বেহাল বিজেএমসি

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) লোকসানি সংস্থা হওয়ার পেছনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ যে কারণগুলোকে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। শুক্রবার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, অর্থ বিভাগের মতে, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে বিজেএমসি লোকসানি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিজেএমসি লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের কাছে আবর্তক তহবিল বাবদ ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা চাওয়ার পর অর্থ বিভাগ সংস্থাটি সম্পর্কে এই মূল্যায়ন করে।
আসলে স্বাধীনতার পর থেকেই বিজেএমসি লোকসান গুনে আসছে। অর্থ বিভাগ কারণ হিসেবে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কথা বললেও যে বিষয়টি চেপে গেছে, তা হলো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। প্রতিটি সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে বাড়তি শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে প্রায় সব সরকারি কারখানা লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সরকারি মূল্যায়ন কমিটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগের কথা বলছে। কিন্তু মাথাভারী প্রশাসনের বিষয়ে নিশ্চুপ। পাটকলগুলোর লোকসানের জন্য বিশ্ববাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কম থাকার অজুহাতও ভিত্তিহীন। সেটিই যদি হবে তাহলে ব্যক্তিমালিকানাধীন কারখানাগুলো কীভাবে মুনাফা করছে?
লোকসানের কারণে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে বেশ কটি পাটকল কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই বন্ধ কারখানা চালু করায় শ্রমিকসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে এখন জমি বিক্রি করে কারখানা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজধানীর গুলশান এলাকায় বিজেএমসির ১০ দশমিক ৩৩ বিঘা জমি বিক্রি করে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেই শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় লোকসান কমানোর নামে নতুন বরাদ্দ কোনো কাজে আসবে না।
আমরা মনে করি, বিজেএমসি ক্রমাগত লোকসান গুনবে, আর সরকার পাটকলগুলো টিকিয়ে রাখতে কোটি কোটি টাকা ঢালবে, সেটি হতে পারে না। বিজেএমসির কর্তাব্যক্তিদের নিজের আয়েই চলতে হবে। ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে এই লোকসানের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে বস্ত্র ও পাটকলগুলোর আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনা দরকার। পুরোনো কলকবজা দিয়ে লোকসান বন্ধ হবে না।