ওদের বাঁচতে দিন, অপরিণত শিশুদের জন্য মমতাপূর্ণ যত্ন

গত ১৪ নভেম্বর ২০১৭, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘ওদের বাঁচতে দিন: অপরিণত শিশুদের জন্য মমতাপূর্ণ যত্ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ
* পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় নবজাতকের বিশেষ সেবাকেন্দ্র (স্ক্যানু) চালু করা জরুরি
* অপরিণত শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সচেতন করে তোলা প্রয়োজন
* গর্ভবতী মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে
* গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করা দরকার
* অপরিণত শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে আরও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ ও নার্স নিয়োগ করতে হবে
* স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান জন্মদানের হার অনেক বাড়াতে হবে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম: যেসব শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে, তাদের অপরিণত শিশু বলা হয় এবং এই শিশুদের জন্মের পর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। যদি অপরিণত শিশুদের যথাযথ যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে দেখা গেছে যে এদের প্রায় ৭৫ শতাংশকে বঁাচানো সম্ভব। আমরা যদি এই শিশুদের বঁাচাতে পারি, তাহলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

অপরিণত শিশুদের জন্মের পর কীভাবে তাদের যত্ন নেওয়া উচিত, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের আজকের এই গোলটেবিল আলোচনা আয়োজিত হয়েছে।

জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক

জাহিদ মালেক
বাংলাদেশে অপরিণত শিশুর জন্ম এবং যত্নের অভাবে তার মৃত্যু একটি উদ্বেগজনক বিষয়। আমাদের অপরিণত শিশুর জন্ম যেমন কমাতে হবে, তেমনি শিশু যদি অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়ও, তার যথাযথ যত্ন নিয়ে তাকে বঁাচানোর জন্যও কাজ করতে হবে।বিভিন্ন কারণে যদি অপরিণত শিশুর জন্ম হয়েও যায়, তাহলে যথাযথ যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে সেই শিশুকে বঁাচানো সম্ভব। এর জন্য অবশ্যই শিশুর মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সচেতন থাকতে হবে।আমাদের দেশে এখনো প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুর জন্ম বাড়িতে হয়। ফলে সন্তান জন্মদানের সময় যেন মায়ের পাশে একজন দক্ষ দাই থাকেন, সন্তান প্রসবের সময় যেন হাতের কাছে সব প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকে এবং যেকোনো সংকটে যেন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই প্রস্তুতি থাকতে হবে।

জিয়াউল মতিন
জিয়াউল মতিন

জিয়াউল মতিন
প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৬২ হাজার নবজাতক মৃত্যুবরণ করছে। এর এক-তৃতীয়াংশ নবজাতক অপরিণত অবস্থায় জন্মলাভের কারণে মারা যাচ্ছে। এটি একটি বিশাল সংখ্যা। আমরা যদি আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, তাহলে অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুহার অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।

আমাদের বর্তমানে যে সুযোগ-সুবিধা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা দিয়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ অপরিণত নবজাতকের মৃত্যু রোধ করতে পারি। বাংলাদেশে প্রায় ১৪ শতাংশ নবজাতক ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে থাকে এবং ২২ শতাংশ নবজাতক ২ হাজার ৫০০ গ্রামের কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আমাদের দেশে মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশু বেশি অপরিণত নবজাতক হিসেবে জন্মগ্রহণ করে থাকে। এই উপাত্তগুলো আমাদের হাতে রয়েছে। এখন এ উপাত্তগুলো ব্যবহার করে অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস করার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

শিশুর মৃত্যুহার হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য থাকলেও নবজাতক ও অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস করার ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। বর্তমানে আমাদের দেশে পঁাচ বছরের নিচে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশ হলো নবজাতক। আর নবজাতক মৃত্যুর প্রায় এক–তৃতীয়াংশ ঘটে অপরিণত জন্মের কারণে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার
মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার
নবজাতক ও অপরিণত নবজাতকের পরিচর্যার জন্য সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা শুরু করেছি। বিশেষ করে, ইউনিসেফ যে জেলাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সেই জেলাগুলোতে আমরা এই সেবাগুলো আগে শুরু করেছি।

অপরিণত নবজাতকের যে জটিলতাগুলো দেখা যায়, সেগুলোকে রোধ করার জন্যও আমরা কাজ করছি। অসুস্থ নবজাতকের যথাযথ চিকিৎসার জন্য ৪২টি হাসপাতালে নবজাতকের বিশেষ সেবাকেন্দ্র (স্ক্যানু) চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এখনো দেশের হাসপাতালগুলোতে নবজাতকের বিশেষ সেবাকেন্দ্র তেমন একটা নেই। এই সেবা দ্রুত শুরু করা দরকার। এ বছরের নভেম্বর মাস থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় সারা দেশে আমাদের নবজাতকের পরিচর্যাবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচারণা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই প্রচারণার মাধ্যমে আমরা সারা দেশে নবজাতকের পরিচর্যায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন বার্তা প্রচার করব।

নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম

নজরুল ইসলাম
আমরা সরকারকে নবজাতকের পরিচর্যায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স ও মিডওয়াইফদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি। সারা দেশের ৩০টি হাসপাতালে আমরা ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার’ (শিশুর দেহের তাপমাত্রা যেন খুব কমে না যায়, সে জন্য মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখা) সুবিধা চালু করার ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা প্রদান করেছি। এই কর্মসূচির আওতায় আরও হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে পর্যায়ক্রমে নিয়ে আসা হবে।আমরা সরকারকে যে সহায়তাগুলো দিচ্ছি, তার সবই নবজাতক ও অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাসের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এই কাজ করার সময় আমরা সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি। এভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে যদি আমরা ভবিষ্যতে কাজ করে যেতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের নবজাতক ও অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।

ওয়াহিদা সিরাজ
ওয়াহিদা সিরাজ

ওয়াহিদা সিরাজ
১৯৯০ সালের পর থেকে শিশু ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা প্রায় িতন দশক পার করে এসেছি। প্রথম দিকে কাজ করেছি শিশুমৃত্যু হ্রাসের জন্য, পরবর্তী সময়ে কাজ করেছি নবজাতকদের স্বাস্থ্য নিয়ে এবং এখন আমরা একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে অপরিণত নবজাতকদের নিয়ে কাজ করছি।

এ ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের প্রকৃত চ্যালেঞ্জ এখন শুরু হতে যাচ্ছে। কারণ, অপরিণত নবজাতকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের যে সেবাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে সঠিক ও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়।

এই সেবাগুলোর কার্যকর প্রয়োগ করার জন্য আমাদের খুবই ধীরগতিতে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, অপরিণত নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার কাজটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অপরিণত নবজাতকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে সেবা প্রদানের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।

ইমতিয়াজ মান্নান
ইমতিয়াজ মান্নান

ইমতিয়াজ মান্নান
গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও প্রসব-পরবর্তী মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবায় অনেক দূর এগিয়েছি আমরা।কিন্তু এখন আমাদের সামনে যে পথটুকু রয়েছে, সেটিই সবচেয়ে কঠিন পথ। আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আরও অনেক দূর যেতে হবে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে।

অপরিণত নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিশু যেন অপরিণত বয়সে না জন্মায়, সে লক্ষ্যেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোকবলের অভাব থাকার কারণে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী এখন সেখানে কাজ করছেন, তঁাদের ওপর কাজের চাপ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তঁারা দক্ষতা ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত সেবা দিতে পারছেন না। ফলে আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে লোকবল বৃদ্ধি করে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

আহসানুল ইসলাম
আহসানুল ইসলাম

আহসানুল ইসলাম
আমাদের দেশে অপরিণত নবজাতকের জন্ম হ্রাস করতে হলে কমিউনিটি পর্যায়ে যেসব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এর  পাশাপাশি এই কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কম খরচে করা যায় এমন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে খুব সহজেই ও যথাসময়ে চিহ্নিত করা যাবে যে কোন কোন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন জটিলতা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী তঁাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যাবে।

নওরোজ জাহান
নওরোজ জাহান

নওরোজ জাহান
সারা দেশে ব্র্যাকের ৫৪টি মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে দক্ষ মিডওয়াইফের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রথম দিকে আমরা নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশুস্বাস্থ্যের ওপর জোর দিলেও বর্তমানে নবজাতক ও অপরিণত নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছি।

অপরিণত শিশুর জন্ম রোধ করার জন্য আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের জন্য বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে নিয়ে আসা।

অনেক গর্ভবতী মা গর্ভকালীন নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন না অথবা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে আসতে পারেন না। এই গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমাদের অপরিণত শিশু জন্মের অন্যতম বড় একটি কারণ হলো নারীদের প্রতি সহিংসতা। গর্ভকালীন যদি একজন মা কোনো পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন, তাহলে সেটি তাঁর সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যেন গর্ভবতী মায়েদের সঙ্গে কোনো প্রকার পারিবারিক বা সামাজিক সহিংসতা না ঘটে।

লায়লা আরজুমান্দ বানু
লায়লা আরজুমান্দ বানু

লায়লা আরজুমান্দ বানু
আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েদের চিহ্নিত করতে হবে। অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণে তিনি অপরিণত সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। ফলে আমাদের গর্ভাবস্থাতেই মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোন মায়েদের অপরিণত সন্তান জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেটি নির্ধারিত করে সে অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

আরেকটি বিষয় দেখা যায় যে কোনো অঞ্চলে বা এলাকায় গর্ভবতী মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা অনেক বেশি রয়েছে আবার কোনো অঞ্চলে একেবারেই নেই বা যতখানি আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সারা দেশের সব অঞ্চলে নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা যেন সমপরিমাণে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।

তাহমিনা বেগম
তাহমিনা বেগম

তাহমিনা বেগম
আমাদের আজকের এই আলোচনার বিষয় হচ্ছে অপরিণত শিশুদের জন্য মমতাপূর্ণ যত্ন। শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নিলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বঁাচানোর জন্য যেসব যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, আজকের আলোচনায় সেটা এসেছে।

কিন্তু আমি আলোচনা করতে চাই যেসব অপরিণত শিশু বেঁচে যাচ্ছে, তাদের যে দীর্ঘমেয়াদি একটি যত্নের প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়টি নিয়ে। একটি অপরিণত নবজাতক হয়তো জন্মের পর যত্ন নেওয়ার ফলে বেঁচে যাচ্ছে। কিন্তু এই শিশুর যখন বয়স বাড়ছে, তখন তার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত ও শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে থাকে।

যেসব শিশু ৩২ সপ্তাহের কম সময় গর্ভে থেকে জন্মগ্রহণ করে, তাদের বেশির ভাগই পরবর্তী সময়ে চোখে দেখে না। কারণ, তাদের রেটিনা ঠিকমতো গঠিত হয় না। তাই বলা যায়, অপরিণত শিশুগুলো বেঁচে থাকে, কিন্তু বেঁচে থাকার মতো বেঁচে থাকে না।

অপরিণত শিশুর জন্মের পর তার যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মাধ্যমে জটিলতাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক জটিলতার হাত থেকেই তাকে মুক্ত করা সম্ভব। আর এর জন্য অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

নাসিমা পারভীন
নাসিমা পারভীন

নাসিমা পারভীন
অপরিণত শিশুর জন্মের পর তার পরিপূর্ণ যত্ন নিশ্চিত করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে নার্সদের। একজন দক্ষ নার্স অপরিণত শিশুর জন্মের পরপর তার কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং সেই জটিলতাগুলো নিরসনের জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, তা জানবেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের অভাব রয়েছে। আর এই অভাব পূরণ করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরাসরি সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সারা দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের এই চেষ্টার ফল খুব দ্রুতই দৃশ্যমান হবে বলে আশা করছি এবং তখন অপরিণত শিশুর যত্ন এবং শিশুর অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ রোধ করতে আমরা আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারব বলে আশা করছি।

এম এ কে আজাদ চৌধুরী
এম এ কে আজাদ চৌধুরী

এম এ কে আজাদ চৌধুরী
আমরা ২০১৩ সালে নবজাতক ফোরাম এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা মিলে ইউনিসেফের একটি নবজাতকের স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিমালা তৈরি করেছিলাম। এই নীতিমালায় একটি নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে দেওয়া হবে, তার বিস্তারিত বলা রয়েছে। এই নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শিশু হাসপাতালে ২০১৩ সাল থেকে আমরা ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বা কেএমসি দেওয়ার অনুশীলন করছি। এখন অনেক দক্ষতার সঙ্গে এ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে আমরা ধীরে ধীরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এই কেএমসি সেবাটি নিয়ে যেতে পারি। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত একজন নার্সকেও যদি এই প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলেই তিনি সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা অপরিণত শিশুদের কেএমসি সেবা দিতে পারবে।

