আত্মনির্ভরশীল শিশু বেড়ে উঠুক দৃঢ়তায়

গত ২৫ নভেম্বর ২০১৭, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘আত্মনির্ভরশীল শিশু বেড়ে উঠুক দৃঢ়তায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।


যাঁরা অংশ নিলেন
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : সভাপতি, কচি-কঁাচার মেলা
শাহানা নাসরিন : সহযোগী অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুলতানা আলগিন : সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
গওহার নঈম ওয়ারা : শিক্ষক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনার্যা্বিলিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ মোহসীন : শিক্ষা ব্যবস্থাপক, ইউনিসেফ, বাংলাদেশ
লায়লা খন্দকার : পরিচালক, শিশু সুরক্ষা, সেভ দ্য চিলড্রেন
মেহেরুন নাহার : প্রকল্প পরিচালক, শিশু শিক্ষা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা জনগোষ্ঠী
মাবিয়া আকতার সীমান্ত : দক্ষিণ এশীয় গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী (ভারোত্তোলন)
মৌটুসী বিশ্বাস : অভিনয়শিল্পী
মাহমুদা সিদ্দিকা এলিজা : ডেপুটি স্পিকার, চাইল্ড পার্লামেন্ট, এনসিটিএফ
আদিব কিবরিয়া : সদস্য, কচি-কঁাচার মেলা
জান্নাতুল ফেরদৌস : পথশিশু
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ
* শহরে শিশুদের খেলার মাঠ আরও বাড়ানো প্রয়োজন
* পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখতে হবে
* শিশুর আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে বাবা-মায়ের সচেতন হওয়া প্রয়োজন
* প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে
* শিশু নির্যাতন রোধ করে সহনশীল আচরণ করতে হবে
* শিশুদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত
* শিশুর মানসিক বিকাশ ও উন্নত ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: শিশুকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তা নাহলে বড় হয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তগ্রহণে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। বড়দের একধরনের প্রবণতা হলো শিশুদের মতামতের প্রাধান্য না দেওয়া।
আমিই ভালো বুঝি আমাদের মধ্যে এমন একটা ধারণা কাজ করে। অনেক সময় আমরা শিশুদের ধমক দিয়ে বলি, বড়দের মাঝে কথা বোলো কেন। আমাদের এ ধরনের আচরণ শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর।
আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা ও শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার উপায়গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা। এ বিষয়ে এখন আলোচনা করবেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: কোনো শিশুই মাতৃগর্ভ থেকে ব্যক্তিত্ব ও আত্মনির্ভরশীলতা শিখে আসে না। একটি শিশুর জীবনের প্রথম পঁাচ বছরের মধ্যেই মোটামুটি তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠিত হয়ে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে িশশুর ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়।
প্রথম পঁাচ বছরে একটি শিশু তার আশপাশে যা দেখে, যাদের সঙ্গে চলাফেরা করে, তাদের কাছ থেকেই বিভিন্ন মানবীয় গুযণ শিখে থাকে। এটিকে বলা হয় শিক্ষণপ্রক্রিয়া।
মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন কোষ থাকে। দেহের অন্যান্য কোষ বয়সের সঙ্গে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হলেও মস্তিষ্কের কোষের সংখ্যা একজন মানুষের জীবদ্দশায় অপরিবর্তিত থাকে। আর একটি শিশু বেড়ে ওঠার সময় তাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য, আবেগ, অনুভূতি ও স্মৃতি সংরক্ষিত হতে থাকে। আর এই বিষয়গুলোই তার ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।
একটি শিশু যখন বেড়ে ওঠে, তখন তার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য তার সামনে ইতিবাচক আবেগ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা আমাদের সবার কর্তব্য।
উন্নত দেশগুলোতে এই কাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি করা হয় না। আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখানো হয় না। ফলে শিশুর ব্যক্তিত্বও ঠিকমতো গড়ে ওঠে না। এই শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তাদের মাঝে আদর্শ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আমরা কচি-কঁাচার মেলায় এই কাজটি করার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা শিশুদের খুবই অল্প সময়ের জন্য আমাদের মাঝে পাই। ফলে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের কাজটি করা আমাদের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। শিশুর মাঝে নৈতিকতাবোধ তৈরি ও তাদের উৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে।

শাহানা নাসরিন
শাহানা নাসরিন

শাহানা নাসরিন: শিশুদের ব্যক্তিত্বের গঠন আমাদের সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ, আমরা যে শিশুকে আজ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখাব, কাল তাদেরই আমরা আলোকিত মানুষ হিসেবে আমাদের সমাজে পাব। ফলে, একটি শিশুর প্রাথমিক জীবনে তার মধ্যে মানবীয় গুণাবলি তৈরি করা এবং তার ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের একটি ধারণা রয়েছে যে শুধু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরই হয়তো ব্যক্তিত্ব গঠন ও নৈতিকতা শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। যেসব শিশু সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তাদের এসবের কোনো দরকার নেই। এই ধারণা একেবারেই ভুল। সব শিশুরই প্রাথমিক জীবনে নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
যে শিশুটি আজ ভালো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে, তারও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে, তার ব্যক্তিত্ব গঠনেও আমাদের নজর দিতে হবে।
আর এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি শিশুর চারপাশের পরিবেশের সব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুর সঙ্গে তার পিতা-মাতার সম্পর্ক, পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সম্পর্ক, বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক, তার খেলার সঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক—এ সবকিছুই একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে।
শিশুর মানসিক বিকাশ ও উন্নত ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেক পিতা-মাতা তঁাদের সন্তানদের খেলতে দেন না। তঁারা মনে করেন, খেলাধুলার মাধ্যমে সময় নষ্ট হয়, পড়াশোনার ক্ষতি হয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন শিশু কিন্তু খেলার সময় তার কল্পনাশক্তি ব্যবহার করছে।
খেলার সময় একটি শিশু অন্য আরেকটি শিশুর সঙ্গে কীভাবে মিশতে হয়, সেটি শিখছে। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগের প্রক্রিয়া শিখছে এবং খেলার সময় শিশুর শারীরিক বিকাশও ঘটছে। ফলে, পিতা-মাতার উচিত তঁাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলার সুযোগ করে দেওয়া।

মাবিয়া আকতার সীমান্ত
মাবিয়া আকতার সীমান্ত

মাবিয়া আকতার সীমান্ত: আমি যেহেতু খেলাধুলার মানুষ, তাই শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠন ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব নিয়েই কথা বলতে চাই। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের ওপর লেখাপড়ার এত চাপ ছিল না। কিন্তু এখন আমি দেখি যে দুই বছর বা তিন বছরের বাচ্চারা বড় ব্যাগ কঁাধে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে সকালবেলা। অথচ আমরা এই বয়সটাতে সারা দিন ছুটোছুটি করে বেড়িয়েছি, খেলাধুলা করেছি।
ভালো মানুষ হয়ে উঠতে হলে পড়াশোনার অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি একটি শিশুর খেলাধুলা করাও প্রয়োজন। কারণ, খেলাধুলার মাধ্যমেও শিশু অনেক কিছু শিখতে পারে, অনেক বিষয় বুঝতে পারে। তাই, আমি মনে করি, শিশুদের একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত খেলাধুলার মাধ্যমে শেখার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
আরেকটি বিষয় দেখা যায় যে পিতা-মাতা তঁাদের সন্তানদের ভালো ফল করার জন্য অনেক চাপ দেন। তোমার ক্লাসে প্রথম হতেই হবে, পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেতেই হবে। এই চাপের কারণে অনেক শিশুই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তখন তারা তাদের মনের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আর কিছু করে না। তাদের যা করতে ভালো লাগে, যেটি করতে তাদের আনন্দ লাগে, সেটি তারা করতে পারে না। এটি একটি শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ভালো ফল করা জরুরি বিষয়, কিন্তু সেটি করতে গিয়ে একটি শিশুর কল্পনাশক্তি ধ্বংস করে দেওয়াটা ঠিক নয়। পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাইকে এটা চিন্তা করতে হবে যে শিশুটি কী করতে চায়, সে কী করতে ভালোবাসে। তাকে তার পছন্দের কাজটি করতে দেওয়া উচিত।

