনেকেই বেশি কিছু জানেন না। তাই সারা দেশে সচেতনতামূলক কর্মশালা করা প্রয়োজন।

বাল্যবিবাহ নিরোধের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যত ইমাম এখানে আসছেন, তাঁরা বাল্যবিবাহ নিরোধ সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছেন। আমরা একটা জরিপে দেখেছি, যেসব ইমাম প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজনও বাল্যবিবাহে অংশ নেননি। আমরা ইমাম সাহেবদের বলেছি, মসজিদে জুমার খুতবার আগে বাল্যবিবাহ নিরোধ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

নেহা কাপিল
নেহা কাপিল

নেহা কাপিল

আমার মনে হয়েছে যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক প্রথা। সামাজিকভাবে এটা অনেক ক্ষেত্রে গৃহীত হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হলে কমিউনিটিতে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ছেলেমেয়েদের সচেতন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে অনেক উদ্যোগ নিতে হবে। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রধানত, পরিবার থেকে বাবা-মা বাল্যবিবাহের সিদ্ধান্ত নেন। সবক্ষেত্রে দরিদ্র বাবা-মা ইচ্ছে করে মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেন, তা নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন। কী কারণে দরিদ্র বাবা-মা তাঁদের মেয়ের বাল্যবিবাহ দেন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যত দিন পর্যন্ত এসবের সমাধান হবে না, তত দিন বাল্যবিবাহ চলতে থাকবে। নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা প্রয়োজন। এর জন্য গবেষণা প্রয়োজন। কৌশলগত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। গ্রাম-শহর সবক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। কমবেশি প্রায় সবাই জানে বাল্যবিবাহ অপরাধ। এর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

সত্যিকার অর্থে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হলে মেয়েদের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন হবে।

মালেকা বানু
মালেকা বানু

মালেকা বানু

বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সরকার পুরোনো আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পরামর্শ ও সুপারিশ চেয়েছে। আমরা সুপারিশ দিয়ে সরকারের সঙ্গে একমত হয়েছি। কিন্তু আইন হওয়ার পর দেখলাম যে সেখানে একটি বিশেষ ধারা যুক্ত হয়েছে। এই ধারার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারিনি।

কোনো সন্দেহ নেই, দেশে ব্যাপকভাবে শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু একটা বিষয় দেখতে হবে, মেয়েরা যে শিক্ষা গ্রহণ করছে, সেটা তার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে কি না। তাকে ক্ষমতায়ন করছে কি না। সমাজে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করছে কি না। মেয়েদের শিক্ষা যদি এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখতে সহায়তা না করে, তাহলে এ শিক্ষা কতটুকু কার্যকর, সেটা গভীরভাবে ভাবতে হবে।

বাল্যবিবাহ নিরোধ করতে হলে ছেলেমেয়েদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আন্দোলনের জন্য এটা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অধিকাংশ স্কুলে এটা পড়ানো হয় না। কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন করতে হলে এটা আমাদের শিক্ষার মধ্য দিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্রীয় নীতিমালার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। সব ক্ষেত্রে এর একটা প্রতিফলন না থাকলে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা আসবে না।

সারা হোসেন
সারা হোসেন

সারা হোসেন

আজকের আলোচনার শিরোনাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আপনার-আমার সবার করণীয় রয়েছে। সরকার বা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এককভাবে এত বড় সমস্যার সমাধান করা সত্যি কঠিন।

এই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে একটি উদ্যোগ নিয়েছি, যার নাম ‘সখী’। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ব্লাস্ট, মেরি স্টোপস, উইমেন হেলথ কোয়ালিশন ও উইক্যান। এর মাধ্যমে ঢাকা শহরে ১৫টি জায়গায় কিশোরীদের নিয়ে কাজ করেছি। এ কাজের মধ্যে ছিল ক্লাসের মাধ্যমে কিশোরীদের আইনি অধিকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।

এসব ক্লাসের পাশাপাশি মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের জীবনদক্ষতামূলক কাজ শিখছে। তারা কম্পিউটারে কোডিং ও ইলেকট্রনিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, কারাতেও শিখছে ইত্যাদি। ছোট ব্যবসা কীভাবে শুরু করতে হবে, সে ধারণাও এখানে পাচ্ছে।

তাদের জন্য চাকরি মেলা হচ্ছে। ফলে যাঁরা চাকরি দেবেন, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমরা মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মহাখালী—এসব এলাকায় কাজিদের সঙ্গে ও স্থানীয় থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা অনেক সময় দিই নতুন আইন সংস্কারের প্রক্রিয়ায়, কিন্তু কার্যকর করার জন্যও কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। আইন করার পর এ পদক্ষেপগুলো তেমনভাবে নেওয়া হয় না। স্থানীয়ভাবে যাঁরা আইন প্রয়োগ করবেন, তাঁরা অনেক সময় আইন সম্পর্কে অবগত থাকেন না।

আমরা কাজ করার সময় লক্ষ করেছি, অনেকেই নতুন আইন হওয়ার পরে এর ১৯ ধারা ও ‘ব্যতিক্রম’ নিয়ে কথা ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন—১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে। তখন আমার সহকর্মীদের তাদের বোঝাতে হয়েছে যে তারা যেভাবে ভাবছে, বিষয়টি মোটেই তেমন নয়।

ব্যতিক্রম নিয়ে দুটা জরুরি কথা বলতে চাই। এখনো যেটাতে আইন সংশোধন ও বিধি তৈরি করার সুযোগ আছে। প্রথমত ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলে, সেই বিয়েকে বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য না করার জন্য যে ক্ষমতা ১৯ ধারায় আদালতের কাছে দেওয়া হয়েছে, সেটা কোনোভাবে সেই মেয়ের সম্মতি ছাড়া প্রয়োগ করা উচিত না। মেয়ের সম্মতি না থাকলে অবশ্যই সেই বিয়েকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, যেই মেয়ের বা ছেলের বাল্যবিবাহ হয়েছে, তার প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার পর অবশ্যই সুযোগ থাকা উচিত সেই ‘বিয়েকে’ বাতিল ঘোষণা যাতে হয়, সেই বিষয়ে আদালতের কাছে ঘোষণা চাওয়া। এই ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে রয়েছে। আইনি প্রতিকার পাওয়ার কিছু সুযোগ আমাদের করে দিতে হয়। এ জন্য সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম, মহিলা পরিষদ, ব্লাস্টসহ অনেকে এ ব্যাপারে কাজ করছে।

আমরা বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি এবং পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছি। ১০৯ নম্বরে ফোন করলে বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে দ্রুত চলে যাওয়া, তার পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি কাজের জন্য যে জনবলের প্রয়োজন, বাস্তবে সেটা নেই। বাল্যবিবাহ রোধ ও বিচার করতে হলে সরকার, বেসরকারি সংগঠন ও পেশাজীবীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

পলাশ দাশ
পলাশ দাশ

পলাশ দাশ

বাল্যবিবাহ নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা ও কার্যক্রম খুবই শক্তিশালী। এটা আমাদের অনেক আশাবাদী করে তোলে।

কিন্তু যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল, তেমন কিন্তু হয়নি। এক হাজার পৃষ্ঠার একটি বইয়ে মাত্র একটা প্যারাগ্রাফে বাল্যবিবাহ নিয়ে লেখা আছে। এ পরিকল্পনায় বলা আছে, ২০২০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

বাল্যবিবাহ নিরোধের জন্য যদি অনেক বেশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে আর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যদি এত কম উল্লেখ থাকে, তাহলে কীভাবে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ভূমিকা নিতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের জুন মাসে এসডিজির ওপর একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে সরকার বলেছে, বাল্যবিবাহ নিরোধ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এখানে আরও বলা হয়েছে যে বাল্যবিবাহ দূর করতে না পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূর করা যাবে না।

বাল্যবিবাহ নিরোধের জন্য অনেক বিষয় প্রত্যক্ষ এবং অনেক বিষয় পরোক্ষভাবে জড়িত। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এসব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে। আপনার–আমার প্রত্যেকের বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করতে হবে।

মাহমুদা রহমান খান
মাহমুদা রহমান খান

মাহমুদা রহমান খান

আমরা জানার চেষ্টা করেছি কী কী কারণে বাল্যবিবাহ হয়। বাল্যবিবাহের একটি প্রধান কারণ স্কুল থেকে ঝরে পড়া। এ জন্য আমরা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে ২৯০টি স্কুলে পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে কাজ করেছি।

আমাদের ক্যাম্পেইনের নাম ছিল বেস্ট স্কুল ফর গার্লস। এ ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক, ম্যানেজমেন্ট কমিটি, কমিউনিটিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ কাজে আমরা ইতিবাচক ফল পেয়েছি।

এসব স্কুলে আমাদের কাজ করার আগে ঝরে পড়ার হার ছিল ২ দশমিক ১। আমাদের কাজের পর গত তিন বছরে এটা নেমে এসেছে ১ দশমিক ৬ শতাংশে। এখানে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। এটা হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আমরা এটা করেছিলাম পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে। এটাকে এখন বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি। কেবল ঝরে পড়া রোধ করলে হবে না। কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ভবিষ্যতে এসব মেয়ের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের জন্য প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।

এসব বিষয় নিয়ে সাধারণত সরকার, এনজিও কাজ করে। কিন্তু আমাদের পাইলট প্রকল্পের সঙ্গে প্রাইভেট সেক্টর ভালো ভূমিকা রেখেছে। তাদেরও কাজে লাগাতে হবে।

