পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপে রাজি

>

প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম আলো: গত এক দশকের রাজনীতিতে কী পরিবর্তন দেখেন?

মির্জা ফখরুল: সংসদে থাকা ও না থাকার সঙ্গে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের একটি বিষয় আছে। দুটো এক হয় না। অন্যান্য দেশের সংসদীয় ব্যবস্থার সঙ্গেও এটি তুলনীয় নয়। ক্ষমতাসীনেরা বেশি কর্তৃত্ববাদী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবক্তা হয়েও তারা তা বাতিল করে এখন বড় সুবিধাবাদী। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাই উপযোগী। কারণ দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিশ্বাসের ঘাটতি আরও প্রকট হয়েছে।

প্রথম আলো: ২০১৪-এর নির্বাচনের আগে করা প্রশ্নটি আপনাকে আবারও করি, বিএনপি নির্বাচন বয়কট বা কথিতমতে তাকে নির্বাচনের বাইরে রাখার কারও পরিকল্পনা সফল হওয়ার আশঙ্কা এ বছর কতটা?

মির্জা ফখরুল: এটা একদম অমূলক বলতে পারেন না। তখনো সুপরিকল্পিতভাবে একটা অবস্থা তৈরি করা হয়, যাতে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে।

প্রথম আলো: সেই ভুলের জন্য কোনো অনুশোচনা আছে?

মির্জা ফখরুল: ভুল হয় তখন, যখন আমরা নীতির বাইরে যাই। সরকারের ভূমিকা তখন কতটা অনৈতিক ছিল, সেখানে আপনারা যেতে চান না।

প্রথম আলো: আপনারাই বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

মির্জা ফখরুল: আবার নৈতিকতার প্রশ্নটা আপনারাই বেশি আনেন। এক-এগারোর আগে সবাই নৈতিক প্রার্থীই বেশি খুঁজেছিলেন। এতে আমার আপত্তি নেই। রাজনীতিতে নিশ্চয় সৎ ও যোগ্য লোকের দরকার, কিন্তু ওঁরা সংখ্যায় বেশি নন। তাই বলে কতগুলো মৌলিক নৈতিক বিষয় থাকবে না, তা তো হতে পারে না।

প্রথম আলো: নৈতিকতার যুক্তি দিয়ে বা সরকারকে তার তথাকথিত কৌশলগত চক্রান্তের জন্য দোষ দিয়ে যদি আবার নির্বাচন বর্জন করেন...

মির্জা ফখরুল: না, সেভাবে দায় চাপানো যাবে না। কারণ, আমরা এরই মধ্যে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, তার চেষ্টা করছি। নির্বাচনে যাব বলেই কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। কিন্তু আমরা যাতে বয়কট করি, সে উদ্দেশ্যে যদি সর্বাত্মক চেষ্টা চলে, তাহলে তা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু মুশকিল হলো, কোনো পরিবর্তন ছাড়াই যাতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিই, সে বিষয়ে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের একটি অংশ উৎসাহী।

প্রথম আলো: সেটি কি কোনো ভয় থেকে, নাকি বাস্তব উপলব্ধি থেকে?

মির্জা ফখরুল: রাষ্ট্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয় যেমন আছে, তেমনি তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে। গণমাধ্যমকে হুমকি ও টক শোতে কী বলতে হবে তা বাতলে দেওয়া হয়। তা ছাড়া বাস্তবতা বলতে আপনি ধরে নিচ্ছেন, সরকারের অবস্থান বদলানো যাবে না।

প্রথম আলো: তারা হয়তো দেখছে, আপনারা অক্ষম ও ব্যর্থ...

মির্জা ফখরুল: ভুল হচ্ছে। বাংলাদেশি রাজনীতিতে একে ব্যর্থতা বলা যাবে না। এই রাজনীতি কখন কীভাবে বদলায়, তা বলা যায় না। সাম্প্রতিক প্রবণতা হলো, রাজনীতির বাইরের শক্তিগুলোর সরাসরি যুক্ত হওয়া, তারা রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের চেষ্টা করছে। তারা রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়তে বাধা দিচ্ছে। এটা আমাদের দলগুলোর অন্তর্নিহিত দুর্বলতা। সংসদ অকার্যকর। বিচার বিভাগও শেষ। একজন সচিব এটা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের দুর্বলতার বিপরীতে বিএনপিকে উত্তম বিকল্প ভাবতে অনেকেই রাজি নন। এটাও সমাজে হতাশা তৈরি করেছে। আপনি কি মানেন?

মির্জা ফখরুল: সমাজে প্রচণ্ড হতাশা আছে। কিন্তু আপনি যেভাবে বলছেন, সেভাবে নয়। এর একটি সামগ্রিক দিক আছে। আওয়ামী লীগের কাছে মানুষ ও সমাজের বড় আশা ছিল। তারা ভেবেছে, দলটি একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য কাজ করবে। কিন্তু তারা করেছে সম্পূর্ণ উল্টো।

প্রথম আলো: আপনারা নির্বাচনে গেলেই কি এটা কাটবে?

মির্জা ফখরুল: না। কোনো একটি দলকে দায়ী না করে আমি বলব, দেখুন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী ঘটছে? দলবাজির কারণে মেধাবীরা শিক্ষক হতে পারছেন না। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা বদলির শিকার হচ্ছেন। জনপ্রশাসনেও চলছে একই অবস্থা। একটিমাত্র মতাদর্শে বিশ্বাসীদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু রাখার প্রক্রিয়া চলছে। সার্বিকভাবে হতাশা গভীর হচ্ছে।

প্রথম আলো: আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল প্রশ্নে আপনারা কোনো সমীক্ষা করেছেন কি?

মির্জা ফখরুল: সেভাবে করিনি। তবে একজন মাঠের রাজনীতিক হিসেবে বলতে পারি, ৮০ শতাংশ সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ৮০ ভাগ আসন পাবে।

প্রথম আলো: এই অনুমান সত্যি হলে তা কেন ঘটবে? বিএনপির প্রতি আস্থা থেকে, নাকি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি সন্তুষ্ট নয় বলে?

মির্জা ফখরুল: ভোটাররা বিএনপি সরকারের সঙ্গে তুলনা করবেন। তাঁরা মিলিয়ে দেখবেন, তখন জননিরাপত্তা বা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কেমন ছিল। সরকারবিরোধী নেতিবাচক ভোটের প্রভাবও থাকবে।

প্রথম আলো: বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণের আপনারা পদ্ধতিগত বিরোধিতা করেছিলেন। বিচারপতি নিয়োগ আইন না করা ও নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণে দ্বৈত শাসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনো এককাট্টা। ফের ক্ষমতায় গেলে যে ভালো কাজ করবেন, তার ভরসা কী?

মির্জা ফখরুল: আপনাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমাদের একটু পার্থক্য আছে। আপনারা যেভাবে দেখছেন, বাস্তবতাকে সেভাবে আমরা দেখি না। আমরা এখন দৌড়ের মধ্যে আছি। প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিই। প্রতিদিন আমাকে উকিলের সঙ্গে বসতে হয়। জামিন নিতে প্রতিদিন আমার লোকজনকে টাকাপয়সা দিতে হয়। এসব দিক আপনাদের চোখে পড়ে না। আর আমরা যে এসব বিষয়ে বলব, আপনারা তার কতটুকু ছাপবেন বা ছাপাতে পারবেন? মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী কিছু বিধির খসড়া তো আমরা করেছিলাম।

প্রথম আলো: তার কোনোটিরই বাস্তবায়ন ঘটেনি। বিএনপির জন্য বরং লজ্জার হলো, বিচারপতি লতিফুর রহমান ২০০১ সালে পৃথক্‌করণ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি সই করার সময় বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে বলেছিলেন, ওটা আমি করব। কিন্তু কখনোই তিনি সেটি করেননি।

মির্জা ফখরুল: এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। আমার জানা নেই।

প্রথম আলো: এখন দৌড়ে আছেন, কিন্তু তিন জোটের রূপরেখাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের অঙ্গীকার আজও পূরণ হয়নি।

মির্জা ফখরুল: সেটা শুধু বিএনপির দোষ? আপনাদের অনেকেরই মূল টার্গেট বিএনপি। আওয়ামী লীগের কোনো দোষ নেই। তাদের নৈতিকতার কোনো সংকট নেই।

প্রথম আলো: ওটাই তো আপনাদের অভিন্ন বর্ম। পরস্পরকে দোষারোপ করেন, সুশাসন চিড়েচ্যাপ্টা হয়।

মির্জা ফখরুল: আর এখন ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে আমরাই হলাম যত দোষী।

প্রথম আলো: বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো সুশাসন দেবে না, বরং জঙ্গিবাদ তীব্রতা পেতে পারে—এমন একটা শঙ্কাও তো কম জোরালো নয়।

মির্জা ফখরুল: সরকার এই অপপ্রচার চালাতে আপনাদেরই একটি অংশের সহযোগিতা পাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনে বিএনপির নেওয়া পদক্ষেপগুলো প্রচার পায়নি, প্রচারে পেরে না ওঠা আমাদের একটা ব্যর্থতা বটে।

প্রথম আলো: স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী করা, তাঁদের গাড়িতে পতাকা ওড়ানোর কাজটি তো আপনারাই করেছেন।

মির্জা ফখরুল: আপনি গুলিয়ে ফেলছেন। জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াতকে আপনারা এক করে দেখছেন। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধতার কারণে সুপরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। শাসক দল যখন জামায়াতের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করল, শেখ হাসিনা, গোলাম আযম, ইনু, মেনন যখন এক টেবিলে বসল—তখন সংবাদপত্র তত উতলা হয়নি। তাদের সঙ্গে আমাদের জোটবদ্ধতা তো নির্বাচনী।

প্রথম আলো: জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন বলে মানেন তো?

মির্জা ফখরুল: একাত্তরে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে।

প্রথম আলো: তাহলে ওই যে বিবরণ দিলেন, তাতে ওদের মন্ত্রী করাটাকে কি যথার্থতা দেয়?

মির্জা ফখরুল: সেটা কখনো দাবি করব না।

প্রথম আলো: সে জন্য ক্ষমাও চাইবেন না? কেন?

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগ যে এসব বিষয় থেকে বড় সুবিধা নিয়েছে, সেটা আপনারা কখনো বলেন না। গত প্রায় এক দশকে দেখছি, আওয়ামী লীগের কিছু সমালোচনা মিডিয়া করেছে, কিন্তু গত দু-এক বছর হলো, প্রবণতাটা একেবারে উল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ যেন সবকিছুই ঠিক করছে। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিকাশের সম্ভাবনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নষ্ট করেছে। গত কয়েক বছরে তারা বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ক্ষতি করেছে, সে বিষয়টি পত্রপত্রিকার কোথাও তেমন দেখি না। এমনকি গণমাধ্যমের যে অংশটি কথা বলত, তাদের কণ্ঠ চেপে ধরার বিষয়েও আপনারা খুব একটা সোচ্চার নন। গত দেড় বছরে বাক্‌স্বাধীনতা ভয়ানকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

প্রথম আলো: কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতার কারণে বিরোধী দল হিসেবে আপনারা এতটাই দুর্বল যে সমাজে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে বলেও মনে করা হয়...

মির্জা ফখরুল: আমি উল্টো যুক্তিও দিতে পারি। আমি যদি বলি হুমকি ও ভয়ভীতি এতটাই বেশি দেখানো হয়েছে যে আপনারা ওসব নিয়ে কোনো কথাই বলতে চান না। আপনারা এটাও মোটেই বুঝতে চাইছেন না যে বিএনপি প্রতিটি মুহূর্ত কতটা নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দলের আরও অনেকের মতো আমার বউ-বাচ্চা-পরিবার—সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।

প্রথম আলো: কিন্তু বিএনপির অভ্যন্তরীণ দুর্বল গণতন্ত্রচর্চা এবং জনগণের চোখে ততটা গ্রহণযোগ্য না হতে পারার কারণেও...

মির্জা ফখরুল: বিএনপিকে অপদস্থ করতে এটা আপনাদের খুব বড় একটা প্রচারণা। যুদ্ধাপরাধীদের দোসর হিসেবে চিত্রিত করতে সুপরিকল্পিতভাবে একটি চক্র কাজ করছে। অথচ বিএনপিই একমাত্র দল, যারা উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।

প্রথম আলো: একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপির ভূমিকা, বিশেষ করে তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে না পারার ব্যর্থতাও কি প্রচারণা?