আদিব কিবরিয়া
আদিব কিবরিয়া

আদিব কিবরিয়া: আমরা শিশুরা ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি দিন আনন্দের মধ্য দিয়ে শুরু ও শেষ করতে চাই। ছোটবেলা থেকেই আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হতে থাকে। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন ভেজালমুক্ত খাবার, ভালো পরিবেশ, থাকার জন্য খোলামেলা বাসস্থান, খেলার জন্য ঘাসের খোলা মাঠ এবং শিক্ষার জন্য ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
কিন্তু বর্তমানে আমরা এসবের প্রায় কিছুই পাচ্ছি না। চারদিকে কালো ধেঁায়া, অনিরাপদ পানি, ভেজালযুক্ত খাবার, বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের শারীরিক আঘাত ও বাজে ভাষায় কথা বলা। এ ছাড়া বাসায় রয়েছে বাবা-মায়ের চোখ রাঙানি, ক্লাসে প্রথম হতেই হবে, জিপিএ-৫ পেতেই হবে।
আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠগুলো কংক্রিটের। খেলার সময় এই মাঠগুলোতে পড়ে গেলে আমরা ব্যথা পাই। আমাদের স্কুলের ব্যাগগুলো বইয়ের ওজনে অনেক ভারী হয়। এগুলো বহন করতে অনেক কষ্ট হয়।
অনেক বন্ধুকেই দেখি স্কুলের পর কোচিংয়ে যেতে। যদি স্কুলের শিক্ষকেরা স্কুলের পড়া স্কুলেই শিখিয়ে দিতেন, তাহলে আর কোচিংয়ে যেতে হতো না।
আমরা শিশুরা এই পৃথিবীতে ভালো এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা চাই সব স্কুল যেন হয় কচি-কঁাচার মেলার মতো। যেখানে বড়রা ছোটদের স্নেহ করবেন। ছোটরা শিখবে নির্ভয়ে ও আনন্দের সঙ্গে। আমরা চাই ছেলে ও মেয়েশিশুরা সমান সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিয়ে বেড়ে উঠবে।

জান্নাতুল ফেরদৌস
জান্নাতুল ফেরদৌস

জান্নাতুল ফেরদৌস: আমার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। আমি এএসডির একটি হোমে থাকি। আমি আগে একজন পথশিশু ছিলাম। সেখানে আমার থাকা-খাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। রাস্তায় ঘুমাতাম। অনেক অত্যাচারের শিকার হয়েছি।
আমি চাই, কোনো শিশুকে যেন আমার মতো রাস্তায় না থাকতে হয়। সব শিশু যেন সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন কাটাতে পারে। আমার মতো কষ্ট যেন তাদের না পেতে হয়। সে জন্য সমাজের সবার কাজ করা উচিত।
রাস্তার জীবনটা খুবই কষ্টের। যে শিশুরা রাস্তায় থাকে, কেবল তারাই জানে রাস্তায় থাকা কতটা কঠিন। রাস্তার শিশু ঠিকমতো খেতে পারে না, ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। তাই আমার এটুকুই অনুরোধ থাকবে যে আমার মতো কোনো শিশুকে যেন রাস্তায় না থাকতে হয়, সেটি নিশ্চিত করা হোক।

মাহমুদা সিদ্দিকা এলিজা
মাহমুদা সিদ্দিকা এলিজা

মাহমুদা সিদ্দিকা এলিজা: শিশুর বিকাশ বলতে আমরা তার দৈহিক ও মানসিক—দুই ধরনের বিকাশকেই বুঝি। কিন্তু বর্তমানে শিশুর দৈহিক বিকাশ ঘটলেও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো ঘটছে না।
আমাদের জাতীয় শিশুনীতি, ২০১১ বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সুদূরপ্রসারী রূপকল্প। এই নীতি অনুসারে পর্যাপ্ত বিনোদন শিশুদের অধিকার।
বর্তমানে আমরা, শিশুরা এই বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছি না। দেখা যায়, আমাদের স্কুলগুলোতে কোনো খেলার মাঠ নেই। অথচ রাস্তার মোড়ে রয়েছে খেলনার দোকান, বড় বিনোদন পার্ক, নাচ-গান শেখার জন্য বিভিন্ন কোচিং। এর কোনোটিই শিশুদের প্রকৃত বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
বাবা-মায়েরা একটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
তঁারা তঁাদের সন্তানের খেলাধুলার বিষয়ে কখনোই ভাবেন না। তঁারা বুঝতে চেষ্টা করেন না যে খেলাধুলার মাধ্যমেও শিশুর বিকাশ হয়ে থাকে। শিশুরা যখন তাদের সমবয়সী অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে, তখন সে তার দক্ষতা, সামর্থ্য ও দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা পায়, যা পরবর্তীকালে তার ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে।
একটি শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য কেবল পড়াশোনার ওপর জোর দিলেই হবে না। এর জন্য তার খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।

মেহেরুন নাহার
মেহেরুন নাহার

মেহেরুন নাহার: শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা যারা তাদের আশপাশে থাকি, তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ, শিশুরা প্রথম পঁাচ বছর তাদের আশপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের মাধ্যমেই শিক্ষা গ্রহণ করে।
শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে মা-বাবা, স্কুলের শিক্ষক, পাড়া-প্রতিবেশী সবারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মা-বাবা সব সময় তঁাদের সন্তানদের শাসন করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চান। এটি করতে গিয়ে তঁারা শিশুদের প্রতি নেতিবাচক আচরণ করে থাকেন।
এটা করা যাবে না, এখানে যাওয়া যাবে না—এসব কথা শুনতে শুনতে শিশুদের মধ্যেও একটা নেতিবাচক ভাব চলে আসে। তাদের মধ্যে একটা বিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতার অভাব তৈরি হয়ে যায়।
শিশুদের সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করা যাবে না। কোনো কাজ করা থেকে তাদের বিরত রাখতে হলে তাদের ইতিবাচকভাবে সেই কাজের নেতিবাচক দিকগুলো বোঝাতে হবে। আর এভাবে একটা শিশু ভবিষ্যতে একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।
আরেকটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে প্রতিটা শিশু আলাদা। তাই প্রতিটা শিশুর জন্য আমাদের পৃথকভাবে চিন্তা করতে হবে। কোন শিশুটি কী করতে পছন্দ করে, সেটি মাথায় রেখেই তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

লায়লা খন্দকার
লায়লা খন্দকার

লায়লা খন্দকার: আমরা আজকে এখানে শিশুর বেড়ে ওঠা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু আমাদের সবার আগে চিন্তা করতে হবে যে শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য যে নিরাপদ পরিবেশের প্রয়োজন, সেটি আমরা নিশ্চিত করতে পারছি কি না।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ২৬৪ জন শিশু হত্যা হয়েছে এবং ৫০১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই চিত্র থেকে আমরা আন্দাজ করতে পারি যে আমাদের দেশে বর্তমানে শিশুর নিরাপত্তা কতখানি বিদ্যমান। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য জাতীয় শিশু আইন, ২০১৩ রয়েছে। এই আইনের আলোকে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে তাদের সুষ্ঠু বিকাশের পরিবেশ কখনোই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
আমাদের আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে শিশু নির্যাতনের প্রতি সহনশীলতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
আমরা যদি কোথাও দেখি যে কেউ একটি শিশুকে নির্যাতন করছে, তখন তার প্রতিবাদ করি না। শিশুর প্রতি সহিংসতাকে অনেক সময়ই আমরা স্বাভাবিক বিষয় বলে ধরে নিই। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আমাদের সব ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে শিশুদের কথা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের শহরে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত খেলার জায়গা নেই বললেই চলে।
রাস্তা পারাপারে শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিশুদের জন্য আলাদা কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। ফলে, আমাদের সমাজে শিশুদের অস্তিত্বকে এক অর্থে অস্বীকারই করা হচ্ছে বলা চলে। তাদের চাহিদার কথা কোথাও মাথায় রাখা হচ্ছে না।

মৌটুসী বিশ্বাস
মৌটুসী বিশ্বাস

মৌটুসী বিশ্বাস: আমাদের শিশুদের মানবতা ও সংবেদনশীলতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা বড়রাই দায়ী।
আমাদের ছোটবেলায় আমরা পাড়া-মহল্লায় খেলতাম। খেলার সময় কখনো হয়তো ছোট্ট পাখির বাসা বা ছোট্ট কুকুরছানা পেলে সেটিকে নিয়ে খেলতাম। তাদের আদর করতাম। খাওয়াতাম। এসবের মাধ্যমে আমাদের সংবেদনশীলতা তৈরি হতো।
আমরা স্নেহপরায়ণ হয়ে উঠতাম। কিন্তু, এখন শিশুরা সেই সুযোগ পাচ্ছে না। তারা সারা দিন স্কুলে কাটাচ্ছে। স্কুল শেষে পড়াশোনার চাপে হয় কোচিংয়ে চলে যাচ্ছে অথবা বাসায় চলে আসছে। ফলে তাদের মধ্যে সংবেদনশীলতা তৈরি হচ্ছে না একেবারেই।
আমরা, পিতা-মাতারা অনেক সময় আমাদের ছোট শিশুকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছি। আমার ছেলেকে বা মেয়েকে অমুক স্কুলে ভর্তি হতেই হবে। তা না হলে আমি মুখ দেখাতে পারব না। আমার বাচ্চাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। তা না হলে আমি মুখ দেখাতে পারব না।
এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা যে আমার শিশুর জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে বা তার ব্যক্তিত্বের জন্য একটি স্থায়ী ক্ষতিসাধন করে দিচ্ছে, তা আমরা অনেক সময় চিন্তা করি না।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি বর্তমানে অনেক বেশি আশঙ্কাজনক। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা তাদের কাছের ও পরিচিত মানুষের কাছ থেকেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
একটি শিশু হয়তো এমন একজনের কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে যে তার ব্যাপারে কাউকে বলতে পারছে না। কিন্তু এই বিষয়টি তার মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী ক্ষতি করে দিচ্ছে।
এই বিষয়টি রোধ করতে হলে আমাদের শিশুদের তাদের ভাষায় সহজ করে বোঝাতে হবে যে কেউ যদি তোমার সঙ্গে এমন আচরণ করে, তাহলে তুমি তার প্রতিবাদ করবে, অন্যদের জানাবে। তাকে সহজ করে বোঝাতে হবে যে এমন আচরণ অতিপরিচিত বা অতি–আপনজন করলেও তার প্রতিবাদ করতে হবে।
আর আমরা যারা বড়রা আছি, তাদেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে যে কোনো শিশুর সঙ্গে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনমূলক আচরণ করা যাবে না। আমি নিজেও করব না আর অন্যকে যদি করতে দেখি, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব।

মোহাম্মদ মোহসীন
মোহাম্মদ মোহসীন

মোহাম্মদ মোহসীন: একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের পাশাপাশি তার জীবনের প্রাথমিক কয়েক বছরে তার ব্যক্তিত্বেরও বিকাশ ঘটে থাকে। আর এই বিকাশের ক্ষেত্রে তার চারপাশের পরিবেশের কিছু উপাদান উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে থাকে। শারীরিক, আবেগীয়, নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক—এসব উপাদানের সমন্বয়ে একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে।
শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার মানে হলো তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, যেন ভবিষ্যৎ জীবনে সে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। নিজে যেকোনো কাজ করতে পারে।
একজন শিশু যেন তার আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসইভাবে চলতে পারে, তার মধ্যে সেই যোগ্যতা তৈরি করে দেওয়াই হলো তাকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা।
আমরা বেশির ভাগ সময়ই শিশুদের মতামত প্রকাশ করতে দিই না অথবা তারা মতামত প্রকাশ করলেও সেই মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের মতামতকে তাদের ওপর চাপিয়ে দিই।
অনেক সময় শিশুরা তাদের ইচ্ছার কথা আমাদের কাছে প্রকাশ করলেও সেই ইচ্ছাকে আমরা প্রাধান্য দিই না। এর ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশু তখন আর নিজে থেকে কিছু ভাবে না, যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য সে বড়দের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এটি শিশুর আত্মনির্ভরশীলতা এবং তার ব্যক্তিত্বের গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
যেকোনো কাজের ভালো ও খারাপ দিকগুলো শিশুদের সামনে তুলে ধরে তাদেরই বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে আমাদের।
শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার প্রথম শর্ত হলো তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের প্রশ্নগুলোর গঠনমূলক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
একটি শিশু যখন নিজের আগ্রহ থেকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করে জানতে চায়, সেই বিষয়টি তার মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হয়ে যায়।

সুলতানা আলগিন
সুলতানা আলগিন

সুলতানা আলগিন: একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পারিবারিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে শিশুর মা-বাবাকে অবশ্যই শিশুর মনস্তত্ত্ব বুঝে তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায়, সন্তান যেভাবে চিন্তা করছে, মা-বাবা সেভাবে চিন্তা করছেন না। ফলে সন্তান ও মা-বাবার মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে, সংকট তৈরি হচ্ছে।
মা-বাবা তঁাদের ছোটবেলায় যে সামাজিক পরিবেশে বড় হয়েছেন, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট তা অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ফলে, মা-বাবাকে বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সন্তানের মনস্তত্ত্বকে বুঝতে হবে।
আমরা সাধারণত চার ধরনের পিতা-মাতা দেখতে পাই। কিছু পিতা-মাতা আছেন, যঁারা সন্তানদের কোনো কথা শোনেন না, অর্থাৎ তঁারা যা বলবেন সন্তানকে তা-ই করতে হবে। সন্তানের কোনো মতামত তঁারা শুনতে রাজি নন।
অনেক পিতা-মাতা রয়েছেন, যঁারা সন্তানদের সব কথা শোনেন, তাদের সব আবদার মেনে নেন। সন্তানের কোনো কাজে বাধা দেন না।
আরেক ধরনের পিতা-মাতা রয়েছেন, যঁারা তঁাদের সন্তানদের তেমন খেঁাজখবরই রাখেন না। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে—সে বিষয়ে তঁারা কোনো খবর রাখেন না।
কিছু পিতা-মাতা আছেন যঁারা সন্তানের কথাও শোনেন এবং মানেন। প্রয়োজন অনুসারে সন্তানের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণও করে থাকেন। সন্তানের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এই পিতা-মাতার আচরণ হলো সবচেয়ে উপযোগী।
পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক থাকবে, যেখানে পিতা-মাতা ও সন্তান—উভয়েই উভয়ের মতামতকে গুরুত্ব দেবে এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

গওহার নঈম ওয়ারা
গওহার নঈম ওয়ারা

গওহার নঈম ওয়ারা: আমাদের সমাজে যে শিশুরা রয়েছে, এই বিষয়টিকে যেন দেখেও দেখি না। বিশেষ করে সরকারি আমলা যঁারা রয়েছেন, তঁাদের মাঝে শিশুবান্ধব নীতিমালা তৈরি করার মতো মানসিকতা তৈরি করাটা খুবই কঠিন বিষয়। এর কারণ হতে পারে যে বয়স্ক মানুষ শিশুদের তেমন গুরুত্ব দিতে চান না।
তঁারা মনে করেন, শিশুদের কথা শোনার আবার কী দরকার। কিন্তু আমরা যদি সরকারি চাকরির শুরুতে আমলাদের শিশুবান্ধব হয়ে ওঠার কোনো প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে তারা যত নীতি নির্ধারণ করবেন, সেখানে শিশুদের কথা মাথায় রাখবেন।
আমাদের দেশে যেসব শিশুসংগঠনগুলো বর্তমানে কাজ করছে, সেগুলো প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ হয়ে আছে। সরকারি শিশুসংগঠনগুলো যেমন শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমী কাজ করছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুদের নিয়ে।
আর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর শিশুসংগঠন যেমন ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন কাজ করছে সমাজে পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে।
এই সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দেশের সব শিশুকে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই দেশের সব শিশু সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের আনন্দের সঙ্গে শেখানো হয় না। তাদের ভয়ের মাধ্যমে শেখান হয়। ভয় নিয়ে একটি শিশু যখন কোনো কিছু শেখে, সেটি তার হয়তো মুখস্থ হয় কিন্তু আত্মস্থ করতে পারে না।
আনন্দের সঙ্গে যখন সে কিছু শেখে, সেটি সে আত্মস্থ করে। তাই আমি মনে করি, আমাদের যে প্রাথমিক এবং প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকেরা রয়েছেন, তঁাদের আলাদা করে শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।
শিক্ষক যদি শিশুদের মনস্তত্ত্ব না বুঝতে পারেন, তাহলে তিনি কখনো শিশুদের শেখাতে পারবেন না। আগে কচি-কঁাচার মেলায় যঁারা সদস্য ছিলেন, তঁারা বড় হওয়ার পর কোনো না কোনোভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন।
কিন্তু এখন আর সেই বিষয়টি দেখা যায় না। এখন মেলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার মতো মানুষ পাওয়া যায় না। ফলে, মেলার কাজের পরিধি ও আকারও আগের চেয়ে অনেক ছোট হয়ে গেছে।
আমরা কচি-কঁাচার মেলায় আজকের শিশুকে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবতাবোধ, দেশপ্রেম শেখানোর মাধ্যমে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এটি আমরা করছি শিশুর মাঝে আগ্রহ তৈরির মাধ্যমে, আনন্দের সঙ্গে। আশা করি সবার সহযোগিতায় ভবিষ্যতেও এই কাজ অব্যাহত রাখতে পারব।

আব্দুল কাইয়ুম: পরিবারে যঁারা বড় তঁাদেরই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে যেন শিশুরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে ওঠে। আমরা যদি শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দিই, তাদের নিজেদের পছন্দের কাজ করতে দিই, তাদের দোষগুলোকে বড় করে না তুলে ধরে গুণগুলো তুলে ধরি, তাহলেই শিশুরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে উঠবে।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।