ভবিষ্যতের বাংলাদেশ, আমাদের আশা ও প্রত্যাশা

৫ আগস্ট ২০১৭, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ: আমাদের আশা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

* তরুণদের রাজনীতিতে যুক্ত করার জন্য উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করতে হবে

* তরুণদের মতপ্রকাশের সুযোগ িদতে হবে

* তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন

* তরুণদের জন্য সহশিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ আরও বাড়াতে হবে

* মফস্বল ও গ্রামের তরুণদের জন্য সমান সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা করা দরকার

* সরকারি নীতি িনর্ধারণের ক্ষেত্রে তরুণদের অংশগ্রহণ িনশ্চিত ও মতামতকে প্রাধান্য িদতে হবে

* তরুণদের মধ্যে প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য কাজ করা জরুরি

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম: গত বছর প্রথম আলো ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে। আমরা মনে করি, ১৮ বছর তারুণ্যের একটা শক্তি। আমরা চাই আমাদের পত্রিকার মাধ্যমে যেন এই তারুণ্যের শক্তিকে আরও প্রসারিত করতে পারি। আর এই চিন্তা থেকেই আমরা আমাদের দেশের তরুণদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানতে চাই। তঁারা দেশ সম্পর্কে কী ভাবছেন, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ নিয়ে কী ভাবছেন, তা আমরা জানতে চাই। এই তরুণদের নেতৃত্বে আজ থেকে ১০ বা ১৫ বছর পর উন্নয়নের পথে দেশ কত দূর এগিয়ে যাবে, আমাদের সেই স্বপ্ন নিয়ে আলোচনার জন্য মূলত তরুণদের অংশগ্রহণে আজকের এই গোলটেবিল বৈঠক।

মুনীরুজ্জামান: বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ তরুণ এবং এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। এককথায় বলতে গেলে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সম্পূর্ণভাবে তরুণসমাজের ওপর। কাজেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের কী রূপরেখা হবে, সেটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের তরুণসমাজ। বাংলাদেশের তরুণদের ওপর আমাদের যথেষ্ট আশা, প্রত্যাশা ও আস্থা রয়েছে।

আসিফ মোহাম্মদ শাহান
আসিফ মোহাম্মদ শাহান

আসিফ মোহাম্মদ শাহান: তরুণদের চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রথম আলো যে জরিপটি করেছে, সেখানে একটি বিষয় উঠে এসেছে যে আমাদের দেশের তরুণেরা অনেক বেশি রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতির ধারাটি আমাদের দেশের তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তরুণদের দোষারোপ করার কোনো অবকাশ নেই। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ তঁাদের আগ্রহ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কিন্তু একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমাদের সামাজের কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। আমরা বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিতে চাই, সমাজের যত উন্নয়ন করতে চাই, রজনীতির বাইরে গিয়ে তা কখনোই সম্ভব হবে না। আর সেই রাজনীতিতে তরুণদের সরব অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক বলে আমি মনে করি।

ইরিনা মাহমুদ
ইরিনা মাহমুদ

ইরিনা মাহমুদ: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। আমাদের পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা খাতে অর্থায়নসহ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে, কিন্তু আরও উন্নতির জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

কয়েক বছর পরপরই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যক্রমে কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা আমাদের বড় একটা অর্জন। তারপরও আমাদের পাঠ্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের গবেষণার মাধ্যমে একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।

আর এই বিষয়গুলোর উন্নয়ন করতে হলে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা খাতে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের শিক্ষা খাতে অর্থায়ন অনেক কম। অর্থায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের অবকাঠামোকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন আমরা আগামী ১৫ বা ২০ বছর পর বিশ্বায়নের প্রতিকূলতাগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।

