রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ ও দেশের কথা

রুশ বিপ্লবের নায়ক লেনিন
রুশ বিপ্লবের নায়ক লেনিন

১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মরণঘণ্টা বেজে ওঠে। এরই রেশ ধরে দুই বছর পর ১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মহিরুহ বিশাল সোভিয়েত সাম্রাজ্যে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে। ১৯১৭ সালে সংঘটিত বলশেভিকদের সেই বিপ্লব বিশ্বের আধুনিক কালের রাজনৈতিক ইতিহাসের যুগান্তকারী এক ঘটনা। কিন্তু সেই বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্‌যাপন করতে হচ্ছে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের আর অস্তিত্ব নেই এবং রাশিয়ান ফেডারেশন ও অন্যান্য প্রজাতন্ত্রের কোথাও কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় নেই। নেই পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয়ভুক্ত কোনো দেশে। তবু কেন এই বিপ্লবের ঋণ আমাদের এবং ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত বিভিন্ন দেশকে স্বীকার করতে হবে? কেনইবা এমন অবসানের পরও সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন ও ভাবনা প্রাসঙ্গিকতা হারায় না?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর আমাদের দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটেই দেওয়া যায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় মুসলিমপ্রধান এই বাংলায় মুক্তির লক্ষ্যে জাগরণ। এ সময় ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকব্যাপী এই জাগরণ উত্তরোত্তর তীব্র, ব্যাপক হয়ে ওঠে। ১৯৭০-এর নির্বাচন এবং তাতে বিজয়ের পরে ঐক্যবদ্ধ জাগ্রত জনতার যেকোনো মূল্যে একটা চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া শান্ত হওয়া সম্ভব ছিল না। এ দুটি দশক যেন পূর্ব বাংলার মুসলমানদের রেনেসাঁসের দশক। এই জাগরণের বৈশিষ্ট্যগুলো একবার মনে করা জরুরি।

ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতাকেন্দ্রিক রেনেসাঁস ছিল সমাজের শিক্ষিত ওপরতলায় সীমিত, যাঁরা আবার ধর্মে ছিলেন বর্ণহিন্দু। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি সমাজে প্রথমবারের মতো ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে মানুষের জাগরণ ঘটেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপকের সঙ্গে একই ইস্যুতে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন শ্রমিক-কৃষক সাধারণ মানুষ। এই জাগরণ ধর্ম ও শ্রেণির, এমনকি লিঙ্গের ভেদাভেদ মানেনি। এই সামাজিক বাধাগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক-সামাজিক বক্তব্য ও কর্মসূচি নিয়ে সেই ত্রিশ-চল্লিশের দশক থেকে কথা বলেছে কমিউনিস্ট পার্টি এবং সেই ধারার জোরালো অভিব্যক্তি ঘটেছে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে গড়ে ওঠা গণনাট্য সংঘ, বিভিন্ন নারী সংগঠনসহ নানান সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগের মাধ্যমে। এমনকি মার্ক্স-অ্যাঙ্গেলস-লেনিনের তাত্ত্বিক বই, গোর্কি, মায়াকোভস্কি, অস্ত্রভস্কিদের সাহিত্যপাঠ শিক্ষিত বাঙালি হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বাঙালির সংগীত ও নাটকে যে গণমুখী ধারাটি তৈরি হয়, তা-ও ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণির বিভেদ ঘুচিয়ে দিয়ে নতুন সাম্যবাদী সমাজের চেতনাকে প্রসারিত করেছিল। এই প্রভাব এত শক্তিশালী ছিল যে এর সহযাত্রী হওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উপায় ছিল না। বস্তুত, আমাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পক্ষে উগ্র সংকীর্ণ পথে চলার উপায় ছিল না, কারণ এর শরিকজনদের মধ্যে ধর্মীয় ও শ্রেণিগত ভেদাভেদ ছিল না। এর প্রবণতাই ছিল মূলে মূলে সমাজতান্ত্রিক।

এই জাগরণ যে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, তার পেছনে বঞ্চনা ও বৈষম্যের বাস্তবতার ছিল বড় ভূমিকা। দুই অর্থনীতির তত্ত্ব বা এর বিরুদ্ধে যে রাজনীতিই দানা বাঁধুক না কেন, তার ইতিবাচক ভিত্তিটা হলো সাম্য ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতার প্রতিষ্ঠা। এই বিবেচনাগুলো অবশ্য বামপন্থার বিবেচনা। ফলে সেই আন্দোলন ধনী বুর্জোয়া ও তাদের পৃষ্ঠপোষক শাসকগোষ্ঠীকে কাঠগড়ায় তুলেছিল।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি শিল্পী-সাহিত্যিক, পেশাজীবী, ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক, নারীসমাজ সবাই পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার দাবিতে পথে নেমেছিলেন। আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল এটা ঠিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই জনগণের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তা-ও ঠিক। কিন্তু এই যে ঐক্যবদ্ধ জনগণ ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানে শামিল হয়েছে, শ্রেণিবিভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজের দাবি তুলে ধরেছিল, তারা ঠিক আওয়ামী লীগের ঘোষিত রাজনীতির মাধ্যমে তা করেনি। বাঙালি মুসলমান মানসের এই রূপান্তরের কাজ ঠিক কোনো একক দল করেনি, কমিউনিস্ট পার্টিকেও এ রকম একক কৃতিত্ব দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ কথা বলা যাবে যে এর পেছনে কাজ করেছে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সামগ্রিক প্রভাব। জেগে ওঠার কালে একটি সমাজের মননের জন্য প্রচুর খোরাক প্রয়োজন, যার প্রায় সার্বিক জোগান এসেছে সমাজতান্ত্রিক মননশীল ও সৃজনশীল সাহিত্য থেকে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে রুশ বিপ্লবের আগে সে দেশেও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ অগণিত পাঠচক্র পরিচালনা করেছিলেন দেশজুড়ে।

ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বাংলায় যে ব্রিটিশ উদারনীতির চর্চা হয়েছে, বাঙালি শিক্ষিত সমাজমানসে তার প্রভাব ছিল গভীর। আর তার ওপরে বামপন্থার প্রভাব পড়েছে সহজে এবং খানিকটা বিভ্রান্ত এবং অনেকটা স্থবির সমাজকে অনিবার্য অবক্ষয়ের মুখে জড়তা ভেঙে জেগে উঠে আত্মরক্ষার জন্য আত্ম-আবিষ্কার ও বিকাশের পথে যেন ঠেলে নিয়েছে।

আর বাংলাদেশ যখন যুদ্ধে লিপ্ত, বঙ্গবন্ধু কারাগারে, তখন এর ধাত্রীর ভূমিকায় থাকা ভারত সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন প্রশাসনের উদারনৈতিক বামপন্থীরা। পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রদানের গুরুত্বও অস্বীকার করা যাবে না। সেদিন সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছিল।

১৯৬০-৭০-এর দশকে সমাজতন্ত্রের আদর্শে সোভিয়েত-সহায়তায় এশিয়া-আফ্রিকায় উপনিবেশের শৃঙ্খল ঘুচে গিয়েছিল, নতুন সম্ভাবনায় জেগে উঠেছিল তৃতীয় বিশ্ব। আজ সেই সব দেশের প্রায় প্রতিটিতেই সংকট নানা চেহারায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

২.

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ১৬ বছর আগেই ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রের পথে যাত্রা হোঁচট খায়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাল নিশ্চিতভাবেই ষড়যন্ত্রের ফল, তাতে মার্কিন ভূমিকাও এখন পরিষ্কার। কিন্তু তার আগেই ষাটের দশকে গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব ঐক্য ও আদর্শের ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিভেদ ঘুচিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তার শক্তি ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে একে লালনের কাজ হয়নি। এর সাফল্যের দৌড় কত দূর হতে পারত, তা-ও ক্ষমতাসীনেরা উপলব্ধি করেননি। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে গঠন-পুনর্গঠনে যে জাতীয় ঐক্য আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা-ও ভাবনায় আসে নিঃস্ব। স্বাধীনতার পর দেশ গড়ার কাজকে পাশ কাটিয়ে ভবিষ্যতের উচ্চাভিলাষকে পুঁজি করে পুঁজিপতিদের উত্থানপর্ব যেমন শুরু হয়, তেমনি স্বার্থান্বেষী মহল নানাভাবে সম্পদ লুণ্ঠনেও জড়িয়ে যায়। এভাবে বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রের পথে যাত্রা অঙ্কুরেই হোঁচট খায়।

