খালেদার রায়: নির্বাচনে বড় ইস্যু হবে

>
হারুন–অর–রশিদ
হারুন–অর–রশিদ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। জাতীয় রাজনীতি এবং নির্বাচনে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ। দলমত-নির্বিশেষে যাঁরাই অপরাধ করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

প্রথম আলো: খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

হারুন-অর-রশিদ: কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি এই বার্তাই যাবে যে, সবাই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরাও সতর্ক হবেন। এরশাদের পর খালেদা জিয়াই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা, যিনি দুর্নীতির দায়ে কারাগারে গেলেন।

প্রথম আলো: কিন্তু এই সরকারের সময়ে দুর্নীতি করেও অনেকে রেহাই পাচ্ছেন।

হারুন-অর-রশিদ: আমি মনে করি, দলমত–নির্বিশেষে যাঁরাই অপরাধ করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সরকারের আমলে সরকারদলীয় সাংসদ টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান কারাগারে আছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের মামলা চলছে। বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ আরও অনেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারপরও বলব, আইনের সমপ্রয়োগের জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আশার কথা, দুদক আগে নখদন্তহীন ছিল, এখন সক্রিয় হয়েছে।

প্রথম আলো: বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই রায়?

হারুন-অর-রশিদ: সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক মামলাটি দায়ের করেছে। এরপর দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলার রায় হয়েছে।  মামলাটি ২৬২ দিন চলেছে। সে ক্ষেত্রে এ কথা বলার সুযোগ নেই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা হয়েছে।

প্রথম আলো: এই রায়ে রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?

হারুন-অর-রশিদ: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও মামলা আছে। যদি উচ্চ আদালতে এই রায় বহাল থাকে, তাহলে তাঁকে রাজনীতি থেকে সরে যেতে হবে। এই মামলায় তারেক রহমানেরও ১০ বছর জেল হয়েছে। আগের এক মামলায়ও তিনি দণ্ডিত। সে ক্ষেত্রে জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে যদি উচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার রায় স্থগিত করেন এবং তিনি জামিন পান, তাহলে রাজনীতি করতে তাঁর সমস্যা হবে না।

প্রথম আলো: সে ক্ষেত্রে বিএনপি যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ এনেছে, সেটাই প্রতিষ্ঠিত হবে?

হারুন-অর রশিদ: প্রতিহিংসা নয়, তিনি বলতে পারবেন তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হয়েছিল।

প্রথম আলো: আগামী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কি সংশয় বাড়বে না?

হারুন-অর রশিদ: সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। খালেদা জিয়া নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারলেও বিএনপি নির্বাচন করবে। বিএনপির নেতৃত্ব সংযত আচরণ করছেন। অন্যদিকে সরকারও সহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে। আমার মনে হয়, বিএনপি জনগণের বিপরীতে দাঁড়াতে চায় না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজেকে আরও দুর্বল করবে না, যেমনটি তারা করেছে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। যেকোনো পরিস্থিতিতে এবার বিএনপি নির্বাচনে যাবে।

প্রথম আলো: এই রায়ের পর আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করেন? অনেকে মনে করেন, জনগণের সহানুভূতি খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবে।

হারুন-অর-রশিদ: মনে রাখতে হবে, এটি একটি দুর্নীতির মামলা। দুর্নীতির বিচার হয়েছে। আমি মনে করি না, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি হয়, তাহলে মনে করতে হবে, জনগণ দুর্নীতির পক্ষে। আর আগামী নির্বাচনে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু মামলা নয়, মানুষ অনেক কিছুই বিবেচনা করবে। সরকার উন্নয়ন, পদ্মা সেতুর িনর্মাণ ইত্যাদি সামনে আনবে। আর বিএনপি চাইবে মামলাকে ইস্যু করতে। এ কথা িঠক, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার মামলাটি একটি বড় ইস্যু হবে। তবে তা িবএনপির প্রতি জনগণের সহানুভূতি বাড়াবে না।

প্রথম আলো: সরকার খালেদা জিয়ার দুর্নীতির বিচার করেছে। কিন্তু মহা দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করা সম্ভব কি?

হারুন-অর-রশিদ: মনে রাখতে হবে, এখন চলছে ক্ষমতার রাজনীতি বা পাওয়ার পলিটিকস। বঙ্গবন্ধুর আমলে রাজনীতিতে যে নৈতিকতা ছিল, সেটি এখন কোনো দলই মেনে চলে না। ক্ষমতার রাজনীতিতে বা নতুন প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে পুরোনো শত্রুর সঙ্গে হাত মেলানোর অনেক উদাহরণ আছে। জাসদও একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধিতা করত। এখন তারা সরকারের শরিক।

প্রথম আলো: জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে বিএনপি এই যুক্তি দেখায়?

হারুন-অর-রশিদ: একই মাপকাঠিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্যকে মেলানো যাবে না। কেননা জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

হারুন-অর-রশিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।