আবুল হোসেন
আবুল হোসেন

আবুল হোসেন

আমাদের আইনটি অত্যন্ত যুগোপযোগী একটি ভালো আইন। কিন্তু এর তেমন প্রচার নেই। প্রচারের কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

বিভিন্ন এনজিও বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথকভাবে কাজ করছে। এসব কাজ কীভাবে দেশব্যাপী সমন্বিতভাবে করা যায়, সেটা ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা দেব। অনেক মন্ত্রণালয়, যেমন স্বরাষ্ট্র, তথ্য, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া—এসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) সই করা আছে। আমরা সমন্বিতভাবে যেকোনো উদ্যোগ নিতে পারব।

শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত আমাদের একধরনের যোগাযোগ আছে। এর সঙ্গে যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়, তাহলে কাজগুলো আরও ফলপ্রসূভাবে হবে। আমরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বলি। কিন্তু সবার জন্য এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, যেখানে সবাই অন্তত মাসে একবার আলোচনা করতে পারি। এবং কীভাবে এ ক্ষেত্রে আরও বেশি কাজ করা যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

আমরা নারীদের সহায়তার জন্য আগের নম্বর পরিবর্তন করে এখন ১০৯ করেছি। অনেকে নম্বরটি জানে না। এটা গণমাধ্যমে প্রচার করা প্রয়োজন।

নাছিমা বেগম: আমরা সবাই মিলেই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কাজটিকে এগিয়ে নিতে চাই। এ জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতেও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।

আজকের আলোচনায় জীবনদক্ষতা, কারিগরি শিক্ষা, আনপেইড ওয়ার্ক মূল্যায়ন, মানসিকতার পরিবর্তন, মেয়েদের সম্পদে পরিণত করা, হাইকোর্টের রায় কার্যকর করা, বাল্যবিবাহের ডেটাবেইস তৈরি করা, মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করা ইত্যাদি বিষয় এসেছে। এসব বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করি। এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বাল্যবিবাহের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আসেনি বলে একজন বলেছেন। আমি মনে করি, বিষয়টি কীভাবে এসেছে, সেটা বড় কথা নয়। বিষয়টিতে কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটা মূল মূল কথা। তা ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কাজ কোনো একটি একক মন্ত্রণালয় করবে না। এর সঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয় জড়িত। সবাই মিলেই কাজটি করা হবে।

আগে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি জেলা নিয়ে কাজ করা হতো। তখন অধিকাংশ কাজই মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। এখন আমাদের পরিকল্পনাগুলো যেন দেশব্যাপী চলতে পারে, সেভাবে পরিকল্পনা করি। প্রধানত অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিবাহ হয়। এ জন্য দেশের সব উপজেলায় দরিদ্র নারীরা যেন আয় করতে পারেন, এমন কর্মসূচি নিয়েছি। এ কর্মসূচিতে শিক্ষা ও বয়সের কোনো ব্যাপার নেই।

দেশের ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন ও ৩৩০টি পৌরসভার সব জায়গায় একটি কিশোর-কিশোরী ক্লাব হবে। এখানে এরা যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পাবে। আমরা নারীর উন্নয়নে সম্ভাব্য যা করা প্রয়োজন, তার প্রায় সবই করছি। এর ফলে ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে।

আব্দুল কাইয়ুম: অনেক গুরুত্বপূর্ণ িবষয় আলোচনায় এসেছে। সচিব মহোদয় আলোচনার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে যেন মেয়েরা ঝরে না পড়ে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা প্রয়োজন। কারণ, এর সঙ্গে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক রয়েছে।

আমাদের পত্রিকায় এসব বিষয়ে অনেক লেখা হয়। ভবিষ্যতে আরও বেশি করে লেখার চেষ্টা করব। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

যাঁরা অংশ নিলেন

নাছিমা বেগম         :  এনডিসি, সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়

আবুল হোসেন        :  প্রজেক্ট ডিরেক্টর, মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন

রোশনি বাসু          :  জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট, ইউনিসেফ

তানিয়া হক           :  উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারা হোসেন         :  অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট

খিজির হায়াত খান   :  সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মাহমুদা রহমান খান  :  সিনিয়র প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট, ইউএসএআইডি

মালেকা বানু          :  সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

নেহা কাপিল         :  প্রধান, কমিউনিকেশন ফর ডেভেলপমেন্ট, ইউনিসেফ

হুমায়রা ফারহানাজ   :  ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার, জেন্ডার, অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ, ইউএনএফপিএ

হাবিবুর রহমান       :  প্রোগ্রাম হেড, জেন্ডার অ্যান্ড ডাইভার্সিটি, ব্র্যাক

সৌম্য গুহ            :  ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল

পলাশ দাশ           :  প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট, ইউএন উইমেন

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম        :  সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো