এই হাড়কাঁপানো শীতে ওখানে এখন মানুষের পক্ষে বাস করাই দুরূহ। তবু দাঁতে দাঁত কামড়ে যঁাদের বাস করতে হচ্ছে, তঁারা ছাত্র। ছাত্রই বটে, যঁাদের কোনো রকমে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেলেই চলে, লেখাপড়া করার জন্য চেয়ার-টেবিল আকাশকুসুমের মতো।
বলা হচ্ছে, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের কথা। গত বছরের জুলাই মাসে সরকারপন্থী ছাত্রলীগের একাংশের কর্মীরা ৪০টি কক্ষের জানালা-দরজা ভাঙচুর করার পর থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১৬টি কক্ষের জানালা-দরজাগুলো ভাঙা অবস্থায় রয়ে গেছে। কক্ষগুলোতে ছাত্ররা থাকেন। এত দিন তঁাদের মনে নিরাপত্তা নিয়ে একধরনের শঙ্কা ছিল; আর এখন সেই শঙ্কার চেয়ে বড় এবং প্রায় অসহ্য হয়ে উঠেছে শীতের কষ্ট। ভাঙা জানালা-দরজা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঢোকে। বেচারা ছাত্ররা কাঠ ও কাচের তৈরি দরজা-জানালাগুলোর ভাঙা অংশে কাগজ গুঁজে বাতাস আটকানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ তঁাদের এই কষ্ট নিবারণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করতে অপারগতা প্রকাশ করছে। ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক বলেছেন, ‘সংস্কার প্রক্রিয়াধীন থাকায় তাৎক্ষণিক কিছু করা যাচ্ছে না।’
আসলে ছাত্রদের এই অমানবিক অবস্থা সংবেদনশীলতার সঙ্গে আমলে নিলে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাধায়ক এমন দায়সারা কথা বলতে পারতেন না। ১৬টি কক্ষের দরজা-জানালার ভাঙা কাচ বদলানোর জন্য কত বড় ‘প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করতে হবে? তার চেয়ে বড় কথা, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর ওই কক্ষগুলো তো ছাত্রদের বসবাসেরই অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এমন ঠান্ডার মধ্যে রাতের পর রাত ঘুমালে ছাত্ররা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। যেকোনো সভ্য দেশে এ রকম পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাসের কক্ষগুলো বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে ছাত্রদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতো।
সিলেট এমসি কলেজের শীতার্ত ছাত্ররা তঁাদের শীতের কষ্ট বোঝানোর জন্য ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ককে অনুরোধ করে আসছেন, তিনি যেন রাতের বেলায় গিয়ে দেখেন সেখানে কেমন শীত। কিন্তু তিনি একবারও যাননি। এই অসংবেদনশীলতা মর্মান্তিক। কক্ষগুলোর সব ভাঙা দরজা-জানালা অবিলম্বে মেরামত করা হোক, সে পর্যন্ত ওই ১৬ কক্ষের ছাত্রদের অন্যান্য কক্ষে সরিয়ে নেওয়া হোক।