তাই বলে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস বা এই পথে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার মতো দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির অভাব ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক অভিযাত্রা রুদ্ধ হয়ে যায়। এর পেছনে অবশ্যই সামরিক শাসক জিয়ার প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানপন্থী শাসন এবং পরবর্তী সেনাশাসক জেনারেল এরশাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু রাষ্ট্রের বাইরে সমাজও যে ক্রমে তার প্রগতিচেতনা হারাতে থাকল, ধর্ম-শ্রেণিচেতনা ও ভেদ বাড়তে থাকল, তার রাজনৈতিক দায় কে নেবে? একটি সহজ পথ ছিল প্রগতিপন্থী সমাজতান্ত্রিক দল বা দলগুলোকে দায়ী করা। কিন্তু এটি বড় সরল হিসাব। সমাজে কঠোর মতাদর্শিক মানুষের সংখ্যা বেশি হয় না, কিন্তু নানা কারণে সমাজে তাদের মতাদর্শের প্রভাব পড়ে ও বাড়ে। আমার ধারণা, আওয়ামী লীগ এই ধর্মনিরপেক্ষ শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সাম্যভিত্তিক সমাজ নির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে দলের ভেতরে কখনো তেমন চর্চা করেনি। দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো বার্তাও যায়নি। যাঁরা একসময় এই ভাবনায় মেতে উঠেছিলেন, তাঁরা স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেন, ভিড়ে যান জাসদে। ফলে পঁচাত্তরের পরে সহজেই দলটির একমাত্র চিন্তা-দুশ্চিন্তা হয়ে ওঠে কীভাবে ক্ষমতায় ফিরবে। বছরের হিসাবে এটি প্রতীক্ষার দীর্ঘ প্রক্রিয়াই। দুই দশকের ব্যবধানে, আওয়ামী লীগ ঘোষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দল হয়েও রাজনীতিতে ধর্মকে নিয়ে আসে। ধর্মের ব্যবহার বাড়তে বাড়তে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের পরিচয়ে ধর্মচর্চার প্রমাণ দাখিল করা জরুরি বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠছে, ওয়াহাবিপন্থী কট্টর মতাদর্শে বিশ্বাসী হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তারা আগ বাড়িয়ে অনেক ছাড় দিয়ে এবং এতকালের বন্ধুদের উপেক্ষা করে সমঝোতা করে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আমরা মনে রাখব, একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের প্রভাবে কমিউনিস্ট পার্টিও ভেঙে দুর্বল হয়েছে, তাদের মধ্যে দলত্যাগ ও নিষ্ক্রিয়তার সংকট গভীর হয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাদ মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের নতুন কৌশল নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই সময়ে এনজিও খাতের ব্যাপক বিস্তার সামাজিক উদ্যোগের মানবতাবাদী ধারাকে রাজনীতিবিমুক্ত করে ছেড়েছে। নতুনকালের তরুণ-তরুণীরা দলে দলে অরাজনৈতিক মানবিক কাজকর্মে যুক্ত হতে থাকল। আর ÿক্ষুদ্র একটি অংশ ধর্মীয় আদর্শের জোশে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। বিপরীতে জিয়া ও এরশাদের কল্যাণে এবং আওয়ামী লীগের স্বতঃপ্রণোদিত পশ্চাদযাত্রায় ছাত্র-তরুণদের রাজনীতিতে ব্যাপক অবক্ষয় ঘটে গেল। দৃশ্যমান ছাত্ররাজনীতি প্রধানত দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে। 

৩.

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষে এসে দেখছি, বাংলাদেশের রাজনীতি গভীর সংকটের মধ্যে পড়ে গেছে। ধর্মীয় মৌলবাদ সমাজে জাঁকিয়ে বসেছে, তার শক্তি আরও বাড়ছে মূলত ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহারের ফলে। এরই জের ধরে সমাজে সাম্প্রদায়িকতা, নারী নির্যাতন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান শিশু নির্যাতনও এর বাইরে নয়। ইয়াবা চোরাকারবার বা তরুণদের ব্যাপক মাদকাসক্তি কেবল আর্থসামাজিক বা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এর রাজনৈতিক দিকটিও উপেক্ষিত হওয়া উচিত হবে না।

সবাই জানি, সোভিয়েত-উত্তর বিশ্বে উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, বহুজাতিক লুণ্ঠন ইত্যাদি একতরফাভাবে বেড়েছে। গণতন্ত্রের উদার রূপ অতীতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প, মোদি, এরদোয়ানরাই সোভিয়েত-উত্তর বিশ্বনেতা। যুদ্ধের মাত্রা বেড়েছে, জনগণের জীবন ও সম্পদহানি বেড়ে চলেছে, বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, জাতিসংঘ, ইউনেসকোর মতো সংস্থা কার্যকারিতা হারাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুতর বৈশ্বিক ইস্যু, যা গোটা মানবজাতির ভবিষ্যৎকে সমস্যায় ফেলবে, তা-ও যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিজ্ঞানী মার্টিন রিজের সতর্কবার্তা কানে বাজে—একবিংশ শতাব্দী হবে মানবজাতির শেষ শতাব্দী। পুঁজিবাদের যে আগ্রাসী একাধিপত্য আজ বহাল হতে চলেছে, তার নানা বিকার দেখতে দেখতে সার্ধশতবর্ষ আগে মার্ক্সের উচ্চারিত সাবধানবাণী স্মরণে আসে, শ্রমশক্তির ওপর বেপরোয়া শোষণ চলার কারণে সমাজের নিম্নবর্গে আত্মাহুতি শুরু হয় আর তা থেকে শুরু হয় সামাজিক নৈরাজ্যের ধ্বংসযজ্ঞ। এ রকম বাস্তবতায় সব অর্থনৈতিক উন্নয়ন অচিরেই ডেকে আনে সামাজিক দুর্যোগ।

রুশ বিপ্লবোত্তর বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও সামাজিক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশে তা কী প্রকট রূপ ধারণ করেছে, সেটা কি আমরা দেখতে পাচ্ছি না?

এই সংকট ক্রমেই মানবজাতি ও তাদের ভবিষ্যৎ ধরেই টান দিতে উদ্যত হয়েছে। বিপন্ন পৃথিবীর দুর্যোগকবলিত মানুষকে পুনরায় সমাজতন্ত্রের কথাই ভাবতে হবে, তবে অবশ্যই সোভিয়েত ইউনিয়নে এর প্রয়োগের ভ্রান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠিক পথটি চিনে নিতে হবে।

আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।