ওই দিনই আপিল করা সম্ভব ছিল: মোখলেসুর রহমান

>

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন স্থগিত হয়ে আছে। আদালতের আদেশে এই উপনির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) মোখলেসুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: রাষ্ট্রের পক্ষে শুনানিতে কী বলেছিলেন?
ডিএজি: যুক্তি ছিল ভোটার তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই এই অবস্থায় নির্বাচন করা ঠিক হবে না। আমার যুক্তি ছিল সীমানা পুনর্নির্ধারণের কারণে নির্বাচনটা স্থগিত করা যাবে না। এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কারণ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকে, সুতরাং এ কারণে ভোট বন্ধ হতে পারে না। দ্বিতীয় যুক্তি ছিল, কিছু লোক নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। আমি বলেছিলাম, কতগুলো ব্যক্তির স্বার্থের জন্য বৃহত্তর স্বার্থ ব্যাহত হতে পারে না। কারণ, নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। গুটি কয়েক মানুষের জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থহানি করা ঠিক নয়।

প্রথম আলো: রিট করার দিনেই কি শুনানি হয়েছিল?
ডিএজি: শুনানি হয়েছিল। কিন্তু আদালত বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনকে শুনে তবে আদেশ দেবেন।

প্রথম আলো: আপনি নোটিশ পেলেন কী করে?
ডিএজি: প্রত্যেকটি (রিটের) মোশন দরখাস্তের একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেলকে দিতে হয়। আমাদের নোটিশ দিয়ে তবে রিট ফাইল করতে হয়।

প্রথম আলো: ইসির মুখপাত্র দাবি করছেন, তাঁরা নোটিশ পাননি। আপনাদের পাওয়া আর ইসির পাওয়া কি এক নয়?
ডিএজি: কোন নোটিশটির কথা বলছেন?

প্রথম আলো: সংবিধানের ১২৫গ অনুচ্ছেদে যে ‘যুক্তিসংগত নোটিশের’ কথা বলা আছে, সেটি।
ডিএজি: রিট আবেদনকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকীর যুক্তি ছিল, ১২৫গ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য। তদুপরি আদালত বলেছেন, তাঁরা ইসিকে শুনবেন এবং বাদীপক্ষ বলেছে, ইসিকে রিট পিটিশনের কপি সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রথম আলো: তাহলে ইসি যে বলছে, তারা নোটিশ পায়নি তা সত্য নয়?
ডিএজি: এ জন্যই জানতে চাইছি যে নোটিশ কিন্তু দুটি। একটি হলো রুল ইস্যুর পরে, সেটি হয়তো কেউ এখনো পায়নি। নাকি রিট পিটিশন দায়েরের কপি পায়নি?

প্রথম আলো: কপি নয়, আমরা বলছি, আদালতকে ‘যুক্তিসংগত নোটিশ ও শুনানি’র সুযোগ না দিয়ে কোনো আদেশ না দিতে ১২৫গ-এর বিষয়টি।
ডিএজি: প্রথম দিনই শুনানিতে এটি আলোচনায় এসেছিল। বলা হয়েছে এটি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য। এরপর আদালত বলেছেন, এটা ইসির ওপর জারি হওয়ার পর আমরা শুনব। প্রথম দিন সে কারণে আদেশ হলো না। দ্বিতীয় দিন আদালত বলেছেন, আপনারা কি ইসিকে নোটিশ দিয়েছেন? তখন তারা বলল দিয়েছে। ইসি যে গ্রহণ করেছে, তার কাগজও আদালতকে দেখানো হয়। এরপর কোর্ট বললেন, ওনারা তো কেউ এল না। তাদের আইনজীবীদের একজনকে খবর দিন। এরপর খবর দিলাম। তাদের পক্ষে মি. তৌহিদ এলেন। তাঁকে শুনে কোর্ট আদেশ দিলেন।

প্রথম আলো: তাঁকে মৌখিকভাবে খবর দেওয়া হয়েছিল।
ডিএজি: হ্যাঁ, তাই তো দেবেন।

প্রথম আলো: আপনার মতে ১২৫গ-এর শর্ত পূরণ হয়েছে?
ডিএজি: হ্যাঁ, হয়েছে।

প্রথম আলো: অনেক সময় আপনারা আদেশের পরপরই তা স্থগিত করতে চেম্বার জজের কাছে যান। এবার গেলেন না কেন?
ডিএজি: মূল দায়িত্বটা ইসির। তারা তাদের আইনজীবী দিয়ে মামলাগুলো চালায়। ইসির আইনজীবীকে আমি বললাম, আপনি আপিলের বিষয়ে কী করবেন? তিনি বললেন, আপিল করবে কি না, তা লিখিতভাবে ইসিকে বলা হবে। ইসি সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।

প্রথম আলো: ইসির আইনজীবী ওই দিনই আপিলে যেতে পারতেন কি না?
ডিএজি: আমিও তা-ই বলেছি। ওই দিনই আপিল অর্থাৎ সিএমপি করা সম্ভব ছিল। সিএমপি আমরা কখন করি? মূল আদেশ পেতে বিলম্ব হলে সিএমপি করা চলে।