ঢাকা স্বাধীন দেশের রাজধানী শুনে তৃপ্তি পেয়েছিলাম

প্রণব মুখার্জি
প্রণব মুখার্জি
আগামী জানুয়ারিতে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশে আসার কথা। তাঁর জন্য বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রয়েছে এক অনন্য আসন। সম্পর্কের এই রসায়ন বিশ্লেষণের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সমস্যা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথম আলো: আপনি আদ্যন্ত রাজনীতিবিদ। রাজনীতির মানুষজনকে নানা ধরনের সমালোচনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু আমি দেখেছি, আপনার কোনো সমালোচনা বাংলাদেশের কেউ শুনতে প্রস্তুত নন। আপনি যেন ওঁদের অভিভাবক!

প্রণব মুখার্জি: (হাসি) এটাও আমার খুব অদ্ভুত লাগে। এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।

প্রথম আলো: যেন বাংলাদেশের ভালোমন্দ ওঁদের চেয়ে আপনি বেশি বোঝেন।

প্রণব মুখার্জি: এটা আমি বলতে পারি যে বাংলাদেশের উন্নতি ছাড়া আমরা এগোতে পারব না—এই বিষয়টা আমি বহুদিন আগে নিশ্চিত হয়েছিলাম। যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সেই একাত্তর সাল থেকে রক্ত ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে, ওঁদের উন্নতি ছাড়া আমরা উন্নত হতে পারব না। আমার বইতে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশি কিছু লিখিনি। এ জন্য আমাকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে।

প্রথম আলো: লেখেননি কেন? সত্যিই তো আপনি জানতেন অনেক বেশি।

প্রণব মুখার্জি: লিখিনি এ কারণে, আমার মনে হয়েছিল যে তখন আমি সরকারে নেই। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী আমাকে ব্যবহার করেছিলেন। তখন আমি রাজ্যসভায়। ১৯৭১ সাল। একটা বেসরকারি প্রস্তাব এনেছিলাম। ১৭ কি ১৮ জুন হবে। প্রস্তাবটা ছিল, প্রবাসী বাংলাদেশের সরকারকে (গভর্নমেন্ট ইন এক্সাইল) স্বীকৃতি দেওয়া হোক। খুব খেটে নিজেকে তৈরি করে একটা ভাষণ দিয়েছিলাম নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে। সেই প্রথম ভাষণ আমার। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার স্বর্ণ সিং। তিনি জবাবি ভাষণ দেবেন। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী মাঝপথে বলতে উঠলেন। তিনি বললেন, মাননীয় সদস্য জানেন কেন এই সময় অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। তাই সেই ব্যাখ্যার বিস্তারে আমি যাচ্ছি না। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল নষ্ট করার মতো কোনো বার্তা ভারতের সংসদ থেকে যাক, তা আমরা চাই না।

প্রথম আলো: মনোবল ভাঙার বার্তা মানে?

প্রণব মুখার্জি: এই যে বিশেষ বিশেষ কারণে এখনই স্বীকৃতি দিতে পারছি না, সেই বার্তা গেলে তা মনোবল ভেঙে দেবে। ইন্দিরা গান্ধী বললেন, আমি চাই, এ কথা স্মরণ রেখেই যেন মাননীয় সদস্যরা বক্তব্য দেন।

প্রথম আলো: তখনই কি তাহলে ইন্টারভেনশনের বিষয়টা ইন্দিরা গান্ধীর মাথায় চলে এসেছিল?

প্রণব মুখার্জি: তখনই এসেছিল কিনা জানি না। তবে ঘটনাক্রমে বোঝা যাচ্ছে যে ছিল। কারণ ওই সময় তিনি একটা অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সীমান্ত খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আর ভাষানীসহ বড় বড় নেতাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার যে সিদ্ধান্ত নেন, তাতে মনে হয় ইন্টারভেনশনের বিষয়টা ওঁর মাথায় ছিল। সেই দিন থেকে আমি বাংলাদেশ ফলো করতে থাকি। এরপর আরও একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল, প্যারিসে ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলন। ওম মেহেতা ছিলেন সংসদীয় মন্ত্রী। আমাকে ডেকে বললেন প্যারিসে যেতে হবে। বললেন, এটা ইন্দিরা গান্ধীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমি গেলাম। বিভিন্ন দেশের এমপিদের বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিফ দিতে শুরু করলাম। এরই মধ্যে আমাকে আরও দুটি দেশে যেতে বলা হলো। তার একটা পশ্চিম জার্মানি। ফিরে আসার পর মিসেস গান্ধী আমার কাছ থেকে একটা ডিটেল রিপোর্ট নেন। এসব থেকে বোঝা যায় যে উনি মন ঠিক করেই ফেলেছিলেন।

প্রথম আলো: ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা?

প্রণব মুখার্জি: ওই তৎপরতা আগে ও পরে দেখা যায়নি। হ্যাঁ, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার পরও কূটনৈতিক তৎপরতা মারাত্মক হয়েছিল, কিন্তু ৭১-এর তৎপরতা সেই সময়ের নিরিখে অভূতপূর্ব ছিল। মিসেস গান্ধীর আর একটা সিদ্ধান্ত ছিল একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা। অসাধারণ। গোটা বিশ্বকে ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ দখলের জন্য আসেনি। আমরা অকুপাইয়িং ফোর্স নই।

প্রথম আলো: এ কারণেই তো ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশেষ স্থানে রয়েছেন। এশিয়ার মুক্তি সূর্য বিশেষণ পেয়েছেন। অটল বিহারি বাজপেয়ি পর্যন্ত শ্রদ্ধামিশ্রিত বন্দনায় ভরিয়ে দিয়েছেন!

প্রণব মুখার্জি: প্রতিটি পদক্ষেপ তিনি ঠিক নিয়েছেন। শুধু একটা কথা আমি লিখিনি। শেখ মুজিবুর রহমানের একটা বক্তৃতা থেকে মিসেস গান্ধীর মনে একটা সংশয় বা সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। ওঁর কেন যেন মনে হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার কোনো অংশ বাংলাদেশ দাবি করলেও করতে পারে। উনি তখন তাজউদ্দীন সাহেবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তাজউদ্দীন সাহেব ম্যাপ খুলে বলেছিলেন, ভারতের স্বার্থহানিকর কোনো কিছু বাংলাদেশ করবে না। এটা আমি শুধু অস্থায়ী সরকারের পক্ষ থেকেই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের হয়ে কথা দিচ্ছি।

প্রথম আলো: আপনাকে ভালোবাসার একটা প্রধান কারণ হয়তো বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখেছেন।

প্রণব মুখার্জি: মনে হয়। ইন্দিরা গান্ধী যে আমাকে বিশ্বাস ও স্নেহ করেন, সেটা বাংলাদেশের মানুষ বুঝেছিলেন। এবং সেটা আরও বোঝা গিয়েছিল ’৭৭ সালে। ইন্দিরা হেরে যাওয়ার পর ওঁর বিরুদ্ধে সরকার যেমন হাত ধুয়ে লেগে পড়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ তা বরদাশত করেননি।

প্রথম আলো: সবার কাছে এই গ্রহণযোগ্যতা ভারতের আর কোনো রাজনীতিক, রাষ্ট্রপতি কখনো পাননি।

প্রণব মুখার্জি: এর আরও একটা কারণ হয়তো যখনই কেউ আমার কাছে কোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতে এসেছেন, দলমত-নির্বিশেষে ওঁদের সমস্যার সমাধান আমি আন্তরিকভাবে করতে সচেষ্ট হয়েছি। রাজনীতিগতভাবে তো বটেই, আত্মিক দিক থেকেও সৎ থাকতে চেয়েছি। আমার আচরণের মধ্য দিয়ে কখনো কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কারও বিরুদ্ধে যাইনি।

প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তো ক্রমেই দৃঢ় হয়েছে।

প্রণব মুখার্জি: শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাদের সঙ্গে এটা একটা পারিবারিক সম্পর্ক। ওঁরা যখন এখানে এলেন, তখন থেকে আমাদের পরিচয়। আমার স্ত্রী ওঁদের বোনের মতো দেখতেন। আমার স্ত্রীবিয়োগের কথা শুনে ফোনে কেঁদে ফেললেন। বললেন, আমি আসছি। আমি বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, আপনি প্রধানমন্ত্রী। উনি শোনেননি। চলে এলেন।

বিএনপির অনেক নেতা স্বাধীনতাসংগ্রামী ছিলেন। ওঁদের সঙ্গেও আমার দারুণ সখ্য গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর ওঁদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্যহয়েছিল। শিবির আলাদা। কিন্তু সাইফুর রহমান, অর্থমন্ত্রী ছিলেন, খুব ভালো সম্পর্ক ছিল আমার সঙ্গে। বেগম জিয়ার সঙ্গেও। ওঁর দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নামগুলো ঠিক মনে পড়ছে না, কাজের ক্ষেত্র ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে ওঁদের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। (এই দুজন ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, যাঁকে প্রণববাবু বারবার বাগেরহাটের একজন বলে উল্লেখ করছিলেন ও মোর্শেদ খান)।

প্রথম আলো: এত ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠলেও বেগম জিয়া যখন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন না, তখন খারাপ লেগেছিল?

প্রণব মুখার্জি: ওটা আমি খুব একটা বড় করে দেখি না। কারণ, উনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দুবার, আমাদের দেশে এসেছেন, বহুবার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রথম বাণিজ্য চুক্তি হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই। তারপর ১৯৮০ সালে আমি সেই বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন (রিনিউ) করেছিলাম। তখন আমি ছিলাম বাণিজ্যমন্ত্রী। ঢাকায় গিয়েছিলাম। জিয়াউর রহমান সাহেবও আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গেও অনেকবার কথা হয়েছে। ওঁদের নিজস্ব রাজনীতি আছে। সেটা আলাদা ব্যাপার। কাজেই কেন আসেননি, কী জন্য আসেননি, সেটা আমি খুব বড় করে দেখি না।

প্রথম আলো: আপনি বরাবর গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আবহকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। বহুত্ববাদী সমাজকেই পছন্দ করে এসেছেন। অনেক হোঁচটের পর বাংলাদেশেও গণতন্ত্র থিতু হচ্ছে। কিন্তু দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল গত নির্বাচন বয়কট করল।

প্রণব মুখার্জি: নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গণতান্ত্রিক দলকেও এগোতে হবে। বয়কট করাটা ঠিক নয়। কারণ, তাতে দেশের একটা বড় অংশের মনোভাব প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। মনে রাখা দরকার, গান্ধীজি ১৯১৯ সালের পর কাউন্সিল বয়কট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্তে তিনি অটল থাকতে পারলেন কি? পারলেন না। সরোজিনী নাইডু ওঁকে সত্যমূর্তির বক্তৃতা শোনাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ভাষণ গান্ধীজির মন পরিবর্তন করিয়ে দেয়। কাউন্সিলের ভেতর থেকেই স্বরাজ পার্টির জন্ম।

প্রথম আলো: গণতন্ত্রের বিকাশের একটা বড় শর্ত তো শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা।

প্রণব মুখার্জি: অবশ্যই। গণতন্ত্রে পলিটিক্যাল রাইভালরি থাকবেই। রেষারেষি থাকবেই। কিন্তু তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করে না তোলার কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। এ জন্য সবচেয়ে সচেতন হতে হবে মানুষকে। আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন, ভিজিল্যান্স কমিশন, সিএজি, বিচারব্যবস্থার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিকাশ কিন্তু ক্রমে ক্রমেই হয়েছে। এ জন্য গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা যেমন জরুরি, তেমনি আবশ্যক জনগণের সচেতনতা। জনগণকে সেই তাগিদ অনুভব করতে হবে।

প্রথম আলো: আপনার মনে আছে কিনা জানি না, ২০০০ সালে আমার এক টেলিভিশন শোয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সব রাজনীতিকের মতো প্রধানমন্ত্রীর আসনও আপনার লক্ষ্য কি না। আপনি বলেছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য বলে নিজেকে মনে করেন না। বলেছিলেন, দেবগৌড়া বা গুজরালের মতো তালেগোলে হওয়া এক জিনিস, কিন্তু যোগ্যতায় নয়। তিনটি কারণ দেখিয়েছিলেন আপনি। এক, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জনমোহিনী শক্তি থাকতে হবে। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, অটল বিহারি বাজপেয়িদের সেই শক্তি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হতে গেলে জ্যোতি বসু বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ক্যারিশমাটিক হতে হবে। বলেছিলেন, মমতার নামে এক ঘণ্টা সময় নিয়ে কোনো সভা ডাকা হলে নিমেষে পাঁচ হাজার লোক জমে যাবে। আপনার জন্য পাঁচ শও আসবে না।

প্রণব মুখার্জি: (শব্দহীন মৃদু হাসি)

প্রথম আলো: দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হিন্দি জানা খুব জরুরি। আপনার হিন্দি জ্ঞান দশে এক থেকে দুই। তৃতীয় কারণ, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয় হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনে জেতা জনপ্রিয়তার একটা মাপকাঠি। আপনি তখনো পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে জেতেননি।

প্রণব মুখার্জি: তুমি ঠিকই বলেছ। প্রতিটাই ঠিক।

প্রথম আলো: কিন্তু আপনি এ কথাও বলেছিলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা আপনার আছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের সামনে একটা ‘ভিশন’ রেখে যেতে পারেন।

প্রণব মুখার্জি: (তৃপ্তির হাসি)

প্রথম আলো: সেই আপনি শুধু রাষ্ট্রপতিই হলেন না, রাজনৈতিক রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে একমাত্র আপনিই সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্য।

প্রণব মুখার্জি: এর কারণ সম্ভবত আমি সব সময় পার্লামেন্টের অভ্যন্তর থেকে বেড়ে উঠেছি। সরকারে সব সময় অসম্ভব গুরুত্ব পেয়ে এসেছি। পার্লামেন্টেই থাকতে চেয়েছি। জ্যোতি বসু একটা সময় অজয় মুখার্জিকে বলেছিলেন আমাকে বিধানসভায় দাঁড় করিয়ে মন্ত্রী করতে। তাতে নাকি ভালো হতো। আমি রাজি হইনি। সেই থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া পর্যন্ত পার্লামেন্টের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ। হয়তো গ্রহণযোগ্যতার সেটাই কারণ।

প্রথম আলো: শেষ প্রশ্নটা একটু অন্য ধরনের। লোভ সামলাতে পারছি না। খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আপনার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাঁচটা সেরা আক্ষেপ, পাঁচটা সেরা তৃপ্তি ও পাঁচটা স্বপ্ন যা অধরা থেকে গেল সেই কথা।

প্রণব মুখার্জি: সৌম্য, এর জন্য তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমার পরের বইয়ে এই বিষয়গুলো থাকবে। তাই...। তবে হ্যাঁ, এটুকু বলতে পারি, সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি সেদিন পেয়েছিলাম, ইন্দিরা গান্ধী যেদিন ঘোষণা করলেন, ঢাকা স্বাধীন দেশের রাজধানী। অন্নদাশংকর রায়ের সেই কবিতাটা মনে পড়ছে, স্মৃতি থেকে বলছি...‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ (শেষ)

আরও পড়ুন :