সজল কুমার দাশ
সজল কুমার দাশ

সজল কুমার দাশ: বাংলাদেশে যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা বর্তমানে রয়েছে, তা একেবারেই বড় শহরকেন্দ্রিক। ছোট শহর, মফস্বল শহর ও গ্রামে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট ব্যবস্থা একেবারেই নেই। মোবাইল অপারেটরগুলো স্বল্প পরিসরে হয়তো ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে, কিন্তু তা একেবারেই অপ্রতুল। দেশের সর্বত্র নির্ভরযোগ্য ও সুলভ ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা দরকার।

আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মতাদর্শের সংঘর্ষ আমরা লক্ষ করছি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিষয়টি বেশি দেখা যাচ্ছে। আমাদের অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা আরও বৃদ্ধির জন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

সিলভিয়া রোজারিও
সিলভিয়া রোজারিও

সিলভিয়া রোজারিও: নারীদের বা মেয়েদের সমাজে অবদান বা সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য অনেক গবেষণা হয়, অনেক কাজ হয়। কিন্তু কত ভাগ মেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর যে বিষয়ে সে উচ্চশিক্ষা নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে বা অন্য কোন ক্ষেত্রে কাজ করছে, তা নির্ণয়ের জন্য কোনো গবেষণা বা কোনো জরিপ হয় না। যঁারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন না, তঁারা কেন করছেন না, সে বিষয়েও কোনো কাজ হয় না।

বলা হয়ে থাকে, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু এখনো প্রতিদিনই আমাদের মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, এমনকি নিজের পরিবারেও সমালোচনামূলক মন্তব্যের সম্মুখীন হতে দেখি। স্বাধীনভাবে আমরা মেয়েরা এখনো কাজ করতে পারি না। মেয়েদের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য আমাদের শিক্ষা, বিশেষত মেয়েদের শিক্ষার দিকে আরেকটু নজর দেওয়া দরকার।

আশরাফুল ইসলাম
আশরাফুল ইসলাম

আশরাফুল ইসলাম: আমাদের তরুণেরা রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এর পেছনে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের একটা ব্যর্থতা আছে। আমাদের অতীতের ছাত্রনেতারা ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ), ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের মতো ছাত্রসংগঠনগুলোর মাধ্যমে রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে যখন আমরা গণতন্ত্রে ফিরলাম, তখন এই সংগঠনগুলো বন্ধ হয়ে গেল। ফলে তরুণেরাও রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়লেন।

আমাদের তরুণেরা দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আমাদের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেন চাকরিবিহীন উন্নয়ন না হয়ে যায়। জরিপে দেখা গেছে, অনেক তরুণ ভবিষ্যতে চাকরি পাবেন কি না, সেটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ফাহমিদা ফাইজা
ফাহমিদা ফাইজা

ফাহমিদা ফাইজা: আমাদের দেশে তরুণদের মতামতকে তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের তরুণদের বড় কোনো সম্মেলনে বা বড় পরিসরে নিজেদের কথা বলার জন্য বাইরের দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। সরকারি, বেসরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সভা ও সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের নিজেদের মতপ্রকাশের মঞ্চ তৈরি করে দিতে হবে।

বাংলাদেশে তরুণদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য ও উপাত্ত আমাদের কাছে নেই। কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে উপাত্ত পরিবেশন করতে হলে আমাদের পত্রিকার সংবাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকারিভাবে কোনো তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা আমাদের নেই।

তাই আমাদের দেশের তরুণদের ক্ষমতা ও সক্ষমতাকে পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে হলে তঁাদের আরও সংগঠিত ও উৎসাহিত করতে হবে।

এ কে এম তওসীফ তানজিম আহমেদ
এ কে এম তওসীফ তানজিম আহমেদ

এ কে এম তওসীফ তানজিম আহমেদ: আমাদের যে বিপুল তরুণ জনসংখ্যা রয়েছে, তাদের আমরা কাজে লাগাতে পারি না। ছোট একটা-দুটো সাফল্যে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে যাই। একটা গণজাগরণ মঞ্চ, একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জয়, একজন তরুণ উদ্যোক্তার সাফল্যে আমরা কেন সন্তুষ্ট থাকব? ১৬ কোটি মানুষের দেশে আমাদের এমন কয়েক হাজার সাফল্য থাকার কথা।

রাজনীতিতে অনীহার কথা বলা হচ্ছে, আমি যদি আজ রাজনীতি করতে চাই, তাহলে আমি কীভাবে ঢুকব সেখানে? সুস্থভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ কোথাও নেই—না আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে, না আমার এলাকায়, না শহরে। আমি নিজেই মাঝেমধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি যে আমি আমার সমাজ বা আমার দেশের জন্য কিছু করতে চাই, কিন্তু সেটা আমি কীভাবে করব, আমি কোন পথে যাব?

সাকিয়া হক
সাকিয়া হক

সাকিয়া হক: নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্য নিবিড়ভাবে জড়িত। নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ। ১৯৯০ সালে প্রতি লাখ জীবিত শিশুর জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৫৭৪ আর ২০১৭ সালে এই হার এসে দঁাড়িয়েছে ১৭৬ জনে। মানে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সালের তুলনায় ৭০ শতাংশ কমেছে। এই তথ্য দেখেই আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলি যে নারীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু আমরা এটা কখনো ভাবি না যে ২০১৭ সালে এসে যখন বিশ্ব এতটা এগিয়ে গেছে, তখন কেন আমাদের দেশে এখনো প্রতি লাখে ১৭৬ জন মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন?

আবু সাঈদ জুবায়ের
আবু সাঈদ জুবায়ের

আবু সাঈদ জুবায়ের: আমাদের তারুণ্যের শক্তিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই আমাদের সমাজের বিভিন্ন অংশের যে তরুণেরা আছেন, তঁাদের একত্র করে সংগঠিত করতে হবে। বুয়েটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যঁারা পড়ছেন, শুধু তঁারাই কিন্তু আমাদের তরুণ নন। তারুণ্যের বিরাট একটা অংশ হয়তো দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ছেন না। তারুণ্যের এই বিশাল অংশকে বাদ দিয়ে আমাদের উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

আজ যে তরুণেরা মাদ্রাসায় পড়ছেন, মফস্বলের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছেন, তিনি হয়তো বুয়েট বা মেডিকেলে পড়া একজন তরুণের মতো দক্ষ নন অনেক বিষয়ে, কিন্তু তঁার তারুণ্যের জায়গাটি এক। তাই আমাদের পিছিয়ে পড়া তরুণদের সামনে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। তরুণদের বিভিন্ন সম্মেলন ও প্রতিযোগিতা নিয়ে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে যেতে হবে।

মুশফেকা ইসলাম
মুশফেকা ইসলাম

মুশফেকা ইসলাম: আমি গণমাধ্যমের প্রেক্ষাপট থেকে নারীর অন্তর্ভুক্ত ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি তুলে ধরতে চাই। বাংলাদেশে আমরা এখন টেলিভিশন চ্যানেল খুললেই দেখতে পাই নারী সংবাদ উপস্থাপন করছেন, নারী সাংবাদিক প্রতিবেদন করছেন। তাতে আমাদের মনে হতে পারে যে গণমাধ্যমে নারীর উপস্থিতি বেড়েছে। কিন্তু গ্লোবাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের একটি জরিপে দেখা গেছে যে গত ১০ বছরে নারী সাংবাদিকের সংখ্যা কমে গেছে।

গণমাধ্যমে একজন নারীর কাজ করার ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হলো এখানে চাকরির নমনীয়তাটা নেই। একজন নারীকে সারা দিন সাংবাদিকতা করে তঁার সংসারে সময় দিতে হয়, পরিবারে সময় দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তঁার জন্য এই চাকরিটি অবশ্যই নমনীয় হতে হবে।

সাব্বির আহমেদ জুবাইর
সাব্বির আহমেদ জুবাইর

সাব্বির আহমেদ জুবাইর: গত বছর গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর সরকার দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ দুটি ভিন্ন বিষয়।

