ফিরে আসুক আগামী বছর থেকে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর শুধু নির্ধারিত স্থান ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় এ বছরের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব বাতিল হওয়ার বিষয়টি খুবই হতাশার। পাঁচ বছর ধরে জগৎখ্যাত শিল্পীদের অংশগ্রহণে যে অনুষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছিল এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছে, সেখানে এমন ছেদ সত্যিই অপ্রত্যাশিত।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তরফে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, আগামী ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ষষ্ঠ উৎসবের যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তা ভেন্যু না পাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে। এই উৎসবের স্থান হিসেবে প্রথম থেকেই আর্মি স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হয়ে আসছিল এবং নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে তা সবচেয়ে কার্যকর স্থান হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আয়োজকেরা তাই এবারও আর্মি স্টেডিয়ামকে উৎসবস্থল বিবেচনা করেই সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড সে সময়ে বাংলাদেশে পোপের সফর থাকায় অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়নি।

প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শেষে এই উৎসব গত পাঁচ বছরে একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। উচ্চাঙ্গসংগীত সর্বজনের সংগীত নয় বলে যে ধারণা ছিল, এই উৎসব ধারাবাহিকভাবে সেই ধারণাকে ভেঙে দিতে শুরু করেছিল। এই উৎসব নিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে যে মাত্রায় উৎসাহ ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। অনেকেই হয়তো এই উৎসবের মাধ্যমে উচ্চাঙ্গসংগীত ও এর নানা ধারার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। ধ্রুপদি সংগীত শুনতে শুনতে শ্রোতাদের একটি দল তৈরি হওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই উৎসব সেই কাজটি করছিল।

সব প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না পারা আয়োজকদের পাশাপাশি হাজার হাজার শ্রোতা-দর্শকের জন্যও অনেক কষ্টের ও হতাশার। এবারের উৎসবে আরও নতুন নতুন যেসব বিশ্বখ্যাত শিল্পীর আসার কথা ছিল, সংবাদ সম্মেলনে সেই তালিকা শুনে আগ্রহী ব্যক্তিদের হতাশা আরও বাড়ার কথা। অনেকেই এই উৎসবের জন্য অপেক্ষায় থাকেন, এমনকি এই উৎসবে যোগ দিতে দিন–ক্ষণ হিসাব করে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফেরেন। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংস্কৃতিক উৎসব-অনুষ্ঠান যখন নানা বাস্তবতায় সংকুচিত হয়ে আসছে, তখন এই উৎসব একটি সাংস্কৃতিক মহামিলনে রূপ নিয়েছে।

এবারের উৎসব না হওয়াটা তাই সবার জন্যই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করব, দিন–ক্ষণ বদল করে এই আসরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর যদি না হয়, তাহলে এবার ছেদ পড়লেও আগামী বছর যথারীতি অনুষ্ঠানটি আগের মান বজায় রেখেই অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি, সরকার ও প্রশাসনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে যথাযথ সহযোগিতা পাওয়া যাবে।