'নিখোঁজ' হওয়ার শেষ কবে?

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ হিসাব দিয়েছে, বাংলাদেশে গত বছর মোট ৯০ জন মানুষ ‘গুম’ হয়েছেন। আর চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে একই পরিণতির শিকার হয়েছেন ৪২ জন। প্রথম আলোর গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আড়াই মাসে ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন ৯ জন। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র ইত্যাদি পেশার মানুষের এভাবে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা যেন এক দৈনন্দিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর অবস্থান পরিষ্কার নয়। তাদের তরফ থেকে যেসব বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসে, সেগুলো কখনো কখনো নিষ্ঠুর পরিহাস বলে মনে হয়। এমনকি খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও বলতে শোনা গেছে যে কিছু লোক নিজেরাই ইচ্ছাকৃতভাবে নিখোঁজ হয়ে বা আত্মগোপনে গিয়ে সরকারকে বিব্রত করছেন।

তবে গুম বা নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে সর্বসাধারণ্যে এমন একটি সাধারণ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে এসব ঘটনার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর হাত আছে। এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়ার একটি বড় কারণ এই যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের পরিচয় দিয়ে লোকজনকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়া’র ঘটনা অনেক ঘটেছে। সংস্থাগুলো বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কিন্তু তাতে জনগণের সন্দেহ নিরসন হচ্ছে না। মঙ্গলবার নিখোঁজ মোবাশ্বার হাসানের বন্ধুরাও এমন ধারণা প্রকাশ করেছেন যে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে থাকতে পারেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ‘আমরা নিইনি’ ধরনের বক্তব্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় না। তাদের দায়িত্ব গুম বা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া লোকজনকে উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং প্রকৃত ঘটনা জনগণকে জানানো। কিন্তু এই কাজে তাদের সাফল্যের দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। এটা যারপরনাই হতাশাব্যঞ্জক। কেননা, প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। তাদের কাছ থেকেই যদি নাগরিকেরা নিরাপত্তা না পান, তাহলে এই রাষ্ট্র ও এর শাসনব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।