জঙ্গিদের আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো

১৭ আগস্ট ২০০৫। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সেদিন যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল, তাতে জেএমবির সক্ষমতার এক নতুন চিত্র আমাদের সামনে এসেছিল। এরপর বেশ কয়েক বছর এ ধরনের জঙ্গি সংগঠনগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

২০১৪ সালের পর থেকে আমরা জঙ্গিবাদের এক নতুন রূপ দেখলাম। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ দেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের হুমকি অনেকটাই ব্যাপক। ২০০৫-এর সঙ্গে যদি আমরা তুলনা করি, তাহলে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ। যেভাবে জেএমবি ও আনসার আল ইসলামসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন বর্তমানে ইন্টারনেট ও অন্যান্য সাইবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারছে, ২০০৫-এ এমনটা ছিল না।

এ ছাড়া আত্মঘাতী হামলা, জঙ্গিবাদে নারীদের অন্তর্ভুক্তি এবং নতুন উপায়ে বিস্ফোরক তৈরির ক্ষমতা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো অর্জন করেছে। এটা অবশ্যই জঙ্গিবাদের হুমকিকে অনেকাংশে বাড়িয়েছে।

গত এক দশকে জঙ্গিবাদের হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের যে লড়াই তা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা এক লড়াই। এই লড়াইয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সত্যিকারের সাফল্য অর্জন করতে চাইলে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে। জঙ্গিদের আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, দিন শেষে এটা একটা আদর্শগত লড়াই। এখানে বিজয় লাভ করতে হবে।

জঙ্গিবাদের হুমকি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, সে বিষয়ে আরও ব্যাপক পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো সব সময় সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আজ থেকে আরও এক দশক বা এক যুগ পরে যখন ১৭ আগস্টের দিকে ফিরে তাকাব, তখন আমরা যেন দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আমরা জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে সম্পূর্ণরূপে উৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছি।