অবৈধ সিসা কারখানা

জোর যার মুল্লুক তার। এই প্রবাদের যথার্থতা মেলে যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা গ্রামের জিয়াউর রহমান মোল্যার কর্মকাণ্ডে। ওই গ্রামের ভৈরব নদের তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা তাঁর সিসা কারখানাটি নভেম্বরে উচ্ছেদ করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ডিসেম্বরেই তিনি আবার কারখানাটি চালু করেন। ওই সিসা কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্যে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও কারও যেন কিছু বলার নেই। কারণ, এলাকার সবাই জিয়াউর রহমান মোল্যাকে দুর্ধর্ষ প্রকৃতির বলে জানেন।
জিয়াউর রহমান এতটাই দুর্ধর্ষ আর তাঁর ক্ষমতার জোর যে আইনকানুন ও প্রশাসনকেও তিনি গ্রাহ্য করেন না। তা না হলে কি আর সরকারি ছাড়পত্র ছাড়াই ওই কারখানা গড়ে তোলার সাহস পেতেন? আদালত বন্ধ করে দেওয়ার পরও আবার ওই কারখানা চালু করার দুঃসাহস দেখাতেন?
মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জিয়াউর রহমান মোল্যা প্রায় তিন বছর আগে সিদ্দিপাশা গ্রামে কারখানাটি গড়ে তোলেন। গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। ওই কারখানায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির পরিত্যক্ত ব্যাটারি থেকে সিসা আহরণ করা হয়। পরিত্যক্ত ব্যাটারিগুলো কয়লার আগুনে পোড়ানো হয় এবং সেখান থেকে গলিত সিসা আলাদা করে সংগ্রহ করা হয়। এসব ব্যাটারিতে সিসা ছাড়া আরও থাকে প্লাস্টিক, দস্তা ইত্যাদি। সেসব পোড়ানোর ফলে ডাই-অক্সিন, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। উচ্চতাপ ও বিষাক্ত ধোঁয়ার মধ্যে মাস্ক বা অন্য কোনো সুরক্ষা ছাড়াই সারারাত ধরে গলিত সিসা আলাদা করে সংগ্রহের কাজ করেন হতদরিদ্র কিছু মানুষ, যাঁরা এই কাজের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
রাতে যখন ব্যাটারি পোড়ানো হয়, তখন গোটা এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন লোকজনের শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। কারখানার ধোঁয়া, উৎকট গন্ধ ও বর্জ্যের কারণে এলাকার অনেকেই হাঁপানি, কাশি, মাথাব্যথাসহ নানা রোগে ভুগছে। একটি অবৈধ কারখানার জন্য মানুষের এই ভোগান্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অভয়নগর উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনকে এখন এই অবৈধ সিসা তৈরির কারখানার ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। গত নভেম্বরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমানের পরিচালনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কারখানাটি উচ্ছেদ এবং সিসা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করেন। তাঁর প্রতি আমাদের দাবি, শুধু কারখানা উচ্ছেদ নয়, পাশাপাশি এর মালিক জিয়াউর রহমান মোল্যার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিন।