হেফাজতে মৃত্যু রোধ

সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রতিটি কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তখন খবর বেরিয়েছে যে পুলিশ আবারও সরকারের কাছে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। পুলিশের অভ্যন্তরের একটি উল্লেখযোগ্য মহল শুরু থেকেই আইনটিকে স্বাগত জানাতে অপারগ থেকেছে। সংশোধন নয়, প্রকৃতপক্ষে তারা আইনটির বাতিল চায়। গত বছর জানুয়ারিতে রাজারবাগেই এই দাবি তুলে তারা প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো বিব্রত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, সংসদে পাস করা আইন বাতিল করা সমীচীন কি না, সেটা তাঁর জানা নেই।

আমরা অবাক হই যে মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত আছে এমন একটি আইন সরাসরি সরকারপ্রধানের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কী করে বাতিল চাওয়া সম্ভব হতে পারে। এর আগে তারা ওই আইনের সংশোধনী প্রস্তাব লিখিতভাবে সরকারকে দিয়েছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঔদাসীন্য দেখানো উচিত নয়। বিষয়টি শুনে নিষ্পত্তি করে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির আশু হস্তক্ষেপ আমরা আশা করি।

পুলিশ যদি ওই আইনের আওতায় কোনোভাবে অপব্যবহার বা হয়রানির শিকার হয়, তাহলে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অপনোদনে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি রাখে। কোনো অন্যায্য বিধানের উপস্থিতি নিশ্চয় পুলিশের মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু মুশকিল হলো এই আইনের কারণে তারা সত্যিই কোনো সমস্যার মুখে পড়েছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। আইনে বলা আছে, কাউকে মানসিক কষ্ট দিলেও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। ‘মানসিক কষ্ট’ নির্ণয়ের কোনো মানদণ্ড না থাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের সুযোগ থাকছে বলে পুলিশ এই আইনের সংশোধন চাইছে। আমাদের প্রশ্ন, এ ধরনের ‘মিথ্যা’ মামলা দায়েরের কোনো ঘটনা কি ঘটেছে? যদি হয়ে থাকে, তবে তা পুলিশের প্রকাশ করা উচিত।

বাস্তবতা হচ্ছে সার্বিক বিচারে ওই আইনটি একটি কাগুজে আইন হিসেবেই রয়ে গেছে। এই আইন বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম নয় মাসে পুলিশি হেফাজতে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইনে এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিন্তু আদৌ কেউ বিচারের সম্মুখীন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তাই আমরা বলব, আগে আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর হোক, পুলিশি হেফাজতে কেউ মারা গেলে তার যথাযথ তদন্ত, বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত হোক। আইন কার্যকর করতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা বা জটিলতা দেখা দেয়, তখন আইনের কোনো ধরনের সংশোধনের দাবিটি যৌক্তিক ভিত্তি পাবে।