তরুণদের বানাতে হবে শান্তির দূত

প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা বলেছেন, দেশের বিপুল যুবসমাজকে অন্ধকারে রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সম্পৃক্ত করতে হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। তরুণদের বানাতে হবে শান্তির দূত।

আজ বুধবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সমাজ গঠনে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কিংডম অব নেদারল্যান্ডস  ও ইউনাইট ফর বডি রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ বা ইউবিআরের সহযোগিতায় এ বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার।

সূচনা বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশ ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সে লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
গুণগত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী লেখাপড়াকে প্রায়োগিক জীবনে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। একশ্রেণির তরুণের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে বীরেন শিকদার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না বলেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনোয়ারুল করিম বেকারত্ব দূর করতে এই অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি জানান, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৭৪টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তরুণদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তবে অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ মডেলের আধুনিকায়ন দরকার, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক একমত প্রকাশ করেন।
গোলটেবিল বৈঠকের শুরুর দিকে ‘সমাজগঠনে তরুণদের কার্যকর অংশগ্রহণ এবং আমাদের ভূমিকা’ বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন ইউবিআরের দলপ্রধান আয়েশা সিদ্দিকা। এর সমাপনীতে অভিমত প্রকাশ করা হয়, বোঝা ও জানা তরুণেরাই চেঞ্জমেকার হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই সব সময় তরুণদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। তাদের কাজকে সম্মান করতে হবে।
স্কুলের ছেলে ও মেয়েদের বৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন সমন্বয় আনা দরকার, এমন অভিমত দেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, বৃত্তি দেওয়ার কারণে এখন ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা স্কুলে বেশি আসছে। এখন এই বৃত্তি সমান সমান দেওয়ার সময় এসেছে।
আলোচনায় বক্তাদের অনেকেই কিশোর, তরুণদের প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখন স্কুলে ছেলে, মেয়ে ও শিক্ষকদের পৃথক শৌচাগার থাকবে, এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে কিছু কিছু এনজিও এমনভাবে গবেষণা করে, তাতে সরকার বিব্রত হয়।

প্রথম আলোর আয়োজনে এবং কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস ও ইউনাইট ফর বডি রাইটসের সহযোগিতায় ‘সমাজ গঠনে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। ছবিটি বুধবার প্রথম আলোর কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম
প্রথম আলোর আয়োজনে এবং কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস ও ইউনাইট ফর বডি রাইটসের সহযোগিতায় ‘সমাজ গঠনে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। ছবিটি বুধবার প্রথম আলোর কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন, আমরা বলি, একটি পরিবারে এতগুলো মুঠোফোন আছে। কিন্তু আমরা বলি না কতটি পরিবারে উন্নত শৌচাগার আছে, পরিবারের মেয়েরা ঠিকমতো স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সুযোগ পায় কি না।
আলোচনায় তরুণদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন যুব ফোরামের সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদ নাজিয়া বক্তব্য দেন। প্রসেনজিৎ দাস তাঁর জানা একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। যুব ফোরামেরই সদস্য একটি মেয়ের পরীক্ষায় বসার পরপর পিরিয়ড শুরু হয়। বিষয়টি সে তার শিক্ষিকাকে জানালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তিন ঘণ্টা তাকে এভাবে বসে থাকতে হয়। প্রসেনজিৎ দাসের অভিমত, শিক্ষকদের আরও তরুণবান্ধব মানসিকতার হতে হবে।
প্রসেনজিৎ প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সরকার যদি যুব ফোরামের মতো সংগঠনকে পাশে রাখে, তবে তাদের কাজ ভালো হবে।
নাহিদ নাজিয়া বলেন, তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিবাচক কিছু ছড়াতে পারলে পৃথিবী আলো দেখবে। তাঁর কথা, ‘আজ শিশুরা গান শিখতে পারছে না। আবৃত্তি করতে পারছে না। মা-বাবারা শুধু বলেন, পড় পড় পড়।’

‘সমাজ গঠনে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা। ছবি: আবদুস সালাম
‘সমাজ গঠনে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা। ছবি: আবদুস সালাম

একই ধরনের মত প্রকাশ করে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো. আতিকুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাহিত্য, গানবাজনার ব্যবস্থা থাকা দরকার। ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে যুবসমাজ বিপথগামী হবে না।
দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক দিবালোক সিংহ শিক্ষা ও সবার জন্য স্বাস্থ্যের মতো কর্মসূচিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা পেলেই সমাজগঠনে তরুণেরা ভূমিকা রাখতে পারে।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের এসআরএইচআর বিভাগের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণগুলো আধুনিকায়ন করা দরকার। তিনি বলেন, নারীদের প্রশিক্ষণের কথা এলেই সেলাই শেখানোর কথা আসে। এসব প্রশিক্ষণ বাজারের চাহিদার কথা চিন্তা করে ঠিক করতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফপিএবি) নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম মতিউর রহমান, পপুলেশন কাউন্সিলের এ দেশীয় পরিচালক ওবায়দুর রব, আরএইচএসটিইপির নির্বাহী পরিচালক কাজী সুরাইয়া সুলতানা, পপুলেশন সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (পিএসটিসি) নির্বাহী পরিচালক নুর মোহাম্মদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নিশাত ফাতিমা রহমান, মেরি স্টোপসের মহাব্যবস্থাপক ইমরুল হাসান খান, ইউবিআরের কর্মসূচি সমন্বয়ক শার্মিন ফরহাত ওবায়েদ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রদীপ দত্ত।
গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।