মির্জা ফখরুল: এ বিষয়ে আমি বিশদ জানি না, তাই বলতে পারব না।

প্রথম আলো: কিন্তু এমন বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না হলে আপনি জাতির কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য নেতা হবেন?

মির্জা ফখরুল: আমি হয়তো জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হইনি। সামনে নির্বাচন। দেখা যাক, জনগণ আমাকে গ্রহণ করবে কি না?

প্রথম আলো: তার মানে আপনি নির্বাচনী জয়-পরাজয়ের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের আশকারা দেওয়াসহ ওই সব প্রশ্নের মীমাংসা দেখেন?

মির্জা ফখরুল: আমি নই, দলের কথা বলছি। আমি নিশ্চিত, অবাধ নির্বাচন হলে আমার দল দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হবে। আর আগের যেসব অভিযোগ, সেসব মহলবিশেষ বিএনপির বিরুদ্ধে অযথা এনেছে।

প্রথম আলো: খালেদা জিয়ার টুইটে বর্ণিত সাড়ে সাত শ লোক গুম হওয়ার পক্ষে কী প্রমাণ আছে?

মির্জা ফখরুল: প্রত্যেকের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য আছে। ছবিসহ সম্প্রতি পুস্তিকা বের করেছি। আমার কত লোক ক্রসফায়ারে মরেছে, হাঁটুতে গুলি করা হয়েছে, কত লোককে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে—তাতে সব তথ্য পাবেন। একটি নৈতিক প্রশ্ন করি। আপনারা যখন নেহাত পরিসংখ্যানের শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন মর্মাহত হই। প্রশ্ন জাগে, আপনারা কি তাহলে গুম-সমর্থক?

প্রথম আলো: ক্ষমতায় গেলে আপনারা কি এসব বন্ধ করবেন? র‍্যাব বিলোপ করবেন? অপারেশন ক্লিন হার্টে নিহতদের বিষয়ে দায়মুক্তি দিতে সংসদে আপনারা আইন করেছিলেন। সে জন্য আজও ক্ষমা চাননি।

মির্জা ফখরুল: অবশ্যই বন্ধ করব। আমার নেত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, র‍্যাব বিলুপ্ত হবে। আপনারা ক্লিন হার্ট করাটাকেই বড় অপরাধ দেখছেন? এখন যা করা হচ্ছে? তুলে নিয়ে ফেরত দিয়ে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। আপনারা সেভাবে এসব দেখছেন না।

প্রথম আলো: দুটো ভুল যুক্ত হয়ে একটি সঠিক হয় না।

মির্জা ফখরুল: আমিও তা বলি না। ধারণা তৈরি হচ্ছে যে বিএনপি ওটা (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) করেছিল, তাই আওয়ামী লীগেরটা বৈধ হচ্ছে।

প্রথম আলো: নির্বাচনী সহায়ক সরকারের রূপরেখা কবে পাব? নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিত্ব দিলে নেবেন?

মির্জা ফখরুল: রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক সময়ে দেব। সব হোমওয়ার্ক প্রস্তুত। আর মন্ত্রিত্ব তো রাজনৈতিক তামাশা। আপনি আমার সঙ্গে বসতে, কথা বলতে চান না। পরিষ্কার বলছেন, আমার সঙ্গে কোনো সংলাপ নেই। তাহলে কী দেবেন আমাকে? আর বিএনপির সঙ্গে সব রকম অবিচার করে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ আশা করবেন? প্রশাসনে, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার যে অবস্থা তৈরি করেছে তারা, সেখানে বিরোধী দলের স্বাধীনতা কতটা থাকবে? মঙ্গলবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সভা করার অনুমতি দিয়ে তারা আমাদের তালাবদ্ধ করেছে। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গুলিবিদ্ধ একজনকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনতে হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচনকে কীভাবে সুষ্ঠু করা যায়, সে বিষয়ে আমরা এ মুহূর্তে সংলাপে বসতে রাজি।

প্রথম আলো: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার শর্তে?

মির্জা ফখরুল: না, কোনো পূর্বশর্ত নেই। কোনো পূর্বশর্ত দিয়ে সংলাপে বসতে চাই না।

প্রথম আলো: শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন, তেমন ইঙ্গিত দিতে প্রস্তুত?

মির্জা ফখরুল: কী কারণে সেটা দেব? তাহলে সংলাপের দরকার কী? আমরা তো এমনিই নির্বাচনে যেতে পারি।

প্রথম আলো: আপনারা পূর্ণ নির্বাচনী মেজাজে আছেন কি না?

মির্জা ফখরুল: আমরা কী করছি, দেখছেন না। কিন্তু এখানেও দেখুন, আপনি হেলিকপ্টারে চড়ে নৌকায় ভোট চান, অথচ আমাকে ঘরের মধ্যে সভা করতে দেন না। গত ৯ বছরে দেশের সব থেকে বড় বিরোধী দলকে কয়টা সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব নিন। বিএনপি বাদ দিন। রব, মান্না—এঁদের কার কী অবস্থা?

প্রথম আলো: বিজেপির সঙ্গে কোনো নির্বাচনী যোগাযোগ হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: আমরা নির্বাচন প্রশ্নে বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করি না। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী।

প্রথম আলো: ৩০০ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন? জামায়াতকে নিয়ে কী করবেন?

মির্জা ফখরুল: অবশ্যই। আমরা ৩০০ আসনে সাত দিনের নোটিশে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। জামায়াতের বিষয়ে আইনি ফয়সালা কী হয়, সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। তার সঙ্গে নির্বাচনী অংশীদারত্বের কোনো চুক্তি নেই। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার চুক্তি আছে।

প্রথম আলো: বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দণ্ডিত হলে দলের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন?

মির্জা ফখরুল: দণ্ডিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া বিচারব্যবস্থা তো নাজুক। প্রধান বিচারপতিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে জবরদস্তি কিছু একটা হতে পারে না, তা কী করে বলি?

প্রথম আলো: বিকল্প নেতৃত্ব?

মির্জা ফখরুল: আমাদের এগুলো ঠিক আছে। দেশনেত্রী তিন মাস ছিলেন না, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইরে আছেন, কিন্তু আমরা বড় কাজগুলো করেছি।

প্রথম আলো: ৯ বছরে সরকারের একটি সাফল্য বলুন। বিদেশনীতি কীভাবে দেখেন?

মির্জা ফখরুল: কোনটা বলব, বলুন। তারা যে ৭ ভাগের বেশি জিডিপি দাবি করে, সেখানেও মিথ্যাচার আছে। তাদের সব থেকে বড় ব্যর্থতা হলো, বাংলাদেশের বিকাশমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও জনজীবনের স্বাভাবিকতা ও স্বস্তি তারা নষ্ট করে দিয়েছে। বিদেশনীতির প্রশ্নে বলব, আমরা বঙ্গোপসাগরকে সব সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে দেখতে চাই। বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কিছু উদ্বেগ আছে, কারণ কিছু চুক্তি হচ্ছে, তা ভারত, চীন বা যুক্তরাষ্ট্র—যার সঙ্গেই হোক, তার বিষয়বস্তু আমরা জানি না। বিদেশনীতিতে দুটি বড় ব্যর্থতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অকার্যকর চুক্তি করা, আর আসামে ১ কোটি ৯০ লাখ তথাকথিত বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া। এ দুটি বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো ব্যাখ্যা নেই।

প্রথম আলো: সাবমেরিনসহ বিপুল সমরাস্ত্র ক্রয়কে কীভাবে দেখেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা সব সময় শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থার পক্ষে।

প্রথম আলো: সব ধরনের সমরাস্ত্র ক্রয়ের প্রতিও তাহলে আপনাদের সমর্থন আছে?

মির্জা ফখরুল: এর মানে তা নয়। কোনো ক্রয়ের পেছনে যদি অন্য উদ্দেশ্য, দুর্নীতি থাকে, তাহলে তাকে সমর্থন করব কেন? আমরা সেটাই সমর্থন করব, যা প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করবে। এ প্রসঙ্গে বলব, আমরা অনিরাপদ বিবেচনায় রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সমর্থন করি না।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

মির্জা ফখরুল: ধন্যবাদ।