দুর্যোগে পুরুষের চেয়ে নারী-শিশুর মৃত্যু ১৪ গুণ বেশি

ডেইলি স্টার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দুর্যোগ সহনশীল নগর গঠনে নারীর ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
ডেইলি স্টার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দুর্যোগ সহনশীল নগর গঠনে নারীর ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

দুর্যোগে নারী ও শিশুমৃত্যুর হার পুরুষের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি। নারী সচেতন হলে মোট মৃত্যুহার অনেক কমে আসবে। দুর্যোগ প্রতিরোধে নারীর সক্ষমতা থাকলেও নারীকে সব সময় অসহায় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এ ধরনের নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন দরকার।

আজ রোববার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দুর্যোগ সহনশীল নগর গঠনে নারীর ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এ কথা বলেছেন। তবে শুধু দুর্যোগ নয়, বিভিন্ন সামাজিক ঝুঁকি, দৈনন্দিন আপদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়গুলোতেও নারীরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সে ধরনের সক্ষমতা তৈরির ওপরও জোর দেন তাঁরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার কার্যালয়ের আজিমুর রহমান সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কেয়ার বাংলাদেশের গাজীপুরে পরিচালিত ‘বিল্ডিং রেজিলিয়েন্স অব দ্য আরবান পুওর’ প্রকল্পের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। চলতি মাসেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পে নগরের দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে দুর্যোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটির উদাহরণ টেনেই আলোচকেরা বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সংগঠনের নেওয়া অনেক ভালো ভালো প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে। তবে প্রকল্প শেষে তার আর কোনো চিহ্ন নেই। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে এ ধরনের প্রকল্পকে সমন্বয় করানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন আলোচকেরা।

গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি।
বৈঠকে ডেইলি স্টারের সহযোগী সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার দিকে নজর বাড়ানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক এম খালিদ মাহমুদ বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিভিন্ন নীতিমালায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে শহর এলাকার জন্য নীতিমালা করা হচ্ছে। ওয়ার্ডভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কেয়ার বাংলাদেশের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জের সমন্বয়কারী পলাশ মণ্ডল বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগে নারী ও শিশুর মৃত্যুহার পুরুষের তুলনায় কেন বেশি হচ্ছে তা তলিয়ে দেখতে হবে। বেশি নারী মারা যাচ্ছে, তার মানে এই নয় যে দুর্যোগ মোকাবিলায় নারীর সক্ষমতা নেই। এ ক্ষেত্রে নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া কর্তৃত্ব তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

বৈঠকে ‘বিল্ডিং রেজিলিয়েন্স অব দ্য আরবান পুওর’ প্রকল্পের অধীনে কমিউনিটি লিডার পারভীন আক্তার এবং ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের কমিউনিটি ভলানটিয়ার নূরজাহান আক্তার নিজেরা ক্ষমতায়িত হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় কীভাবে কাজ করছেন তা তুলে ধরেন।

গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ও পরিচালক মাহবুবা নাসরীন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আবদুল লতিফ খান, কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক (পিইএআরএল ইউনিট) মো. মেহেরুল ইসলাম, দুর্যোগ ফোরামের প্রতিনিধি গওহার নঈম ওয়ারা, বাংলাদেশ আরবান ফোরামের উপদেষ্টা মোস্তফা কাউইম খান, ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট দিলরুবা হায়দার, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের দুর্যোগে জরুরি সহায়তা ও প্রস্তুতি কর্মসূচি প্রধান শশাঙ্ক সাদী, জেন্ডার এবং নারী অধিকারবিষয়ক বিশ্লেষক ফারহানা হাফিজ, ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এ কে এম মামুনুর রশীদ, কেয়ার বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ কুমার রায়, হিউমেনিটেরিয়ান লিডারশিপ একাডেমির দেশীয় পরিচালক সুমন আহসানুল ইসলাম, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের জেন্ডার কো অর্ডিনেটর মৌসুমী শারমিন, সেভ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র অফিসার নুসরাত রহমান চৌধুরী, আইসিসিসিএডির গবেষক তাসফিয়া তাসনীম প্রমুখ।