ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার আশঙ্কা

রাজধানীর বড় সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলপ্রয়োগ, ছাত্রীদের গালাগাল ও উত্ত্যক্ত করা এবং সর্বোপরি আন্দোলনের সমন্বয়কারীকে প্রহার করা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যায়ের শিকার শিক্ষার্থীদের কথা আমলে না নিয়ে উল্টো তাঁদের প্রহৃত সমন্বয়কারীকেই থানায় সোপর্দ করেছিল, থানায় তাঁকে ২৮ ঘণ্টা আটকে রেখে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত ছাত্রলীগের পেশিশক্তি ও পুলিশি পদক্ষেপের ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের পথে গিয়েছে, কিন্তু তার ফলে আন্দোলন দমিত হয়নি, বরং শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রক্টর ও খোদ উপাচার্যকে আশ্বাস দিতে হয়েছে যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। আবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড তদন্তের জন্যও একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপরন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ জন্য তাঁরা আগামীকাল রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপলব্ধি করা উচিত যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের প্রশমন করতে হলে তাঁদের দাবির প্রতি সুবিবেচনার প্রকাশ ঘটে, এমন পদক্ষেপ অবশ্য নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে সমস্যার সমাধান হবে না।

আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য নষ্ট হয়, এমন কোনো আচরণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা করবেন না, তাঁরাও যথাযথ সংযম, সুবিবেচনা ও যুক্তি-বুদ্ধির পরিচয় দেবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে শুরু হয়নি, এটা তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। সুতরাং তাঁদের কথা আন্তরিকভাবে আমলে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে সৎ, আন্তরিক ও ন্যায্য আচরণ করলে তাঁরা অবশ্যই তা মেনে নেবেন।