হাইড্রোলিক হর্ন: পুরোপুরি বন্ধ হবে কবে?

গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ২৭ আগস্টের পর কোনো যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে গাড়িসহ তা জব্দের নির্দেশ দেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না কেউ। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অধিকাংশ যানবাহনে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার চলছেই।

সাধারণভাবে শব্দের মানমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবল। তার চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি লোপ, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে। আর হাইড্রোলিক হর্ন ১০০ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর কোথাও কোথাও শব্দের মাত্রা ‘মানমাত্রার’ চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। এই শব্দদূষণ সৃষ্টিতে হাইড্রোলিক হর্ন যে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের বিরুদ্ধে জরিমানার বিধান থাকলেও যথাযথভাবে তা প্রয়োগ হচ্ছে না। আর জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা হওয়ায় গাড়ির চালকেরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না। তা ছাড়া অনেক চালক আইনে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের বিষয়টি জানেনও না। অন্যদিকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও তা আমদানিতে বা বেচাকেনায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বাজারে চাহিদা থাকায় অবাধে আমদানিও হচ্ছে। দামও নাগালের মধ্যে। সর্বনিম্ন ৪৮০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা। এর ব্যবহার রোধ করা তাই কঠিন হচ্ছে।

হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে এটা যে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, এই বিষয়টি সবাইকে বোঝাতে হবে। বিশেষ করে যানবাহনের মালিক ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে এর আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। গাড়ি জব্দের পাশাপাশি জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে।

হাইকোর্ট ৮ অক্টোবর যেসব গাড়ির মালিক ও চালকের কাছে হাইড্রোলিক হর্ন রয়েছে, সেগুলো ১৫ দিনের মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে শুধু নির্দেশ দিলেই হবে না। এই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কি না, তা–ও দেখতে হবে।