মেধাসম্পদের কপিরাইট নিবন্ধন

 কিন্তু আমাদের দেশে বই থেকে শুরু করে শিল্পকর্ম, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, রেকর্ড, কম্পিউটার সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপস, কম্পিউটার গেম ইত্যাদি সৃজনশীল মেধাসম্পদের কপিরাইট নিবন্ধন করা হচ্ছে না। ঢাকার কপিরাইট অফিসের কার্যক্রম ষাটের দশকে শুরু হলেও ২০০৯ সাল পর্যন্ত নিবন্ধনকৃত মেধাসম্পদের সংখ্যা মাত্র ৯ হাজার ৯৬১। গত বছর কপিরাইট আইনে ছয়টি বিষয়ে নিবন্ধন হয়েছে ৩ হাজার ১৩৪টি কর্ম।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন প্রণীত হয়েছে ২০০০ সালে। ২০০৫ সালে আইনটির সংশোধন করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আইনটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। কপিরাইট সম্পর্কেও অনেকের ধারণা অস্পষ্ট। ফলে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁদের আইনি অধিকার থেকে।

ঢাকার নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে সারা বছর বেআইনি ফটোকপি বইয়ের জমজমাট ব্যবসা চলে। নিম্নমানের কাগজে ছাপানো এসব বই সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। নকল বইয়ের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নকল সিডি-ডিভিডির বাজারও। ফলে ক্রেতা বা ভোক্তারা লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়েন এসব মেধাসম্পদের প্রকৃত মালিক ও তাঁদের উত্তরসূরিরা।

আমাদের দেশে কপিরাইটের মেয়াদ স্বত্বাধিকারীর মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় পর্যন্ত উত্তরাধিকার ছাড়া অন্য কেউ মেধাসম্পদ কপি বা বিক্রি করতে পারবেন না। কপিরাইট আইন ভঙ্গের জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু দেশে যেহেতু মেধাসম্পদ নিবন্ধনের সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি, তাই এসব আইনেরও প্রয়োগ নেই। যেহেতু কেউ অভিযোগ করেন না, তাই নকল পণ্য উদ্ধারে কপিরাইট টাস্কফোর্সের অভিযানও বন্ধ রয়েছে।

এমন তো চলতে পারে না। স্রষ্টা, উৎপাদক ও ভোক্তা—সব পক্ষকেই সচেতন হতে হবে। সরকারেরও অনেক কিছু করণীয় আছে। কপিরাইট আইনটি সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে। প্রয়োজনমতো আইনের প্রয়োগ করতে হবে। কপিরাইট অফিসে গিয়ে কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে এবং কেন এটি প্রয়োজনীয়, সে ব্যাপারেও প্রচারণা চালাতে হবে।