নাগরিক নিরাপত্তা শূন্যের কোঠায়

সুলতানা কামাল
সুলতানা কামাল

কোনো নাগরিক যখন এভাবে নিখোঁজ হন, তখন বুঝতে হবে নিরাপত্তা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন এবং এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এমন অপরাধ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
আমার মতে, হত্যাকাণ্ডের চেয়েও এই অপরাধের মাত্রা গুরুতর। কেউ যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তখন তাঁর পরিবার-পরিজন জানতে পারেন, তিনি আর নেই। এর মধ্য দিয়ে তাঁদের উদ্বেগ-আশঙ্কার একটা পরিসমাপ্তি হয়। কিন্তু যাঁদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের শোক, দুঃখ, উদ্বেগের শেষ হয় না। তিলে তিলে দগ্ধ হন তাঁরা। যেকোনো মানদণ্ডে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিকৃষ্টতম মানবাধিকার লঙ্ঘন। যাঁরা নিখোঁজ আছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের খুঁজে বের করা। কিন্তু সেদিন শুনলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি বলেছেন, সরকারকে বিব্রত করতে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে যান। আমার প্রশ্ন, যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইছেন কেন? তাঁদের উদ্দেশ্য কী? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন, সেটা আরও ভেঙে বলা হোক। সরকারের সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষের সম্পর্ক কী? যাঁরা নিখোঁজ আছেন, তাঁদের কারণে সরকার যতটা না বিব্রত হচ্ছে, তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাচ্ছে তাঁদের পরিবার।
আমরা উৎপল দাসের মায়ের কান্না দেখেছি। আমরা নিখোঁজ মানুষগুলোর পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগাকুল চেহারা দেখছি এবং সেটা আজ থেকে নয়। ধারাবাহিকভাবে মানুষ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হচ্ছেন। পরিবারকে অগ্রাহ্য করে তাঁরা সরকারকে বিব্রত করবেন? তাঁরা এত অভিনয়পটু? একটা রাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যেতেই থাকবে, সেটা মানবাধিকারকর্মী হিসেবে মেনে নেওয়া অসম্ভব। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে হবে। বিভিন্ন সময় রহস্যজনক নিখোঁজের পেছনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাত থাকার অভিযোগ উঠছে। অনেক সময় এমনও দেখা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন এমন বক্তব্যের পর কাউকে কাউকে কোনো অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আমাদের দেশের আইন কী বলে? যেকোনো অপরাধের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁকে আদালতে উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা আছে। একটা সন্ত্রাস দিয়ে আরেকটা সন্ত্রাসকে প্রতিহত করা যায় না। এখানে সরকারের সরাসরি দায়বদ্ধতা আছে। এই মুহূর্তে এসব ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে। এটা রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা।

মানবাধিকারকর্মী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা