একই দিনের পত্রিকায় যানবাহন ও জ্বালানিসংক্রান্ত দুটি খবর। প্রথম খবরটিতে সরকারের ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) জেলা সফরসহ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনে মোটর ও জলযানের জ্বালানি বাবদ গত অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দ্বিতীয় খবরে জানানো হয়, খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গাড়ির অভাবে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তদারক করতে না পারলেও তাঁদের গাড়ি ব্যবহার করছেন মন্ত্রী, সচিব এবং তাঁদের পিএসসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (উপসচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যন্ত) সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে একটি সিডান কার বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। বরাদ্দ হওয়া যানবাহন চালানোর অনুমোদন পাওয়া কর্মকর্তারা মাসিক ১৮০ লিটার পেট্রল অথবা সিএনজিচালিত গাড়িতে স্টার্টআপ হিসেবে ২৭ লিটার পেট্রল ও ২৭০ ঘনমিটার গ্যাস জ্বালানি হিসেবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় থেকে পেয়ে থাকেন।
ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের পেছনে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বছরে জ্বালানি খরচের যে হিসাব দিয়েছেন, প্রকৃত খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি। এই ধারণার পেছনে অকাট্য প্রমাণ হলো খাদ্য অধিদপ্তরের গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার। খাদ্য অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব এবং তাঁদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা। এসব যানবাহনে যে জ্বালানি খরচ হয়, তা কোন উৎস থেকে ব্যয় করা হয়, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই শুভংকরের ফাঁকি ধরা পড়বে।
কেবল খাদ্য অধিদপ্তরই–বা কেন, বিভিন্ন অধিদপ্তর ও প্রকল্পের গাড়ি যঁাদের নামে বরাদ্দ করা হয়, তাঁরা সেটি করতে পারেন না বা করতে দেওয়া হয় না। ব্যবহার করেন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা। খাদ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ‘এমন কোনো মন্ত্রণালয় পাওয়া যাবে না, যেখানে অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে না।’ তাহলে কি আমরা অন্যায়কে নিয়ম হিসেবে মেনে নেব? সেটি হতে পারে না। যে কাজে যে গাড়ি বরাদ্দ করা হয়, সে কাজেই তা ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় গাড়ি ফেরত দিতে হবে। আরও উদ্বেগের বিষয়, কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবৈধভাবে খাদ্য অধিদপ্তরের গাড়ির চালককে ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত কাজে। অর্থাৎ অবসর নেওয়ার পরও তাঁরা অবৈধভাবে সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন। এই স্বেচ্ছাচারিতা চলতে পারে না। সরকারি গাড়ি ও জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।