পাবনা মেডিকেল কলেজ বন্ধ কেন

এই কেনর উত্তর ছাত্রলীগ। সরকারের প্রশ্রয় পাওয়া এই ছাত্রসংগঠনের বৈশিষ্ট্যই যেন এমন যে তার নেতা–কর্মীরা মিলেমিশে কাজ করতে পারবেন না, গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হবেন এবং তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সব সাধারণ শিক্ষার্থী। কেননা, তাঁদের সংঘর্ষ থামাতে না পেরে কর্তৃপক্ষ কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করবে। কখনো কখনো অনির্দিষ্টকালের জন্য।

এগুলো নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পাবনা মেডিকেল কলেজের আগে এ মাসেরই প্রথম সপ্তাহে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশালে তারা মারামারি করে। গত রোববার সিলেটে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের কোন্দলের জের ধরে খুন হয়েছেন একজন। তারপর সিলেটের এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্রলীগই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকে। অর্থাৎ তাদের মারামারির ফলে কর্তৃপক্ষ যদি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে না দেয়, তাহলে তারা নিজেরা ধর্মঘট ডেকে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করবে।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের পারস্পরিক বিরোধ মোটেও ছাত্রসুলভ নয়। পরস্পরের ওপর তাঁদের সংঘবদ্ধ আক্রমণের ধরন দেখে মনে হয়, তাঁরা যেন একই ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক নন, বরং শত্রুমনোভাবাপন্ন প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক। তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে পরস্পরের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে পারেন দিন কিংবা রাতের যেকোনো সময়। পাবনা মেডিকেল কলেজে তাঁরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন ভোররাতে।

ছাত্রলীগের এসব দাঙ্গাবাজ নেতা-কর্মী-সমর্থকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন গোটা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুধু তা–ই নয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকেও তাদের কাছে অসহায় বলে মনে হয়। ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী-সমর্থক নানা ধরনের অন্যায়-অপরাধ করেন, আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাও যেন তাঁদের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গেছে। নইলে সারা দেশে তাঁদের দৌরাত্ম্য কেন বন্ধ হচ্ছে না?

ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখার ওপর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের কাছেও যেন ছাত্রলীগের সাত খুন মাফ। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সে জন্য সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।