মাদ্রাসাশিক্ষকদের অনশন ভঙ্গ

আমরা নীতিগতভাবে তঁাদের মূল দাবি সমর্থন না করার কোনো যুক্তি দেখি না। সরকার যদি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাব্যবস্থাকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করার কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প পরিকল্পনা দিতে পারে, তাহলে উত্তম। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তার আচরণে মাদ্রাসা নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতির সব লক্ষণই স্পষ্ট। প্রতিটি সরকারই ক্ষমতায় আসার আগে মাদ্রাসাশিক্ষার আধুনিকায়ন ও সংস্কারের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি, পরীক্ষাপদ্ধতিতে উপযুক্ত পরিবর্তন এবং তাদের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের মতো জ্বলন্ত প্রশ্নগুলোর কোনো মীমাংসা নেই। অথচ আগামী নির্বাচনের আগে সাংসদদের প্রতি আসনে পঁাচটি করে মাদ্রাসা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০১৩ সালে অনেকটা ইবতেদায়ির আদলে সারা দেশে চালু থাকা ২০ হাজারের বেশি নিবন্ধিত প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করা হয়েছিল। সেই যুক্তিতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি তুলেছে। সরকারের উচিত বিমাতাসুলভ আচরণ বন্ধ করা।

একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে না পারা রাষ্ট্রের অপারগতা, সে জন্য ইবতেদায়ি মাদ্রাসা বলে তাদের অনাদরে ফেলে রাখা কোনো যুক্তি হতে পারে না। তবে বর্তমান সরকার ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষকদের মাসিক মাত্র ৫০০ টাকার ভাতা প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের জন্য যথাক্রমে ২ হাজার ৫০০ ও ২ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছে। এটা একটা অগ্রগতি, কিন্তু খুবই অপ্রতুল।

ইবতেদায়ি মাদ্রাসার নিবন্ধনে কড়াকড়ি দরকার। সরকারি হিসাবে ৩ হাজার ৪৩৩টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টি ঠিকঠাক চলে বলে দাবি করলেও ধর্মঘটি সমিতির মতে, অন্তত ১০ হাজার মাদ্রাসা কার্যকর রয়েছে। ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ওপর পূর্ণ নজরদারি ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তার পাঠ্যক্রম নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তারও অবসান দরকার।