বরগুনা পৌরসভার ময়লার ভাগাড়

একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কী করে একটি উন্মুক্ত ডাম্পিং স্টেশন বা ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠতে পারে এবং সেখানে বছরের পর বছর আবর্জনা পোড়ানো হতে পারে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। বরগুনা পৌরসভায় তা–ই হয়ে আসছে এবং এর কারণে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার দশা।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০-২৫ বছর ধরে প্রতিদিন পৌরসভার যাবতীয় আবর্জনা এই ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে, যার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ টন। দিনরাত এসব ময়লা আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। এর ধোঁয়া আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে লোকজন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

আবাসিক এলাকা, গ্রাম ও জনবসতিপূর্ণ স্থানে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় করার কোনো বিধান না থাকলেও এটি করা হয়েছে এবং তা টিকে আছে। ভাগাড়ের চারপাশে বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এর ৫০ গজের কম দূরত্বে রয়েছে ১০টি পরিবার। তা ছাড়া, আশপাশে আছে তিনটি মসজিদ, দুটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা। ময়লার দুর্গন্ধে ও ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এভাবে খোলা কোনো স্থান তো ময়লার ভাগাড় হতে পারে না। ময়লার ভাগাড়ের চারপাশে অবশ্যই দেয়াল থাকতে হবে। দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে আমাদের দেশে এখনো আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনরায় ব্যবহার এবং নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়াকে বোঝায়। শহর বা গ্রাম এলাকাভেদে, আবাসিক বা শিল্প এলাকাভেদে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ধরন আলাদা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে, কোনো ধরনের নিয়ম অনুসরণ না করেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ইতিমধ্যে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে বিজ্ঞানসম্মত করার কোনো বিকল্প নেই।

বরগুনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ময়লার ভাগাড়টিকে জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।