বর্ষার আগেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো দরকার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো উচিত। কারণ রোহিঙ্গারা এখন কক্সবাজারের যেসব পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে, সেগুলো আগামী বর্ষায় ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথম আলো আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে আজ মঙ্গলবার এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজার প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা: সমাজ ও অর্থনীতিতে প্রভাব’ শীর্ষক এই গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, পরিবেশবিদ, সাবেক কূটনীতিক, এনজিও কর্মকর্তারা অংশ নেন। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা দ্রুত তাদের দেশে ফিরতে পারলে আমাদের জন্য ভালো। আর ফিরে যাওয়া বিলম্ব হলে সামনের দিনগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। ১০ অক্টোবর, প্রথম আলো কার্যালয়, কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ছবি: আবদুস সালাম
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। ১০ অক্টোবর, প্রথম আলো কার্যালয়, কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ছবি: আবদুস সালাম

আলোচনায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চতর নৈতিক অবস্থানের শক্তি আমাদের কূটনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে। আমরা সামর্থ্যের বাইরে শুধু মানবিক মূল্যবোধের কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তবে রোহিঙ্গারা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে অবস্থান করলে পরিবেশগত যেসব সমস্যা তৈরি হতে পারে—এর একটা আর্থিক মূল্যায়ন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (বিআইডিএস) দিয়ে করানোর সুপারিশ করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশের আসার ফলে মানব ও মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদ শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের এ দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রোহিঙ্গারা ফিরে গিয়ে আবার একই সহিংস পরিস্থিতিতে মুখে পড়ে, তবে এই প্রত্যাবাসন টেকসই হবে না। তাই সঠিকভাবে প্রত্যাবাসনের জন্য এখন কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হলে তা উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিসের (বিআইপিএসএস) সভাপতি এ এন এম মুনীরুজ্জামান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তার পাহাড় কেটে অস্থায়ী ঘর বানাচ্ছে। তারা আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত থাকলে ব্যাপক পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে। এতে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানিও হতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে এ বিষয়টিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা উচিত। যেন এর দায় বাংলাদেশকে নিতে না হয়।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সাবেক কর্মকর্তা গোলাম আব্বাস বলেন, মিয়ানমারের সহিংস আচরণে বাকি রোহিঙ্গারাও যে এ দেশে চলে আসবে না, এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। মানবিক মূল্যবোধের বিবেচনায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত সীমানানীতি নিয়েছে। তবে সেটা দীর্ঘ মেয়াদে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব কি না, ভেবে দেখতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটার এইডের কারিগরি উপদেষ্টা আবদুল্লাহ আল মূয়ীদ বলেন, কক্সবাজার এলাকায় যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, তাতে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে (বর্ষাকাল) রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না হলে পাহাড় ধসে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় অবশ্যই তৈরি হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান সম্পর্কে সাবেক রাষ্ট্রদূত শামীম আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ফ্রান্স। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতিবাচক অবস্থানে ফ্রান্স। এ অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ।