রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা নিয়ে সংশয়

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

এটা অনেকটাই এখন পরিষ্কার যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যখন আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছিল, তখনই মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে কার্যত তাদের শর্তে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি করে। কৌশলগতভাবে এতে মিয়ানমারের লাভ হয়েছে। কারণ, এই চুক্তি তাদের ওপর চাপ কমাতে সহায়তা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের চাওয়া শরণার্থী প্রত্যাবাসন কতটুকু সফল হবে, তা এক বিরাট প্রশ্ন হিসেবে ঝুলে আছে।

ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তিটি বিশ্লেষণ করে এর যে দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছে, তার মধ্যে রয়েছে সব শরণার্থী ফেরত নেওয়ার বিষয়টি না থাকা, প্রত্যাবাসন শুরুর অপর্যাপ্ত সময়সীমা, রোহিঙ্গাদের আদি আবাসে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গ না থাকা এবং শরণার্থী প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআরের যুক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট না করা। তারা মনে করে, এমন পরিস্থিতিতে শরণার্থীরা রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার ভরসা পাবে না। শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেও ইউএনএইচসিআর এমন ধারণা পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি যে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করলে বা সে ব্যাপারে দেশটিকে বাধ্য করতে না পারলে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো কঠিন হবে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ইউএনএইচসিআর ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নানা প্রক্রিয়া ও কাজে যুক্ত করলেও মিয়ানমার সে ধরনের কিছু করছে না বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ ও কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না।

বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে মানবিক কারণে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের ক্ষেত্রে যে মূল চেতনাটি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গার রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও বসবাস নিশ্চিত করা। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর যারা বাংলাদেশে এসেছে, মিয়ানমার তাদেরই ফেরত নেবে। এবং যারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চাইবে, তারাই ফিরে যেতে পারবে। রোহিঙ্গারা যে ধরনের বর্বরতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হলে তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এ জন্য ইউএনএইচসিআর বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর লোকজনের রাখাইন রাজ্যে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে আজ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশকে এই বিষয়গুলো জোরের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখতে হবে। অব্যাহত ও কঠোর চাপ ছাড়া মিয়ানমার যে কাজের কাজ কিছু করবে না, তা অনেকটাই পরিষ্কার।