অভিযানের মাধ্যমে হয়তো আমরা জঙ্গিবাদ থেকে সাময়িকভাবে মুক্ত হতে পেরেছি, কিন্তু উগ্রবাদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাদের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

উগ্রবাদের কারণগুলো চিহ্নিত করে সেই কারণগুলো নির্মূল করতে হবে। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তরুণদের দলে আকৃষ্ট করতে অনলাইনে বিভিন্ন প্রচারণা চালায়। আমাদের সেই প্রচারণার পাল্টা প্রচারণার মাধ্যমে তরুণদের সচেতন করতে হবে। তরুণেরা কেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন, তা তরুণদের সঙ্গে কথা বলে খুঁজে বের করতে হবে। তরুণদের সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ িসদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং কর্মকাণ্ডে যুক্ত না করলে তঁাদের মধ্য থেকে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ নির্মূল করা যাবে না।

শাহরিমা তানজিনা
শাহরিমা তানজিনা

শাহরিমা তানজিনা: বাংলাদেশের আইনপ্রণেতাদের মাত্র ২০ শতাংশ নারী। অর্থাৎ আমাদের দেশের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিন্তু নারীর অধিকারের সমতা রক্ষা করা হচ্ছে না।

বর্তমানে আমরা দেখছি যে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মামলার মাত্র ৩ শতাংশের রায় দিয়েছেন আমাদের মহামান্য আদালত এবং তার মধ্যে দশমিক ৪৯ শতাংশের সাজা হয়েছে। লম্বা বিচারিক প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মামলাগুলো দ্রুত বিচারের জন্য একটি আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

রকিবুল হাসান
রকিবুল হাসান

রকিবুল হাসান: আমরা সবাই একটা বিষয় লক্ষ করি যে আমাদের দেশে তরুণদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কিন্তু সেখানে তরুণদের কোনো মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে না।

আমাদের দেশের ইংরেজি মাধ্যম ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সমাজ থেকে অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন থাকে। তারা আমাদের শিল্প–সংস্কৃতি থেকেও অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন। আর এর ফলেই তারা জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের ঝুঁকিতে  সবচেয়ে বেশি থাকে।

চার দশক আগে যেসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, আজ ২০১৭ সালে এসে সেই প্রতিবন্ধকতা একটুও কমেনি। আমাদের এখন সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সেই একই রকমের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হবে। তরুণদের প্রতিদ্বন্দ্বী তরুণেরাই। আমি হয়তো অনেক প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা করছি, একই সময়ে আমার অন্য একজন তরুণ বন্ধু হয়তো রক্ষণশীল উগ্রবাদী চিন্তা করছেন।

সাউসান সুহা
সাউসান সুহা

সাউসান সুহা: আমাদের সমাজের মূলধারার সঙ্গে তরুণদের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে তঁাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়েছে। তরুণদের মধ্যে উগ্রবাদ আসে একাকিত্ব থেকে। অন্যের ভিন্নমত সহ্য করতে না পারার বিষয়টি তৈরি হয় ভিন্নমত সম্পর্কে কোনো প্রকার ধারণা না থাকার কারণে।

আমাদের দেশে তরুণদের জন্য সহশিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ খুব কম। সমাজের প্রভাবশালী বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের কাছে নিজেদের কথা জানানোর সুযোগ তরুণেরা একেবারেই পান না। আমরা তরুণেরা যদি নিজেদের কথা তুলে ধরার জায়গাটা পাই, তাহলে দেশের তরুণদের মধ্যে মৌলবাদ বা উগ্রবাদ একেবারে নিমূর্ল করা সম্ভব না হলেও তা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আরিফ আনজুম দীপ
আরিফ আনজুম দীপ

আরিফ আনজুম দীপ: বিভিন্ন সময়ে বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক মেধা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে আমাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমি বলব যে আমাদের চিন্তাধারাটাই ভুল। আমাদের দেশের তরুণেরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের তৈরি করছেন না। লেখাপড়া শেষ করে তরুণেরা চাকরির পেছনে ছুটছেন, কিন্তু তঁারা এটা ভাবছেন না যে নিজে একটা ছোট স্টার্টআপ গড়ে তুলে তঁারা নিজেদেরসহ আরও দশজনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।

