শান্তি বজায় রাখুন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি রাজপথে গরম কোনো কর্মসূচি না দিয়ে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেওয়ার মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত রেখেছে। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিবোধ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কথা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতা বিএনপির ‘নিরীহ কর্মসূচি’ নিয়ে এমন শ্লেষাত্মক কথাবার্তা বলছেন যে গরম কর্মসূচি হলেই তাঁরা বেজায় খুশি হতেন।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপির সেই নিরীহ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল থামানোর নামে পুলিশ হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছকে লাঞ্ছিত করে। এর প্রতিবাদে দলীয় কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। জবাবে পুলিশ রাবার গুলি চালালে ২০ জন আহত হন। পৌর মেয়র জি কে গউছসহ বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে মিছিলে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির দাবি, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় দলের ২০০ নেতা-কর্মী আহত এবং ৭০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, কেউ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে বাধা দেওয়া হবে না। এর আগে ঢাকায় জনগণের চলাচলের অসুবিধার কথা জানিয়ে পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত অনশন কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে বললে বিএনপির নেতারা তা-ও মেনে নেন। এ অবস্থায় বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার পেছনে গূঢ় রহস্য কী?
জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সময় তাঁকে লাঞ্ছিত করার কী যুক্তি থাকতে পারে? তিনি পুলিশকে মিছিল করতে বাধা দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এতে দোষের কী আছে? প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের মতে, পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণেই সেখানে গুলি-সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। যেসব স্থানে পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি, সেসব স্থানে তো পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু হবিগঞ্জে গুলি-গ্রেপ্তারের ঘটনা কেন ঘটল? এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুরেও ধরপাকড়-লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের এই বাড়াবাড়ি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গুলি-গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলো লাভালাভের হিসাব-নিকাশ করবে। কিন্তু জনগণের উদ্বেগের বিষয় হলো তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে কি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব জনজীবনের নিরাপত্তা দেওয়া এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা। তারা এমন কিছু করতে পারে না, যাতে জনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, বিএনপি কোনো মারমুখী কর্মসূচি নেয়নি। দেশের বেশির ভাগ জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। অতএব, হবিগঞ্জে এ রকম ঘটনা কেন ঘটল, সেটি তদন্ত করে দেখা দরকার।
বর্তমান জটিল ও কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। দলের কর্মীদের সংযত রাখতে হবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনে রাখতে হবে, জনমনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া তাদের কাজ নয়। রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ নানা হিসাব-নিকাশ করতে পারে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী কখনো উসকানিতে পা দিতে পারে না। দেওয়া উচিত নয়।