জটিল সংকটে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলোর আন্তর্জাতিক বিমা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য আমেরিকান ক্লাব’ সতর্কবার্তা প্রচার করেছে, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নোঙর এলাকায় ভয়ানক বিপদ’। কারণ, গত তিন মাসে ওই বন্দরের বহির্নোঙরে ২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে দেশি-বিদেশি ৩৭টি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, যেখান দিয়ে জলপথে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ৯৩ শতাংশ পরিবহন করা হয়, তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য এই বার্তা কত ক্ষতিকর হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভাবমূর্তি ছাড়াও এর বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতিতে জাহাজ কোম্পানিগুলো পণ্যের ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। তা যদি ঘটে, তাহলে পণ্য আমদানি-রপ্তানির খরচ বেড়ে যাবে; আমদানিপণ্যের দাম বাড়িয়ে আমদানিকারকেরা তাঁদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। ফলে ভোক্তাসাধারণের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। আর রপ্তানিকারকদের পণ্য সরবরাহের খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে তাঁদের মুনাফা কমে যাবে।
সুতরাং এই সংকট গুরুতর, এ থেকে দ্রুত উত্তরণ খুব জরুরি। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? বহির্নোঙরে জাহাজ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সেখানে বড় বড় জাহাজের অত্যধিক ভিড়। গত বছর বহির্নোঙরে একসঙ্গে অবস্থান করত গড়ে ৭৮টি জাহাজ, আর এখন তা বেড়েছে হয়েছে ১৫০। বহির্নোঙরের জলসীমার তুলনায় জাহাজের এই সংখ্যা অত্যধিক। এই ভিড়ের ফলে বিশাল বিশাল জাহাজগুলো ডানে-বাঁয়ে ঘুরতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি লেগে যাচ্ছে।
বহির্নোঙরে একসঙ্গে এত বেশি জাহাজের ভিড়ের কারণ পণ্য খালাসে অস্বাভাবিক মাত্রার বিলম্ব। আর পণ্য খালাসে অতিবিলম্বের কারণ পর্যাপ্ত লাইটার জাহাজের অভাব ও জাহাজগুলো নোঙর করার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা। লাইটার জাহাজের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ানো সম্ভব নয়; কারণ, এটা কোনো একক কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে না। তবে বাজারের নিয়মে যে বস্তুর চাহিদা থাকে, তার যথেষ্ট জোগানও থাকার কথা। তাহলে বহির্নোঙরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইটার জাহাজের সংখ্যা বাড়েনি কেন? একটা কারণ হতে পারে এই যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে নৌপরিবহন অধিদপ্তর নির্মিতব্য জাহাজের নকশা অনুমোদন বন্ধ রেখেছিল।
সম্প্রতি আবার অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়ে গেছে বটে, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি লাইটার জাহাজের সংখ্যা বেশি বাড়বে না। তাই দ্রুত জাহাজ নির্মাণে উৎসাহিত করা দরকার। সেই সঙ্গে দরকার বহির্নোঙরে জাহাজ ভেড়ার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর করা। সে জন্য বন্দরের আরও দক্ষ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।