মজিবুর রহমান
মজিবুর রহমান

মজিবুর রহমান
১৯৯৮ সালে শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেড় বছর আগে আমরা নবজাতক শিশুদের জন্য বিশেষ সেবা বিভাগ চালু করি। এই সেবা চালু করার পর থেকে আমরা ১ হাজার ৯৬৫ জন নবজাতককে সেবা প্রদান করেছি। তাদের মধ্যে ৬১২ জন অপরিণত শিশু ছিল।

আমরা জানি, অপরিণত শিশুর একটি বড় ঝুঁকি থাকে রেটিনা ক্ষয় হয়ে যাওয়ার, যাকে আরওপি বলা হয়ে থাকে। আমরা একটি অপরিণত শিশুর আরওপি পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম তার বাবা-মাকে। শিশুটির বাবা-মা পরীক্ষা করাতে রাজি থাকলেও তার দাদি তখন বলেছিলেন যে এটা কয়েক মাস পরে করলেও চলবে। কিন্তু কয়েক মাস পর যখন তাঁরা শিশুটির আরওপি পরীক্ষা করালেন, তখন দেখা গেল যে তার রেটিনা ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে এবং শিশুটি সারা জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে আমাদের অপরিণত শিশুর বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সচেতন করার জন্য কাজ করতে হবে।

এম এ মান্নান
এম এ মান্নান

এম এ মান্নান
অপরিণত শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ তিনটি। শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ঠিকমতো খেতে না পারা ও সংক্রমণ। এই তিন কারণই ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বা কেএমসির মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শিশু যেন ঠান্ডা না হয়ে যায়, সে জন্য কেএমসিতে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখা হয়। অপরিণত শিশুর খাবারের ক্ষেত্রে একমাত্র উপযুক্ত খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। এ ক্ষেত্রে শিশুর যদি বুকের দুধ সরাসরি খাওয়ার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে তাকে বিকল্প পদ্ধতিতে খাওয়াতে হবে। আর সংক্রমণ থেকে অপরিণত শিশুকে রক্ষা করার জন্য অবশ্যই মা, চিকিৎসক ও সেবাদানকারী নার্সকে হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। এই তিন বিষয় নিশ্চিত করা গেলে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অপরিণত শিশুর মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।

ইফতেখার রশিদ
ইফতেখার রশিদ

ইফতেখার রশিদ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে মিলিতভাবে আমরা বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি, যেখানে গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি রয়েছে।

একই সঙ্গে আমাদের সামাজিক একটি সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের সব স্তরের মানুষ যেন এই বিষয়ে সচেতন থাকে যে অপরিণত বয়সে যদি কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাহলে তার জন্য পৃথকভাবে এবং বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে।

আর আমাদের এই বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে দেখা  যাচ্ছে, কোনো অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় সেবা বেশি, আবার কোনো অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় সেবা কম। ফলে আমাদের সব সংস্থা, প্রকল্প ও কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

খালেদা ইসলাম
খালেদা ইসলাম

খালেদা ইসলাম
জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর। আমরা এই কর্মসূচির বাস্তবায়নকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে গ্রামের একজন শ্বশুর তঁার গর্ভবতী পুত্রবধূকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা করবেন। গ্রামের একজন শাশুড়ি যেন তঁার গর্ভবতী পুত্রবধূকে মাছের বড় টুকরাটি দেন। গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে যেন অপরিণত একটি শিশুকে প্রাথমিক সেবা দেওয়ার মতো সুযোগ-সুবিধা থাকে। সে শিশুকে যদি উন্নত সেবার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে যেন গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকে। আমরা সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী যে এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।আর একটি অপরিণত শিশুও পরিবারের জন্য অনেক খুশি নিয়ে আসে, পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমরা এই খুশি ধরে রাখব।

মোহাম্মদ শরীফ
মোহাম্মদ শরীফ

মোহাম্মদ শরীফ
আমাদের দেশে অপরিণত শিশুর জন্মের একটি বড় কারণ হলো মেয়েদের অল্প বয়সে গর্ভধারণ।  কিশোরী বয়সেই অনেক মেয়ে গর্ভধারণ করছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, তার নবজাতক অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করছে। আরেকটি বড় কারণ হলো সন্তান ধারণের মধ্যবর্তী বিরতি অনেক কম। এতে একজন মা তাঁর আগের সন্তান বড় হওয়ার আগেই আবার গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছেন। ফলে তিনি না সন্তানের যত্ন নিতে পারছেন, না নিজের যত্ন নিতে পারছেন। ফলে সন্তান ধারণের মধ্যবর্তী বিরতির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্যও কাজ করতে হবে। অপরিণত শিশুর জন্মের পর তার যথাযথ যত্ন নিশ্চিত করার জন্য মিডওয়াইফরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আমাদের প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফের সংকট ছিল। এই সংকট নিরসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জাহিদ মালেক
অপরিণত শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা, চিকিৎসাদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এখন প্রয়োজন সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা। আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সুযোগ-সুবিধা তৈরি করলাম কিন্তু যেসব মা-বাবার অপরিণত সন্তান জন্ম নেবে, তঁারা যদি সেই শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে না আসেন, তাহলে এই সেবা কার্যকর হবে না।

আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার এখন উন্নয়ন হয়েছে। ফলে গ্রামীণ অঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিবেশেরও উন্নতি হয়েছে। আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি বিরাট অবকাঠামো রয়েছে। কিন্তু এই অবকাঠামোকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য যে দক্ষ জনশক্তি দরকার, সেটি নেই।

স্বাস্থ্য খাতে জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং ইতিমধ্যেই চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অপরিণত শিশুর জন্ম রোধ করতে হলে প্রথমেই আমাদের মায়েদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। একজন গর্ভবতী মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, তাহলে তঁার অপরিণত শিশু জন্মদানের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কাজেই আমাদের মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বসহকারে নজর দিতে হবে।

আব্দুল কাইয়ুম
সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা অপরিণত শিশুর মৃত্যু হ্রাস করতে পারি। সংবাদমাধ্যম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি।

অপরিণত শিশুর সঠিক পরিচর্যা না হলে ভবিষ্যতে এ শিশুর জীবনে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিষয়টি সবার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

                                                                                                                     যাঁরা অংশ নিলেন

জাহিদ মালেক   

সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়

মোহাম্মদ শরীফ  

পরিচালক, এমসিএইচএস অ্যান্ড এলডি-পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

এম এ কে আজাদ চৌধুরী

মহাসচিব, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক  অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)

খালেদা ইসলাম  

 পরিচালক, পিএইচসি অ্যান্ড পিএম. আইএমসিআই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

পরিচালক, ডিজিএইচএস ও লাইন ডিরেক্টর, এমএনসি অ্যান্ড এএইচ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এম এ মান্নান  

চেয়ারম্যান, নিওনেটালজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

জিয়াউল মতিন   

হেলথ ম্যানেজার, স্বাস্থ্য বিভাগ, ইউনিসেফ

নওরোজ জাহান

 প্রোগ্রাম ম্যানেজার, হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন সায়েন্স, ব্র্যাক

লায়লা আরজুমান্দ বানু

সভাপতি, ওজিএসবি

মজিবুর রহমান  

সহকারী অধ্যাপক, নিওনেটালজি বিভাগ, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল

তাহমিনা বেগম

সভাপতি, বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম

আহসানুল ইসলাম

কো–অর্ডিনেটর, হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং, কেয়ার বাংলাদেশ

ইফতেখার রশিদ   

হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং টিম লিড, ইউএসএআইডি

নজরুল ইসলাম  

পরিচালক, সেভিং নিউ বর্ন লাইভস, সেভ দ্য চিলড্রেন

নাসিমা পারভীন 

পরিচালক, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি সার্ভিস, ডিজিএনএম

ইমতিয়াজ মান্নান  

 সিনিয়র অ্যাডভাইজর, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন, মা-মণি প্রকল্প, সেভ দ্য চিলড্রেন

ওয়াহিদা সিরাজ   

ম্যানেজার, নিউ বর্ন স্কেল আপ, সেভিং নিউ বর্ন লাইভস, সেভ দ্য চিলড্রেন

                                                                                                                           সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম 

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো