রাস্তা বন্ধ করে শোভাযাত্রা নয়

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই স্বীকার করেছেন, শনিবার ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার কারণে মহানগরের মানুষ যানজটের শিকার হয়েছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে রাজনৈতিক দল বা অন্য সংগঠনকে ব্যতিব্যস্ত মহাসড়ক বন্ধ করে সভা-সমাবেশ কিংবা শোভাযাত্রা বের করতে হবে কেন? আর যদি একান্ত সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করতে হয়, তারা সড়কের বাইরে গিয়ে করুক। ছুটির দিনে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করে না বলে আত্মপ্রসাদ লাভের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বিরোধী দলকে যখন ঢাকায় সভা-সমাবেশ করতেই দেওয়া হয় না, তখন ডিটিসিএর সিদ্ধান্তটি ক্ষমতাসীনদের ওপরই প্রযোজ্য। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ধরা হলেও শনিবার অনেক বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে।

গত রোববার ডিটিসিএর সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বড় স্বপ্নের প্রকল্প নিয়ে বসে না থেকে স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর তাগিদ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং ছোট প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামান না। ঢাকার পরিবহনব্যবস্থা নিয়ে বড় বড় প্রকল্পের কথা বলা হলেও কয়েকটি উড়ালসেতু নির্মাণ ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে যানজট সমস্যা আরও বেড়েছে।

আমরা মনে করি, কর্মদিবস তো বটেই, ছুটির দিনেও রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রা বের করার অপসংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে। গত বুধবার তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে একটি অংশ বিমানবন্দর অবরোধ করলে রাজধানী ঢাকার উত্তরাঞ্চল কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পুরো শহরেই এর প্রভাব পড়ে এবং নাগরিকদের অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।

রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের কর্মসূচি কিংবা পরিকল্পনা জানানোর আরও অনেক উপায় আছে। জনগণের অর্থে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম সব দলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক, জনগণের উদ্দেশে তাদের বক্তব্য বা দাবিদাওয়া সেখানেই প্রচারিত হোক। তাতে ট্রাকে করে লোক এনে সমাবেশ, শোভাযাত্রা কিংবা অবরোধ করার প্রয়োজন হবে না। সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার কথা বলা হলেও রাজনৈতিক দলের গুণগান গাওয়া বা প্রচারের ক্ষেত্রে এখনো কেন অ্যানালগ পদ্ধতি চলেছে, সেটি বোধগম্য নয়।

রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা না করে নগরবাসীকে একটু স্বস্তি দিন।