যুক্তরাষ্ট্র আবারও শ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্র হবে?

জেমস কিউ হুইটম্যান
জেমস কিউ হুইটম্যান

সুনির্দিষ্টভাবে বললে, হিটলার ১৯২৪ সালের মার্কিন অভিবাসন আইনের প্রশংসা করেছেন, যেটা জনসন-রিড অ্যাক্ট নামে পরিচিত। এই আইন ‘জাতীয় কোটার’ মাধ্যমে প্রকাশ্যে অভিবাসনের পথে জাতিগত বাধা তৈরি করেছিল। এই আইনে সরাসরি আরব ও এশীয়দের মার্কিন মুলুকে অভিবাসন বাতিল করা হয়েছিল। হিটলার খেয়াল করেছিলেন, এই আইনে ইহুদিসহ দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপীয়দের চেয়ে ‘নরডিক-জার্মান’ নাগরিকদের অভিবাসনের প্রতি পক্ষপাত করা হয়েছিল। এই সীমাবদ্ধ আইনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের আগে জার্মানির ইহুদিদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

ট্রাম্প যখন বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হাইতি থেকে অভিবাসী গ্রহণ না করে নরওয়ের মতো দেশ থেকে অভিবাসী নেওয়া, তখন থেকে ১৯২৪ সালের আইনটি গণমাধ্যমে আলোচিত হতে শুরু করে; যদিও নরওয়ের মানুষেরা অভিবাসন চান না। শুধু এটাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী অভিবাসন নীতির আরও অনেক নজির আছে। উনিশ শতকের শেষ ভাগে তথাকথিত হলুদভীতির যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধারে বেশ কয়েকটি এশীয়বিরোধী আইন প্রণয়ন করেছিল। ১৮৮২ সালে এক আইন করে সরাসরি চীনাদের মার্কিন দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর অনেক আগে ১৭৯০ সালে মার্কিন কংগ্রেস ‘যেকোনো মুক্ত ও শ্বেতাঙ্গ ভিনদেশিকে’ নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ দিয়ে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেয়।

শুধু হিটলারই যে একমাত্র ডানপন্থী হিসেবে মার্কিন ইতিহাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন, তা নয়। তাঁর যখন উত্থান হলো, তত দিনে ইউরোপের সব কট্টর ডানপন্থী যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী অভিবাসন নীতির ব্যাপারে অবগত। ইউরোপের অন্যতম গর্হিত সেমিটীয়বিরোধী থিওডোর ফ্রিতস কয়েক দশক পরে ১৮৯৩ সালে হ্যান্ডবুক অব দ্য জিউশ কোয়েশ্চেন শীর্ষক বইয়ে এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। হিটলার নিজের ইশতেহার মাইন ক্যাম্ফে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছেন: ‘এটি এমন এক দেশ’ যারা বর্ণগতভাবে স্বাস্থ্যকর হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। আর নাৎসিরা ১৯৩০-এর দশকে যখন ক্ষমতায় এল, তখন তাদের আইনজীবীরা সতর্কতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির দীর্ঘ ইতিহাস খতিয়ে দেখতে শুরু করেন, যাতে অশ্বেতাঙ্গদের জন্য দরজা বন্ধ করে দেওয়া যায়।

আজ পেছন ফিরে তাকালে দেখি, ১৯৬৫ সালের মার্কিন অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বর্ণবাদী অতীত থেকে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করে। আর ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, এই রাষ্ট্র এখনো পুরোপুরি অতীতকে জয় করতে পারেনি। সম্প্রতি অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প যে অশ্লীল মন্তব্য করেছেন, তা সব মার্কিন নাগরিককে এটাই মনে করিয়ে দেবে যে হিটলার ও তাঁর নাৎসি বাহিনী  একসময় মার্কিন অভিবাসন নীতির বড় ভক্ত ছিলেন। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর হয়ে গেল। যাঁরা ভাবছেন ট্রাম্পের আমলে মার্কিন গণতন্ত্রের বড় ক্ষতি হয়নি, তাঁর অভিবাসন নীতি দেখে তাঁদের বোঝা উচিত, এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই।

মার্কিন গণতন্ত্র টিকবে কি টিকবে না, তা দিয়ে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির বিচার করা যাবে না। সর্বোপরি শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের কাছে মার্কিন গণতন্ত্র সব সময় ভালোই ছিল। এমনকি ১৯৭০-এর দশকে বা ১৯ শতকের শেষ ভাগে ও ১৯২০-এর দশকে বর্ণবাদী অভিবাসন আইন যখন পাস হলো, তখনো যুক্তরাষ্ট্র ভালোই চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিকভাবে প্রণীত বর্ণবাদী আইন অত্যন্ত নোংরা। সাধারণ মানুষ ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও বিষাক্ত অভিবাসন নীতির ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। যে মার্কিনরা দেশকে ভালোবাসেন, তাঁদের ১৯২৮ সালে হিটলারের উল্লিখিত মন্তব্য শুনে দুঃখিত হওয়া উচিত। তাঁদের প্রেসিডেন্ট যে নরডিক মানুষদের আবারও অভিবাসী কোটার সামনের সারিতে রাখতে চাইছেন, তাতে তাঁদের হতাশ হওয়া উচিত।

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট।

জেমস কিউ হুইটম্যান: ইয়েল ল স্কুলের তুলনামূলক ও বিদেশি আইন বিভাগের অধ্যাপক।