ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র

বলার অপেক্ষা রাখে না যে এর মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে যে পরিবারতন্ত্র চালু আছে, তা আরও পাকাপোক্ত হবে। বর্তমান জাতীয় সংসদেরই কোনো কোনো সাংসদ এই আইনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে মন্তব্য করেছেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, যখন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংক ডুবতে বসেছে; ব্যাংকের আমানতকারীরা তাঁদের গচ্ছিত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন, তখনই এ রকম একটি আইন পাস হলো। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র কায়েম হওয়া যতটা না বিপজ্জনক, ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবারতন্ত্র কায়েম হওয়া তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বিপজ্জনক।

আইনপ্রণেতাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে ব্যাংক কোম্পানি আইন আর পাঁচটি কোম্পানি আইনের মতো নয়। বেসরকারি ব্যাংকের প্রকৃত মালিক সাধারণ আমানতকারীরা। অতএব, যেকোনো আইন প্রণয়নে তাদের স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, উল্লিখিত আইনে সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।

আইনটির খসড়া প্রস্তুত করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপত্তি জানিয়েছিল। জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিও প্রথমে এটি সংশোধনের তাগিদ দিয়েছিল। কিন্তু মাননীয় আইনপ্রণেতারা আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। গত ১২ সেপ্টেম্বর সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৭’ উত্থাপনের আগে এটি মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন পায়। শুরু থেকে আমরা যৌক্তিক কারণেই এই বিলের বিরোধিতা করে আসছি।

এ কথা ঠিক যে জাতীয় সংসদে বিলটি পাস হওয়ার পর এটি আইনে পরিণত হয়েছে। পরবর্তী কোনো আইন দ্বারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যকারিতা বহাল থাকবে। আইনপ্রণেতাদের মনে রাখতে হবে যে নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কালোকে সাদা বানানো যায় না। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের কাছে বৃহত্তর আমানতকারীদের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া যায় না। এ কারণেই আমরা আইনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।