আমাদের পরিবার, শিক্ষক এমনকি সমাজ আমাদের ভালো চাকরির পেছনে ছুটতে উদ্বুদ্ধ করে, কিন্তু কোথাও আমাদের তরুণ উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করা হয় না। আমাদের সরকারও দেশে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে তেমন কাজ করছে না।

আমরা সব সময় বলি যে দেশ আমাদের কী দিয়েছে। কিন্তু আমরা এটা চিন্তা করি না যে আমরা দেশকে কী দিয়েছি বা দিচ্ছি। আমাদের প্রতি যেমন দেশের দায়িত্ব রয়েছে তেমনি আমাদেরও দেশের প্রতি করণীয় রয়েছে।

লামিয়া মোহসীন
লামিয়া মোহসীন

লামিয়া মোহসীন: আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে আমাদের মানবসম্পদে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ওপর অনেক বেশি জোর দিয়েছে। এই কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করতে হবে এবং এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন আসলেই হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার কথা অনেকেই বলেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন তরুণের পক্ষে একটা ব্যবসা শুরু করে তা চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকগুলো যদি তরুণ উদ্যোক্তাদের দিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তরুণ উদ্যোক্তারা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত হবেন।

ফাতিমা তুজ জোহরা
ফাতিমা তুজ জোহরা

ফাতিমা তুজ জোহরা: আমরা ১৫ বছর ধরে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এই ১৫ বছরে আমরা একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষ তাদের দারিদ্র্যের কারণে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, তারা ধরেই নিচ্ছে যে সেগুলো তাদের কপালে নেই। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এবং তাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ১৫০ টাকা। আমরা যখন তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করতে যাই, তখন আমরা হয়তো কিছু অনুদান দিয়েই চলে আসি। আমরা কখনো এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করি না যে কেন তারা দরিদ্র, তাদের দারিদ্র্যের মূল কারণটা কী।

সোহারা মেহরোজ শাচী
সোহারা মেহরোজ শাচী

সোহারা মেহরোজ শাচী: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু কাজ হচ্ছে।

কিন্তু আমাদের দেশের তরুণ, বিশেষ করে যারা এখন স্কুল বা কলেজে পড়ছে, তারা জলবায়ু পরিবর্তন কী, সে বিষয়ে কিছুটা জানে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিরাট প্রভাব এবং এই প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় কী, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা একেবারে নেই বললেই চলে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করার সময় এখনই।

এস আই এম শাদমান শেখ
এস আই এম শাদমান শেখ

এস আই এম শাদমান শেখ: আমরা প্রতিদিন হাজারটা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে এই সমাজে বসবাস করছি। এসব সমস্যার জন্য আমরা ঢালাওভাবে সরকারকে দায়ী করে থাকি, কিন্তু এটা খুব কমই চিন্তা করি যে এখানে আমাদেরও সমান দায় আছে। আমাদের কোনো কিছুই পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে হয়নি। ফলে পরিবর্তন আসতে সময় লাগবে। আর সেই পরিবর্তনের জন্য আমাদের ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।

গ্রামের বা মফস্বলের তরুণদের আরও বেশি যুক্ত করার কথাটি বারবার আসছে, কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে শহরের কোনো স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া ছেলেমেয়েদের যে প্রতিবন্ধকতাগুলোর সম্মুখীন হতে হয়, গ্রামের বা মফস্বলের তরুণদের জন্য সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো দ্বিগুণ হয়ে থাকে। কারণ, তঁারা সমান সুযোগ-সুবিধা পান না।

শাদমা মালিক
শাদমা মালিক

শাদমা মালিক: আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বর্তমানে অভিবাসনের প্রবণতাটা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেক তরুণ এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা কানাডার মতো দেশে স্থায়ীভাবে অভিবাসনের চিন্তা করছেন। কেন এই বিষয়টি ঘটছে? আমাদের দেশে কি তরুণদের দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না? তঁাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের পরিবেশ না পেয়ে কি তঁারা অভিবাসনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন? এই বিষয়টিতে আমাদের নজর দিতে হবে।

আমাদের দেশের তরুণেরা অনেক বেশি মেধাবী ও মনোযোগী, কিন্তু ভেতর থেকে তঁারা অনেক বেশি ভঙ্গুর ও বিচ্ছিন্ন। তাই তঁারা খুব সহজেই উগ্রবাদ, মৌলবাদের মতো বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। তরুণদেরই তঁাদের মেধা কাজে লাগানোর এবং তঁাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গা ও সুযোগ করে নিতে হবে।

তৌহিদুর রহমান
তৌহিদুর রহমান

তৌহিদুর রহমান: আজ থেকে ১০ বা ১৫ বছর পর কেমন বাংলাদেশ হবে। আমার মনে হয়, আজ থেকে ১০ বছর পর আমাদের এভাবে গোলটেবিল বৈঠক করতে হবে না, আমরা যে যার বাসায় বসেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারব। যেটা বলতে চাইছি, আমাদের প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর উন্নতির আপাতত দরকার নেই। যা দরকার সেটি হলো, এখন যে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো আছে, তার পূর্ণ ব্যবহার। আমাদের এখন ফোর-জি প্রযুক্তির দরকার নেই, আমাদের থ্রি-জি প্রযুক্তিকেই দেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি মফস্বল শহরে সুলভ করতে হবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের দেশের সব তরুণের অংশগ্রহণের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। পিছিয়ে পড়া অংশের তরুণদের সুযোগ করে দিতে হবে, যেন তঁারা তঁাদের মেধা ও মনন কাজে লাগিয়ে বিশ্বদরবারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

মো. মুনতাকীম ইবনে সালেহীন
মো. মুনতাকীম ইবনে সালেহীন

মো. মুনতাকীম ইবনে সালেহীন: আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রতিবন্ধকতাই আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উন্মেষ হাসিলের জন্য কৃত্রিমভাবে তৈরি করা বলে আমি মনে করি।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যখন তরুণেরা তঁাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলতে চান, তখন এই মহলগুলো তঁাদের মতকে দমিয়ে রাখতে চায়। ফলে আমি মনে করি, যত দিন পর্যন্ত আমাদের নীতিনির্ধারণী মহল ও সমাজের প্রভাব বিস্তারকারী মহলের সদিচ্ছা না হবে, তত দিন পর্যন্ত তরুণদের সমস্যাগুলো দূর করা কঠিন হবে।

শারমিন আক্তার শাকিলা
শারমিন আক্তার শাকিলা

শারমিন আক্তার শাকিলা :   দেশের ব্যাপক সংখ্যক তরুণ আজ  অনলাইনে অবসর সময় কাটান। এই যে আমাদের তরুণদের সময়ের একটা বিশাল অংশ অনলাইনে ব্যয় হচ্ছে, এই সময়টাকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের জন্য আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য আমাদের ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহনশীলতা, অন্যের মতামতের প্রতি সহনশীলতা, তরুণদের অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনার মতো বিষয়ে তঁাদের সচেতন করার জন্য আমরা অনলাইন মাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারি।আমাদের দেশের অবকাঠামো, রাস্তাঘাটের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের তরুণ প্রজন্মের সুস্থ মানসিকতার উন্নয়নের দিকেও জোর দিতে হবে।

এস আই এম ফারহান শেখ
এস আই এম ফারহান শেখ

এস আই এম ফারহান শেখ: আমাদের সমস্যাগুলো দূর করার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আমাদের অধিকার ও দায়িত্বগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তরুণেরা অনেক বেশি যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু এসব যোগাযোগমাধ্যমে তরুণেরা শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে যাচ্ছে একটি অভিযোগকেন্দ্র, যে অভিযোগ কেউ শুনছে না।

