পূজা ও উৎসব যেখানে একাকার

নারায়ণগঞ্জের শ্রীশ্রীবলদেব িজউর আখড়া ও শিবমন্দিরের তোরণ। সমারোহে দুর্গাপূজা হয় এই মণ্ডপে।  প্রতিবছর দুর্গোৎসবে এই মণ্ডপের প্রাঙ্গণে নবমীর রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় l ছবি: প্রণব রায়
নারায়ণগঞ্জের শ্রীশ্রীবলদেব িজউর আখড়া ও শিবমন্দিরের তোরণ। সমারোহে দুর্গাপূজা হয় এই মণ্ডপে। প্রতিবছর দুর্গোৎসবে এই মণ্ডপের প্রাঙ্গণে নবমীর রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় l ছবি: প্রণব রায়

বাংলাদেশের যে কটি জেলা শহরে গেলে আপনি বুঝবেন দুর্গাপূজা হচ্ছে, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অন্যতম। বলা যায়, পূজার সময় এই শহরে এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে ঢাকের শব্দ পাওয়া যাবে না। চাষাঢ়া শহীদ মিনার থেকে শহরের প্রধান সড়ক ধরে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে বিপুলসংখ্যক পূজার মণ্ডপ। এরপর আমলাপাড়া থেকে শুরু করে ডালপট্টি পর্যন্ত অলিগলিতেও পূজার মণ্ডপ। একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব বড়জোর ২০০ গজ। পূজার আলোকসজ্জায় রাতের নারায়ণগঞ্জ শহর আলোকিত হয়ে ওঠে। শুধু মূল শহরেই নয়, নদীর ওপারেও বেশ কিছু পূজা হয়। সব মিলিয়ে এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় ১৯০টি মণ্ডপে পূজা হবে।

এই শহরে বিপুলসংখ্যক হিন্দুধর্মাবলম্বীর বসবাস, যাঁদের মধ্যে অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীও আছেন। স্বাভাবিকভাবেই এখানে পূজার আড়ম্বর অনেক বেশি। প্রতিমা ও মণ্ডপের তোরণ নির্মাণে জাঁকজমক যেমন থাকে, তেমনি থাকে শিল্পের ছোঁয়া। পূজার সময় নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না। পূজার আয়োজকেরা এই শিক্ষার্থীদের দিয়ে মণ্ডপের সাজসজ্জা করিয়ে নেন। তবে এবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ তহবিলে টাকা দেওয়ার জন্য তোরণের জাঁকজমকে কাটছাঁট করা হচ্ছে বলে জানান শ্রীশ্রীবলদেব জিউর আখড়া ও শিবমন্দিরের সভাপতি জয় কুমার রায়। প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো এই মন্দিরে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের ঐতিহ্য আছে, এবারও তার ব্যত্যয় হবে না। বিশেষ করে তাদের লুচি ও আলুর দমের তুলনা মেলা ভার।

অষ্টমী ও নবমীর রাতে বিভিন্ন মন্দিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। গোপীনাথ জিউর আখড়া পূজা কমিটির সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভবানী শঙ্কর রায় বলেন, নবমীর রাতে তাঁদের পূজামণ্ডপ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পীরা এতে অংশ নেন। এ উপলক্ষে সেখানে নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার শিল্পীদের মিলনমেলা হয়। এ ছাড়া অষ্টমী ও নবমীর রাতে দর্শনার্থীদের খিচুড়ি-লাবড়া দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

দশমীর দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে যেন মানুষের ঢল নামে। সব ধর্ম, শ্রেণি ও বর্ণের মানুষেরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। সন্ধ্যার পর থেকে ভক্তরা ট্রাকে প্রতিমা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন, সঙ্গে চলে নাচগান। ওই সময় ঢাক ও মিউজিক সিস্টেমের মিলিত শব্দে রাস্তায় কান পাতা দায় হয়ে ওঠে। সব প্রতিমাই শহরের পার্শ্ববর্তী শীতলক্ষ্যা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখানেও মানুষের ভিড় থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, কিছুদিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ভক্তরা মহাসমারোহে লক্ষ্মী ও কালীপূজা করবেন।

এখানকার পূজা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উৎসবের মডেল।