প্রধান বিচারপতি নিয়োগ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: প্রথম আলো
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: প্রথম আলো
আড়াই মাস ধরে প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য। নতুন প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন, কবে নিয়োগ পাচ্ছেন—এ নিয়ে গত সোমবার ফোনে প্রথম আলোর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকার বৈধতা নিয়ে করা রিটে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাত্র সাত দিনের সময় নেওয়া কী তাৎপর্যপূর্ণ এর মধ্যে হতে পারে?
আইনমন্ত্রী: এটা মহামান্য রাষ্ট্রপতি জানেন, আমি জানি না।

প্রথম আলো: তিনি কথা বলে নিয়েছিলেন?
আইনমন্ত্রী: না, সময় নেওয়ার পর জেনেছি।

প্রথম আলো: পদত্যাগী প্রধান বিচারপতির অবসরের মেয়াদ ছিল ৩১ জানুয়ারি...
আইনমন্ত্রী: যিনি পদত্যাগ করেছেন, তাঁর আবার মেয়াদ কী?

প্রথম আলো: যেহেতু গেজেট করে শূন্য ঘোষণা করা হয়নি।
আইনমন্ত্রী: গেজেট করে প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হয়েছে বলে কখনো আপনি দেখেছেন?

প্রথম আলো: আমাদের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতির এটাই প্রথম পদত্যাগ।
আইনমন্ত্রী: তাহলে সাংবিধানিক পদে পদত্যাগের পর গেজেট করে শূন্য করতে হবে, এরকম কোনো কথা আছে?

প্রথম আলো: কিন্তু দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আপনারা গেজেট দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন।
আইনমন্ত্রী: যেহেতু সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদের বিষয়, তাই হয়েছে। আমি কখনো শুনিনি প্রধান বিচারপতির পদ গেজেট করে শূন্য হয়েছে।

প্রথম আলো: কিন্তু বর্তমান দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি নিয়োগে গেজেটের মেয়াদ ১০ নভেম্বর শেষ হয়, রিটের দরখাস্তে এ কারণেও দাবি করা হয়েছে যে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ থেকে গত তিন মাস প্রধান বিচারপতির শূন্যতা অসাংবিধানিক বলে গণ্য করতে।
আইনমন্ত্রী: তাঁরা অনেক কিছুই চাইতে পারেন। যা খুশি তা-ই চাইতে পারেন। কিন্তু যিনি পদত্যাগ করেছেন, সেই পদত্যাগপত্র তো অবৈধ হতে পারে না। যিনি পদত্যাগ করেছেন, তাঁর মেয়াদ পূরণও তো একটা অবান্তর কথা।

প্রথম আলো: আপনার যুক্তি বোধগম্য। তবে গত বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিতে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি শুনানিকালে নতুন মামলা তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে একটিমাত্র বেঞ্চ থাকার কথা বলেছেন। দুটি বেঞ্চ না করতে পারার বাস্তব সমস্যা দূর করতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি?
আইনমন্ত্রী: হ্যাঁ, পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রথম আলো: তার মানে কি আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা বাড়ছে?
আইনমন্ত্রী: আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে কি আপনার তা-ই মনে হয় না?

প্রথম আলো: ধন্যবাদ। তাহলে কি ধরে নেব নতুন প্রধান বিচারপতিও?
আইনমন্ত্রী: আপনি যা খুশি তা-ই ধরে নিতে পারেন, যেটা সম্পর্কে আমি জানি না, তা আমি কেমন করে বলব!

প্রথম আলো: হাইকোর্ট বিভাগে নতুন নিয়োগ?
আইনমন্ত্রী: সেটা দেখবেনই। আগেও বলেছি, দুই বিভাগেই বিচারক নিয়োগ ঘটবে।

প্রথম আলো: আপিল বিভাগে যাতে দুটি বেঞ্চ হতে পারে, সেটা আপনার সক্রিয় বিবেচনায় আছে?
আইনমন্ত্রী: নিশ্চয়ই। তবে তাঁরা (বর্ধিত বিচারকেরা) একটি না দুটি বেঞ্চে বসবেন, সেটা ভারপ্রাপ্ত কিংবা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার হবে, আমার নয়।

প্রথম আলো: প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আপিল বিভাগের সংখ্যা—
আইনমন্ত্রী: এগারোতে উন্নীত হয়েছিল।

প্রথম আলো: তাহলে কি নতুন ছয়জনকে পাব?
আইনমন্ত্রী: আমি জানি না। রাষ্ট্রপতি সব সময় জোর দেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারি না। সংখ্যাটাও নির্বাহী বিভাগ নয়, রাষ্ট্রপতি ঠিক করেন।

প্রথম আলো: আমরা শিগগিরই একজন নতুন প্রধান বিচারপতি পেতে যাচ্ছি, সেই ধারণা আপনি নাকচ করছেন না।
আইনমন্ত্রী: আমি এই ধারণা কেন নাকচ করব, সম্ভাবনা তো আছে।

প্রথম আলো: খুব শিগগির কিনা?
আইনমন্ত্রী: আগেই বলেছি, এটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তিনি যতক্ষণ না বলবেন, ততক্ষণ আমি কিছুই জানি না।