আমি একজন তরুণ নাগরিক হিসেবে দেখতে চাই, ১০ বছর পর বাংলাদেশের সব নাগরিক তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং সরকারকে দোষারোপ না করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।

মুনীরুজ্জামান
মুনীরুজ্জামান

মুনীরুজ্জামান: আমি আশা করব, আমাদের তরুণেরা বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতীয়মান সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করবে। বিশ্ব যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে আমাদের দেশের তরুণেরা কীভাবে নিজেদের যুক্ত করতে পারবেন, সে বিষয়ে চিন্তা করবেন। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে কী করে নিজেদের খাপ খাওয়ানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করবেন। তারুণ্যের ক্ষমতার ওপর আমরা সবাই বিশেষভাবে আশাবাদী এবং আমি জানি যে বাংলাদেশের তরুণেরা পারবেন আমাদের দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে। তরুণদের ওপর আমাদের আস্থা ও িবশ্বাস আছে।

আব্দুল কাইয়ুম: ষাটের দশকে আমরা যখন তরুণ ছিলাম, তখন আমাদের সামনে এত বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ ছিল না। তখন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল—দেশকে স্বাধীন করতে হবে। কিন্তু আজকের তরুণেরা যে সাহসের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছেন, সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়।

আমাদের  তরুণেরা যেসব সমস্যা ও সমাধান নিয়ে চিন্তা করছেন, তাতে আমরা আশাবাদী যে আজ থেকে ১০–১৫ বছর পর আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।

যাঁরা অংশ নিলেন

আসিফ মোহাম্মদ শাহান       :  সহকারী অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রকিবুল হাসান                  : প্রতিষ্ঠাতা, পিস এম্পায়ার এবং ইরাসমাস স্কলার, নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়ন

সাব্বির আহমেদ জুবাইর      :  গবেষণা সহযোগী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ

ফাহমিদা ফাইজা               :  ইউথ অ্যাডভাইজর, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন

এস আই এম শাদমান শেখ  :  প্রতিষ্ঠাতা, লাইটহাউস এম্পোরিয়াম মিউজিয়াম

আরিফ আনজুম দীপ           :  পেশাদার ফটোগ্রাফার, ক্রিয়েটিভ রিফ্লেকশন

সজল কুমার দাশ               :  প্রোগ্রাম অফিসার, টেক ফর পিস প্রিনিউর ল্যাব 

ফাতিমা তুজ জোহরা          :  পরিচালক, ফাতিমা আলি ফাউন্ডেশন

এস আই এম ফারহান শেখ  :  পরিচালক, হ্যালো গভর্ন্যান্স

ইরিনা মাহমুদ                  :  শিক্ষার্থী, রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন

সিলভিয়া রোজারিও           :  শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এ কে এম তওসীফ তানজিম আহমেদ    :   শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাউসান সুহা                    :  শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

লামিয়া মোহসীন               :  শিক্ষার্থী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শারমিন আক্তার শাকিলা       :  সাধারণ সম্পাদক, মডেল ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সোহারা মেহরোজ শাচী       :  কিউরেটর, গ্লোবাল শেপারস কমিউনিটি

সাকিয়া হক                     :  শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

তৌহিদুর রহমান               :  সভাপতি, বুয়েট ডিবেটিং ক্লাব

আবু সাঈদ জুবায়ের           :  শিক্ষার্থী, আলিয়া মাদ্রাসা

শাহরিমা তানজিনা              :  শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শাদমা মালিক                  :  নিজস্ব প্রতিবেদক, দ্য ডেইলি স্টার

মো. মুনতাকীম ইবনে সালেহীন  :   নিজস্ব প্রতিবেদক, দ্য ডেইলি স্টার

আশরাফুল ইসলাম             :  নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রথম আলো

মুশফেকা ইসলাম              :  নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রথম আলো 

সঞ্চালক

মুনীরুজ্জামান               :  চেয়ারম্যান, বিআইপিএসএস

আব্দুল কাইয়ুম              : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো