যেন রওশনের মতো বিড়ম্বিত না হন ক্যাথরিন

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

দেশে ক্ষতিপূরণ আইন কার্যকর হওয়ার প্রশ্নটি আইনের শাসন ও সুশাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই দেশে টর্ট বা ক্ষতিপূরণ আইনের কার্যকারিতা উপেক্ষিত হওয়ার মধ্যে আমরা উচ্চ আদালত থেকে একটি বিরল রায় পেলাম।

চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ রোববার প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট করেছেন। একই দুর্ঘটনায় নিহত মিশুক মুনীরের পরিবারের দায়ের করা ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানি চলমান। প্রশ্ন হলো ওই রায়ের বাস্তবায়ন যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে হবে কি?

১৯৮৯ সালে সংবাদ-এর বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর বিধবা স্ত্রী রওশন আখতার, যিনি জগন্নাথ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন, তিনি রোববার তাঁর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের যে অমানবিক বিবরণ তুলে ধরেছেন, তাতে আমরা বিস্ময়ে স্তম্ভিত, বেদনায় মূঢ়। গত ২৬ বছরে তিনি যথাক্রমে বিচারিক আদালত, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ে চূড়ান্তভাবে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ডিক্রি লাভ করলেও, আজ পর্যন্ত একটি টাকাও পাননি। বরং পরিহাস হলো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে তাঁকে আবার নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র হতভাগ্য রওশন আখতারকে পদে পদে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত করে চলেছে। নিরুপায় হয়ে এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী।

রওশনের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে সাব্যস্ত হওয়া সাড়ে তিন কোটি টাকা চূড়ান্ত হলো প্রায় অর্ধেকে। ক্যাথরিন মাসুদের পৌনে পাঁচ কোটি টাকা শেষ পর্যন্ত কবে কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তা আমরা জানি না। রওশন তাঁর নাবালক দুই পুত্রকে (নয় ও পাঁচ বছর বয়সী ছিল) ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড়াই বড় করেছেন। ক্যাথরিন মাসুদ তাঁর নাবালক পুত্র নিষাদের জন্য ওই টাকা বাস্তবে পাবেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই গেল। ক্যাথরিন ভাগ্যবান যে তাঁর মামলায় তিনি ইতিহাস গড়েছেন। এই প্রথম সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদের আওতায় হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতে দায়ের করা ক্ষতিপূরণ মামলা প্রত্যাহার করে নিজেরাই বিচারিক আদালত হিসেবে রায় দিয়েছেন।

আমরা মনে করি, এই মাইলফলক রায় এবং তার আগের সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেনের রায় বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রের কার্যকর পদক্ষেপ অপরিহার্য। এ ব্যাপারে আমরা উচ্চপর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ আশা করি।    

আশা করব, রওশনের মতো যেন বিড়ম্বিত না হন ক্যাথরিন। রওশনের পর ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের স্ত্রী যে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা টর্ট আইনের বন্ধ দুয়ার খুলে দেবে। তাঁদের অভিবাদন।