চিনিকলের বর্জ্য নদীতে

নাটোরে নারোদ, নন্দকুঁজা ও গুমানী—এই তিন নদ-নদীর পানি চিনিকলের বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ার যে খবর বেরিয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক।
সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি থেকে নাটোর চিনিকলের বর্জ্য নদীগুলোতে ফেলা শুরু হয়। তখন থেকে নদীগুলোর পানি বিষিয়ে ওঠে। পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মরে ভেসে উঠছে মাছ। মাছের সঙ্গে অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদও মারা যাচ্ছে। এসব পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। একই সঙ্গে নদী এলাকার মানুষ গোসল, সেচ, গৃহস্থালি কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছে না। না বুঝে কেউ পানিতে নামলে শরীরে চুলকানি হচ্ছে। এ ছাড়া পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নদী এলাকার মানুষ।
এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে তিনটি নদ-নদীর পানি দূষিত হচ্ছে, মাছ মারা যাচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই! এর চেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে? এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, মৎস্য আইন ও জাতীয় পানি নীতি অনুসারে নদীসহ প্রবহমান জলাভূমি দূষণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এই আইনের যে কেউ তোয়াক্কা করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরও যে এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে, তা-ও নয়।
কেননা, শুধু এ তিন নদ-নদীই নয়, সারা দেশের আরও বহু নদ-নদী এ রকম কলকারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ছে। ঢাকার আশপাশের চার নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ দূষণের শিকার হওয়ার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে দখলের শিকার হচ্ছে। কলকারখানার রাসায়নিক দ্রব্য ও বর্জ্যে এসব নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র, রূপসা, ভৈরব, ময়ূরসহ অনেক নদ-নদী দূষণের শিকার হয়ে ধ্বংসের পথে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপরও পড়েছে নদ-নদীদূষণের প্রভাব।
নদ-নদীগুলো আমাদের দেশের প্রাণ। দূষণ ও দখলের কারণে এগুলো না বাঁচলে এর খেসারত আমাদেরই দিতে হবে। এসব নদ-নদী বাঁচাতে অবিলম্বে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব কলকারখানা নদ-নদী দূষণের জন্য দায়ী, সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের জীবন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদ-নদীদূষণ ও দখলমুক্ত রাখার বিকল্প নেই।