নারায়ণগঞ্জে মেয়রের ওপর হামলা

ফুটপাত পদচারীদের হেঁটে চলাচলের জন্য, ফুটপাতে হকারসহ সব ধরনের দোকানপাট আইনত অবৈধ। সেই ফুটপাতকে হকারমুক্ত করার প্রচেষ্টা যখন বারবার ব্যর্থ হয়, তখন খতিয়ে দেখতে হয়, কিসের জোরে ফুটপাতের অবৈধ দখলদারেরা নাগরিকদের হেঁটে চলাচলের অধিকার হরণ করতে পারে, কী শক্তি এই ভাসমান হকারদের পেছনে কাজ করে।

শুধু নারায়ণগঞ্জে নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ শহরে ফুটপাতে হকারদের শক্তি জোগায় স্থানীয় কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। তারাই হকারদের অধিকার রক্ষার নামে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংঘবদ্ধ জবরদস্তির চর্চা করে। নারায়ণগঞ্জে এই গোষ্ঠী সন্ত্রাসের জন্য কুখ্যাত। মঙ্গলবারের হামলার সময় তারা নির্বাচিত মেয়র ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে।

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেছেন, তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছে শামীম ওসমানের নির্দেশে। তাঁর এই অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে হামলার আগে চাষাঢ়ায় হকার্স সংগ্রাম পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা অনুরোধ না, নির্দেশ। নারায়ণগঞ্জে ফুটপাতে হকার বসবে।...যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁদের জবাব দিতে দুই মিনিটও লাগবে না শামীম ওসমানের।’ এটা স্পষ্টতই সন্ত্রাস তথা ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের হুমকি। এর বিচার হওয়া উচিত।

স্বস্তির বিষয়, মঙ্গলবারের হামলায় প্রাণহানি ঘটেনি, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সামনে আরও বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব ধরনের সহিংসতা অবশ্যই এড়াতে হবে। মঙ্গলবারের হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করতে হবে। মেয়র হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের জন্য মার্কেট নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। সর্বোপরি মানতে হবে যে ফুটপাত নাগরিকদের হেঁটে চলাচল করার পথ, সেখানে কোনোরকমের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নেই।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে মেয়রের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা দরকার। নগরবাসীর নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মেয়রকে তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করা উচিত, উল্টোটা নয়।